যশোরের বাঁধাকপি রফতানি হচ্ছে বিদেশে

যশোর থেকে বিদেশে রফতানি হচ্ছে নিরাপদ ও বালাইমুক্ত বাঁধাকপি। করোনা মহামারির এ বিপর্যয়কালে ভাল দামে বিদেশে সবজি রফতানি করতে পারায় খুশি কৃষকরা। এ উদ্যোগ কৃষকের উৎপাদন বৃদ্ধিতে উৎসাহ বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

বৃহস্পতিবার বাঁধাকপি রফতানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বাদল চন্দ্র।

যশোর জেলায় প্রতি বছর প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষাবাদ হয়। তবে এ বছর ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। তারপরও যে সবজি ক্ষেতে রয়েছে, তা থেকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে বেসরকারি সংস্থা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন ও সলিডরেটির উদ্যোগে এ রফতানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, যে সময় সবজির দাম কমে গেছে, ঠিক সে সময় সবজি বিদেশে রফতানি করায় তারা লাভবান হচ্ছেন।

এ বিষয়ে সালাম শেখ নামের একজন চাষি বলেছেন, শীতকালে বিভিন্ন ধরনের সবজি আবাদ করি। এ বছর বৃষ্টিপাতের কারণে সবজির উৎপাদন কম হয়েছে। তাছাড়া এখন সবজির দামও কমে গেছে। এখন আড়াই কেজির একটি বাঁধাকপি মাত্র ৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেখানে রফতানিকারকরা আমাদের কাছ থেকে প্রতি পিস বাঁধাকপি ১০ টাকা দরে কিনছেন। এতে আমরা লাভবান হচ্ছি।

আরেকজন চাষি আব্দুর রশিদ বলেন, যে সময় বাঁধাকপি ফেলে দিতে হয় বা গরুকে খাওয়ানো হয়, ঠিক সে সময় রফতানির সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে করে আমাদের আয় বেড়েছে। সেই সঙ্গে দামও ভাল পাচ্ছি। বাঁধাকপির মত অন্যান্য সবজি রফতানি শুরু হলে কৃষকরা আরও লাভবান হবেন।

গ্রামের ২৩০ জন কৃষক বাঁধাকপি রফতানির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল উল্লেখ করে কৃষক শাজাহান আলী বলেছেন, বৃষ্টির কারণে অনেক ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এ বছর ১৩০ জনের মতো বাঁধাকপি দিতে পেরেছেন। আমাদের ১ হাজার ৫০০ টন বাঁধাকপি দিতে হবে। আশা করছি সময়মত সবটাই দিতে পারব।

এ দিকে রফতানিকারকরা জানিয়েছেন, বিদেশের বাজারে সবজির ব্যাপক চাহিদা থাকায় চাষি পর্যায় থেকে সবজি সংগ্রহ করে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। থিংক্স টু সাপ্লাই এর কর্মকর্তা কাজল বখতিয়ার বলেছেন, গত বছর আমরা ৬০০ টন বাঁধাকপি মালয়েশিয়া ও সিংগাপুরে পাঠিয়েছিলাম। আমাদের দেশের সবজির মান ভাল হওয়ায় এ বছর চাহিদা বেশি। কেবল আমাদের প্রতিষ্ঠানেরই ১ হাজার টন বাঁধাকপির ক্রয়াদেশ আছে। একই সঙ্গে বাঁধাকপির পাশাপাশি অন্যান্য সবজি রফতানিরও প্রচেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বলেছেন, রফতানির এ উদ্যোগ কৃষকদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে উৎসাহ বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে করোনাকালে সবজি উৎপাদন ও বাজারজাত নিয়ে কৃষকরা বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাছাড়া আবহাওয়াজনিত কারণেও ক্ষতির শিকার হয়েছেন তারা। অসময়ে ভাল দামে সবজি বিক্রি হওয়ায় তারা কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল থেকে যশোর জেলার বিভিন্ন ধরনের সবজি বিদেশে রফতানি শুরু হয়েছে।

এসএইচ-২০/২০/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)