কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৬ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরমধ্যে একই পরিবারের রয়েছেন চারজন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ জানান, ১৬টি মরদেহ রাতেই তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক। তাদের মধ্যে ২০ জনকে ঢাকায়, ৪০ জনকে বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম ও কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ১২ জনকে অন্যান্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এখন পর্যন্ত নিহত ১৬ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সুজন মিয়া (৩৫), তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৩০), তাদের দুই ছেলে সজীব মিয়া (১৪) ও ইসমাইল মিয়া (১০); কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার দড়িগাঁও গ্রামের আছির উদ্দিন (৩০), মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের রাসেল মিয়া (২১), চানপুর গ্রামের সাইমন মিয়া (২৬), ভৈরব পৌর শহরের টিনপট্টি এলাকার বাসিন্দা সুবোধ শীল (৪৫), ভৈরব পোস্ট অফিসের সহকারী পোস্ট মাস্টার হুমায়ুন কবির জাহাঙ্গীর (৫৫), ভৈরব যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ জালাল আহমেদ, ঢাকা কলেজের ছাত্র ভৈরবের রাধানগর গ্রামের আফজাল হোসেন (২৩), ভৈরব পৌর শহরের রানীরবাজারের সবুজ চন্দ্র শীল (৫০), ভৈরব উপজেলার শ্রীনগরের রাব্বি মিয়া, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মেরেঙ্গা গ্রামের হোসনা আক্তার, কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকার ইমারুল কবীর (২২) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বরইছড়া এলাকার নিজাম উদ্দিন সরকার।
এদিকে দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রেলপথে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ভৈরব রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার মো. ইউসুফ মিয়া।
তিনি জানান, ঢাকা ও আখাউড়া থেকে দুটি উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাত ৮টার দিকে। প্রথমে দুর্ঘটনাকবলিত মালবাহী ট্রেনটি ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে সেই লাইনটি মেরামত শেষে রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা থেকে সিলেটগামী কালিনী এক্সপ্রেস ট্রেনটির মাধ্যমে সিঙ্গেল লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। পরে দুর্ঘটনাজনিত কারণে বিভিন্ন স্টেশনে আটকে থাকা ঢাকা-নোয়াখালী উপকূল, সিলেট-ঢাকা জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোর চলাচল শুরু হয়।
ভোর সাড়ে ৪টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনটির দুটি বগি রেললাইন থেকে সরিয়ে নিয়ে রেলপথ মেরামতের কাজ শুরু করেন কর্মীরা। সকাল ৭টা ১২ মিনিটে ঢাকা থেকে সিলেটগামী উপবন ও ৭টা ১৯ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা মেইল ট্রেনটি ঢাকার দিকে যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-নোয়াখালী ও ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রেলপথে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানান স্টেশন মাস্টার ইউসুফ মিয়া।
এরআগে সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরব জংশনের কাছাকাছি জগন্নাথপুর এলাকায় এগারসিন্দুর ও চট্টগ্রামগামী মালবাহী ট্রেনের মধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১৭ জন নিহত হন। নিহত ১৬ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে একজনের পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। আহতের বেশিরভাগই প্রথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বেশ কয়েকজনকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মালবাহী ট্রেনটি সিগন্যাল অমান্য করায় ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ট্রেনটির চালক, সহকারী চালক ও পরিচালককে (গার্ড) সাময়িক বরখাস্ত করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এসএইচ-১৩/২৪/২৩ (আঞ্চলিক ডেস্ক)