৭০ বছর পর মায়ের দেখা পেলেন কুদ্দুস মিয়া

১০ বছর বয়সে রাজশাহীতে গিয়ে হারিয়ে যান কুদ্দুস মিয়া। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও নিজের পরিবারে ফিরতে পারেননি। পরে নিঃসন্তান এক দম্পতির ঘরে ঠাঁই হয় তার। জীবন পরিক্রমায় এখন তার ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি মিলে বড় সংসার। তবে ছোট বেলাতেই যে মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান, সেই মাকে ফিরে পেতে আকুল বাসনা ছিল সারাজীবন। সম্প্রতি তার হারিয়ে যাওয়ার গল্প সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরেন এক ব্যক্তি। আর সেই সূত্র ধরেই ৭০ বছর পর জীবনের শেষ বেলায় নিজের মায়ের কাছে ফিরলেন কুদ্দুস মিয়া।

শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপজেলার বাঞ্ছারামপুরের আশ্রাফবাদ গ্রামে বোন ঝড়না বেগমের বাড়িতে কুদ্দুস মিয়া তার মায়ের দেখা পান। ৭০ বছর পর ছেলেকে ফিরে পেয়ে বুকে জড়িয়ে নেন ১১০ বছর বয়সী মা। কান্নায় ভেঙে পড়েন মা-ছেলে। আর সেই দৃশ্য দেখে উপস্থিত শত শত মানুষের চোখেও পানি চলে আসে।

এ সময় মা বলতে থাকেন, ‘কুদ্দুস তুই একদিন ফিরে আসবি এটা আমি বিশ্বাস করতাম, আল্লার কাছে এই দোয়াই করেছি। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন।’

১০ বছরের কিশোর কুদ্দুস মিয়ার বয়স এখন ৮০ বছর। তার তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড্ডা গ্রামে। তবে গ্রামে কেউ থাকে না। মা তার মেয়ে অর্থাৎ কুদ্দুসের বোনের সঙ্গে থাকেন।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর বাগমারা এলাকায় শিশু অবস্থায় হারিয়ে যান কুদ্দুস। এরপর থেকে উপজেলার বাড়ুইপাড়া গ্রামে সংসার শুরু করেন তিনি। হারিয়ে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার নানা চেষ্টা করে যান কুদ্দুস। তবে কোনো কাজ হয়নি।

অবশেষে গেল এপ্রিল মাসে আইয়ূব আলী নামে পরিচিত একজনের ফেসবুক আইডিতে হারিয়ে যাওয়ার গল্প বলেন কুদ্দুস। সেখানে তিনি শুধু বাবা-মা ও নিজ গ্রাম বাড্ডার নাম বলতে পারেন। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বাড্ডা গ্রামের বাসিন্দারা সাড়া দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে কুদ্দুসকে খুঁজে পান তার পরিবারের সদস্যরা।

আইয়ুব আলীর ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া পোস্টে নিজের শেষ ইচ্ছা হিসেবে নিজের পরিবারের সঙ্গে একবার হলেও দেখা করার কথা লেখেন। ওই ফেসবুক পোস্ট দেশের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে ভাইরাল হয়। এক পর্যায়ের তার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক ভাতিজা সেই পোস্ট দেখে নিজের হারিয়ে যাওয়া চাচার কথা জানান পরিবারের কাছে। এরপর ফেসবুকে তাদের যোগাযোগও কথা হয়। এরপর নিজের সবকিছু খুলে বলে শেকড় খুঁজে পান তিনি।

নিজের পরিবারকে খুঁজে পাওয়ার পর কুদ্দুস বলেন, ‘আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া। দীর্ঘ দিন পর হলেও আমার ইচ্ছে পূর্ণ হয়েছে। জীবনের সবচেয়ে খুশির মুহূর্ত এটি।’ তিনি আরও বলেন, ‘হারিয়ে যাওয়ার পর জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছি। জীবনের এক পর্যায়ে বিবাহবন্ধনেও আবদ্ধ হয়েছি। স্ত্রী-সন্তান, নাতি-নাতনি নিয়ে এখানেই বসবাস করছি বটে কিন্তু প্রশান্তি পাইনি। মাকে ফিরে পেতে ৭০ বছর ধরে কেঁদেছি।’

বাড়ুইপাড়া গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের এক প্রতিবেশী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সেই ছোটবেলা থেকেই তিনি নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কথা সবাইকে বলতেন। কিন্তু কেউ কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। অবশেষে ফেসবুকে লেখার পর তার পরিবারের খোঁজ পাওয়া গেছে।’

ফেসবুকে কুদ্দুস মিয়ার গল্প তুলে ধরা ব্যক্তি আইয়ুব আলী বলেন, ‘কুদ্দুস মিয়া হারিয়ে যাওয়ার গল্প শুনে আমি আমার ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করি। সে ভিডিও সূত্র ধরে কুদ্দুছ মিয়ার বাড়ির কিছু লোকজন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং হাতের কাটা দেখে তাকে শনাক্ত করে তার মায়ের কথামত। আমার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে ৭০ বছর পর মা তার ছেলেকে ফিরে পেয়েছে তাতে আমার অনেক আনন্দ লাগছে।’

কুদ্দুছ মিয়ার ছেলে হাফেজ সোহেল মুন্সি বলেন, ‘কোনোদিন ভাবিনি আমার দাদিকে দেখতে পাব। আমার বাবা তার মাকে ফিরে পাবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হয়েছে, আল্লার কাছে শুকরিয়া।’

এসএইচ-২৫/২৫/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)