জামিনদার না থাকায় ৭৯ দিনেও মুক্তি মেলেনি কিশোর আরিফের

ভাঙারির দোকানে প্রবেশ করে কোহিনুর বেগম নামের একজনকে ঘুমন্ত অবস্থায় মারধর এবং কুপিয়ে জখম করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। ওই নারীর চিৎকারে স্থানীয়রা ধাওয়া করে আরিফুল ইসলাম (১৬) নামের এক কিশোরকে আটক করে। পরে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। গত ৮ মার্চ ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের পশ্চিম পাশে দপদপিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আটকের পর পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করলে বিচারক যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গত ৮ আগস্ট আদালত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। তবে বৈধ অভিভাবক বা নিকটাত্মীয় কাউকে না পাওয়ায় জামিনের ৭৯ দিন পরও কারাগারেই থাকতে হচ্ছে কিশোর আরিফকে।

আরিফুল ইসলাম ভোলার লালমোহন উপজেলার পাঙ্গাইস্যা গ্রামের মৃত সোহেলের ছেলে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত কোহিনুর বেগমের স্বামী ভাঙারী ব্যবসায়ী মো. বেল্লাল সরদার বাদী গত ৯ মার্চ নলছিটি থানায় মামলাটি করেন।

কারা সূত্রে জানা গেছে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় আরিফুলকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। পরে সঠিক ঠিকানা ও অভিভাবকের সন্ধান না পাওয়ায় কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারিভাবে আইনগত সহায়তা পেতে জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে আবেদন করে আরিফুল।

লিগ্যাল এইড প্যানেল আইনজীবী মানিক আচার্য্য মামলাটি পরিচালনা করেন। গত ৮ আগস্ট তার জামিন শুনানির দিন ধার্য করা হয়। নারী ও শিশু আদালতের বিচারক এমএ হামিদ তার জামিন মঞ্জুর করেন। তবে জামিনদার না থাকায় প্যানেল আইনজীবীর সহকারী রনিকে জামিনদার করে আদালতে জামিননামা জমা দেন আইনজীবী মানিক আচার্য্য।

পরে ঝালকাঠি আদালত থেকে জামিননামা কারাগারে পাঠালে কারা কর্তৃপক্ষ যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়। তবে জামিন হওয়ার ৭৯ দিন পেরিয়ে গেলেও বৈধ কোনো অভিভাবক না পাওয়ায় সেখান থেকে বের হতে পারছে না আরিফুল।

ঝালকাঠি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার মো. শিবলী নোমান খান বলেন, নলছিটির একটি মামলায় আরিফুল ইসলাম নামের এক কিশোরকে কারাগারে পাঠালে তাকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে হস্তান্তর করে কারা কর্তৃপক্ষ। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালক) সহকারী পরিচালক মো. জাকির হোসেন এক পত্রের মাধ্যমে লিগ্যাল এইড সহায়তার আবেদন করেন। তাকে আইনি সহায়তা দিয়ে জামিন করানো হয়েছে। কিন্তু তার সঠিক স্থায়ী ঠিকানা নিশ্চিত হতে না পারায় বৈধ অভিভাবক পাওয়া যাচ্ছে না।

ঝালকাঠির কারাধ্যক্ষ জান্নাত উল ফরহাদ বলেন, আরিফুল ইসলাম ভবঘুরে প্রকৃতির হওয়ায় তার কোনো সঠিক ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সে ভোলার লালমোহন উপজেলার পাঙ্গাইস্যা গ্রামের মৃত মো. সোহেলের ছেলে। আমাদের কাছে জামিননামা চলে এলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছি।

ঝালকাঠি সমাজ সেবা প্রবেশন কর্মকর্তা সানজিদা আয়েশা বলেন, নিয়মানুযায়ী তাকে মুক্তি দিয়ে বৈধ অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। তবে আমরা তার বৈধ অভিভাবক খুঁজে পাচ্ছি না। তারপরও কোনো গ্রান্টার (জামিনদার) পেলে মানবিক কারণে আমরা তার মাধ্যমে তাকে মুক্ত করে দিতে পারতাম।

কোনো হৃদয়বান ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি আরিফকে মুক্তি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে লিগ্যাল এইড কার্যালয় অথবা সমাজ সেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

এসএইচ-২১/২৬/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)