জমজ সন্তান জন্ম দেয়া ভাসমান নারী পাচ্ছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া হাসপাতালে জমজ সন্তান জন্ম দেয়া সেই রুমা আক্তার পাচ্ছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। সরকারের পক্ষ থেকে ঘর দেয়ার পাশাপাশি তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর প্রচার প্রকাশ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) আহসান কিবরিয়া সিদ্দিক্কীর নজরে আসে। এ সময় মানবিক খবর তুলে ধরার জন্যে তিনি সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ওই ভাসমান নারীকে উপজেলার নারায়ণপুর এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর দেয়া হবে। এছাড়া মাতৃত্বকালীন ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। তাকে সুবিধাভোগীর আওতায় এনে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। আত্মনির্ভরশীলতার জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সর্বোপরি তিনি যেন পিছিয়ে না পড়েন সেজন্য নিয়মিত বিষয়টি মনিটরিং করা হবে।

এছাড়া ইতিমধ্যেই আখাউড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসিল্যান্ড গিয়ে দেখে এসেছেন এবং নগদ দুই হাজার টাকার পাশাপাশি ফল দিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে নগদ ১০ হাজার টাকা দেয়ার কথা জানানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোলার লালমোহন উপজেলার সন্তান রুমা আক্তার। সৎ মায়ের অত্যাচারে ছোট বেলা থেকেই বেড়ে ওঠেন এখানে সেখানে। কয়েক বছর আগে বিয়ে হয় হবিগঞ্জের দিনমুজুর যুবকের সঙ্গে। স্বামীকে নিয়ে থাকতেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায়। কয়েক মাস হলো বড় কন্যা সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে স্বামী আরেকজনকে বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছেন।

এতে মাথায় বাজ পড়ে রুমার। তিনি ভাড়া বাসা ছেড়ে আশ্রয় নেন আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে। অন্যের কাছে হাত পেতে চলতো জীবনযাপন।

সুমি আক্তার নামে এক নারীকে মা ডাকতেন। সেই নারী গত বুধবার রাত ১১টার দিকে রুমার প্রসব ব্যথা উঠলে তাকে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দুই ছেলে সন্তানের জন্ম দেন রুমা আক্তার।

হাসপাতালের ধাত্রী (মিডওয়াইফ) তানিয়া আক্তার ও রোকসানা আক্তার বলেন, প্রসব করাতে গিয়ে দেখি টুইন বেবি। কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করানোয় প্রসূতি নারীরও বিষয়টি জানা ছিলো না। সমস্যা দেখা দেয় যখন দেখা যায় ওই নারীর এক সন্তান গর্ভে উল্টো অবস্থায় আছে। আগে এক সন্তান স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হওয়ায় সৃষ্টিকর্তার কৃপায় ভালোভাবেই প্রসব করানো গেছে।

হাসপাতালের সেবিকা (নার্স) সানজিদা মাহমুদ বলেন, ‘মা ও শিশু দু’জনেই ভালো আছে। এক শিশুর ওজন কম হওয়ায় তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়। হাসপাতালের পক্ষ থেকে দুই সন্তানকে নতুন কাপড় দেয়াসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

চিকিৎসক নুরে সাবা বলেন, ‘অসহায় ওই নারীর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রসব হওয়ায় আমি আনন্দিত। সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতায় এ কাজটি সহজে করা গেছে। এজন্য তিনি সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া আদায় করেন।

সুমি আক্তার নামে এক নারী বলেন, ‘আমাকে মা ডাকে রুমা। ২৯ জুন রাতে আমি একজনের জন্য ভাত নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে কান্না করতে দেখি। তখন সে সমস্যা হচ্ছিল বলে জানান; সঙ্গে সঙ্গেই তাকে আখাউড়া হাসপাাতলে নিয়ে যাই। এখানে সবার আন্তরিক সহযোগিতায় রুমার দুই ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়।

রুমা আক্তার বলেন, মেয়েটাকে নিয়ে স্বামী চলে যাওয়ার পর স্টেশনে আশ্রয় নেই। ছোট বেলা থেকেই আমি বাবা-মা হারা। সৎ মায়ের অত্যাচারে ঘর থেকে বের হয়ে যাই। আমাদের পাঁচ বোনের মধ্যে এক বোন মারা গেছে। বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই।

তিনি জানান, নবজাতকদের নিয়ে কোথায় যাবেন সেটা জানেন না। সবাই মিলে যেন অন্তত একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেন সেই অনুরোধ করেন রুমা আক্তার। হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শে সন্তানদের নাম হাসেন ও হোসেন রেখেছেন বলে জানান।

আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিমেল খান বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে ওই নারী ও নবজাতকদের সব ধরনের সেবা দেয়া হচ্ছে। সবাই আন্তরিকভাবে অসহায় ওই নারী ও তার সন্তানদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

এসএইচ-১৬/০২/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)