পাগলির মেয়ের জন্ম নিবন্ধনে এমপি বদির নাম

কক্সবাজারের টেকনাফে জন্ম নেওয়া এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর কন্যাসন্তানের দায়িত্ব নিয়েছেন কক্সবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার চৌধুরী ও তার স্বামী সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি দম্পতি। মঙ্গলবার দুপুরে সাংসদ আবদুর রহমান বদি নিজেই সময় নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, আমার সংসারে এর আগে দুইজন ছেলে মেয়ে ছিল। এই নবজাতক শিশু কন্যাসহ বর্তমানে তিনজন। এক ছেলে ও দুই মেয়ে বাবা-মা হলাম আমরা। ওই শিশুর কন্যার নাম রাখা হয়েছে মরিয়ম জারা। টেকনাফ পৌরসভা থেকে আমরা স্বামী স্ত্রীর পিতৃ পরিচয় দিয়ে পরিচয় দিয়ে মরিয়মের জন্ম নিবন্ধন ফরম পূরণ করেছি।

এর আগে সোমবার টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভারসাম্যহীন নারী চিকিৎসাধীন থাকলেও তার সদ্যজাত শিশুকন্যাকে লালনপালনের জন্য বাড়ি নিয়ে যান আবদুর রহমান বদি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, শনিবার রাতে বাহারছড়া ইউনিয়নের শীলখালী এলাকায় এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর প্রসব বেদনা দেখে এলাকার দায়িত্বরত চৌকিদার শহিদ উল্লাহ টেকনাফ থানায় খবর দেন।

এরপর থানা থেকে পাগল ও মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করা মারোতের সহযোগিতায় টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয় ওই নারীকে। পরে রাতেই সেখানে সন্তান প্রসব করান চিকিৎসক ও সেবিকারা। এখনও ওই ভারসাম্যহীন নারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীল বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসক এবং কর্তব্যরত নার্সের সহযোগিতায় সন্তান প্রসবের কাজ সম্পন্ন করা হয়। মানসিক রোগী ও কন্যা শিশুটির মা বর্তমানে টেকনাফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তিনি আরও বলেন, তবে যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কন্যা শিশুটিকে লালন পালনের জন্য বর্তমান সাংসদ শাহীন আক্তার চৌধুরী ও সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি বাড়িতে নিয়ে যান।

ডা. টিটু চন্দ্র শীল বলেন, ওই মানসিক ভারসাম্যহীন নারীটি উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের শীলখালী এলাকায় সবসময় ঘুরে বেড়াতেন। এর মধ্যে গর্ভবতী হয়ে পড়েন তিনি। মানসিক রোগী থেকে সন্তান প্রসবের খবর ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সচেতন মহলের মাঝে হতাশার অবতারণা হয়।

শিশুটিকে দত্তক পাওয়ার জন্য অনেকেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মানসিক রোগীদের তহবিল (মারোতের) সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরমধ্যে সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষে পিতৃহীন সদ্যোজাত শিশু কন্যাটিকে আবদুর রহমান বদির তত্ত্বাবধানে নিয়ে যাওয়ায় অনেকে সাধুবাদ জানান।

সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী অভিভাবকহীন শিশু কন্যাটিকে লালনপালনের পাশাপাশি মেয়ে হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছি। আমাদের কাছে নিজের মেয়ের হিসেবে পালিত হবে। এ মেয়েটিকে আমরা নতুন ঠিকানা দিয়েছি।’

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানসিক রোগীদের তহবিল মারোতের সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, মানবতা কি জিনিস সেটি দেখিয়ে দিয়েছেন উখিয়া-টেকনাফের সাবেক ও বর্তমান সাংসদ দম্পতি। সাংসদ নিজেই ফোন করে শিশু কন্যাটির প্রথমে খোঁজখবর নেন। পরবর্তীতে দত্তক নেওয়ার আশা পোষণ করেন। এ ব্যাপারে যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়ার তিনি মেনে নিতে রাজি থাকায় শিশু কন্যাটিকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং হাসপাতাল চিকিৎসাধীন থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর খোঁজখবর রাখছেন।

মারোত সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ও টেকনাফ সরকারি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সন্তোষ কুমার শীল বলেন, ফুটফুটে নবজাতকের দায়িত্ব নিয়ে সাংসদ আব্দুর রহমান বদি দম্পতি প্রমাণ করলেন তিনি মানবতার একটি উদাহরণ। এ নবজাতক শিশুটি একটি কোল ও অভিভাবক পাওয়াই আমরা সকলে আনন্দিত। শিশুটি ভবিষ্যতে ওই পরিবারে বেড়ে ওঠে আলোকিত মানুষ হোক সেই প্রত্যাশাই রইল।

এসএইচ-০৫/২৬/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)