ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দিলেন ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ শিকার নারী

টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ভুক্তভোগী নারী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুমি খাতুন ওই নারীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে ঈগল পরিবহনের বাসে ওঠেন জানিয়ে ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘আমি ঢাকা যাচ্ছিলাম। সিরাজগঞ্জের হোটেলে রাত সাড়ে ১১টায় এসে পৌঁছাই। খাওয়া-দাওয়া শেষে গাড়ি চলার পাঁচ মিনিট পরে তিনটা ছেলে উঠে। তারপর তারা বলে যে, তাদের আরও লোক আছে সামনে। তখন আরও চারটা লোক উঠে।

তার মধ্যে আরেকজন বলে, সামনে তার আরও লোক আছে। সিরাজগঞ্জের মধ্যে আরও ছয়জন উঠে। তাদের পেছনে সিট দিয়ে দেয়। ডাকাতি শুরুর আগে আমার পাশের খালি সিটে ডাকাতদের একজন বসতে চাইলে তাকে বসতে দেইনি। ডাকাতি শুরু করলে আমি তাদের বাধা দেয়ার কারণে তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রথমে তিনজন ডাকাত বাসচালকের কাছে গিয়ে তাকে জিম্মি করে। চালকের গলায় ছুরি চেপে ধরে সিট থেকে উঠতে বলে। একপর্যায়ে তারা চালককে বেঁধে ফেলে। এ সময় তারা আমার পাশের সিটে বসা হেলপারকে তুলে নেয়। আমার সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তারা আমার হাত-মুখ- চোখ বেঁধে ফেলে এবং ধর্ষণ করে।’

ওই নারী বলেন, ডাকাতরা যার কাছে টাকা বেশি পেয়েছে তাকে কিছু বলেনি। সবার কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কারসহ সবকিছু লুটে নেয়।

জবানবন্দিতে ওই নারী ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসি দাবি করেন।

তিনি বলেন, ঘটনার সঠিক বিচার না হলে আজ এক নারীর সঙ্গে যা ঘটেছে কাল আরেক নারীর সঙ্গেও তা ঘটবে।

গত মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া থেকে ঈগল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ২৪/২৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। গভীর রাতে সিরাজগঞ্জ পৌঁছালে সেখান থেকে কয়েকজন ডাকাত যাত্রী বেশে ওই বাসে উঠে পড়ে। এরপর বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর ডাকাতদল সেটি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

পরে বাসে থাকা যাত্রীদের হাত, পা ও চোখ বেঁধে মারধর ও টাকা-পয়সা লুটপাট করে। এ সময় বাসের ভেতরেই এক নারীকে ডাকাতদল ধর্ষণ করে এবং ভোর সাড়ে ৩টার দিকে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বাসটি বালুর ডিবির মধ্যে উল্টিয়ে ফেলে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় বাসের এক যাত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেন। পরে বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে মো. রাজা মিয়া নামে একজনকে টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে ডাকাতিকালে যাত্রীদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া ৩টি মোবাইল জব্দ করা হয়। রাজা মিয়াকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রাজা মিয়া কালিহাতী উপজেলার বল্লা গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে। তিনি টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

এসএইচ-২৭/০৪/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)