মৃত্যুর আগে কী পরিমাণ সম্পদ ওসিয়ত করা যাবে?

মৃত্যুর আগে

সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য জীবন ব্যবস্থা নাম ইসলাম। এর প্রতিটি দিকই মানুষের জন্য কল্যাণের। মানুষের জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এমন কোনো বিষয় নেই যা ইসলাম তুলে ধরেনি। এমনকি মানুষ মৃত্যুকালে তার সম্পদের কী পরিমাণ ওসিয়ত কিংবা দান করবে সে ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম।

যদি কারো স্ত্রী, সন্তান-সন্তুতিসহ অন্যান্য উত্তরাধিকারী থাকে তবে সে ব্যক্তি কি ইচ্ছা করলেই তার সব সম্পদ দান বা ওসিয়ত করতে পারবে? আর মৃত্যুর আগে সমূদয় সম্পদ দান বা ওসিয়ত করলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে কি? প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে তা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন-

হজরত সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি মক্কায় অসুস্থ হয়ে পড়লে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দেখার জন্য আসতেন। আমি (প্রিয়নবিকে) বললাম, আমার তো ধন-সম্পদ আছে, আমি সব ধন-সম্পদ ওসিয়ত (দান) করে যাই? তিনি (প্রিয়নবি) বললেন, ‘না’।

আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক (সম্পদ)? তিনি (প্রিয়নবি) বললেন, ‘না’।

আমি বললাম, তবে (ধন-সম্পদের) তিন ভাগের একভাগ? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’ তিন ভাগের একভাগ (সম্পদ দান) করতে পার। তিন ভাগের এক ভাগই বেশি।

তোমার ওয়ারিশদেরকে এমন অসহায় অবস্থায় রেখা যাওয়া যাবে না, যে কারণে তারা মানুষের কাছে হাত পেতে ফিরবে। বরং তার চেয়ে তাদেরকে (উত্তরাধিকারীদের) ধনী অবস্থায় রেখে যাওয়া উত্তম।

আর যা-ই তুমি খরচ করবে, তাই তোমার জন্য সাদকা হবে। এমনকি যে (খাবারের) লোকমাটি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে, তাও (তোমার জন্য সাদকা বা দান)।

আশা করি, আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘজীবী করুন। তোমার দ্বারা অনেক লোক উপকৃত হবে। আবার অন্যেরা (কাফের সম্প্রদায়) ক্ষতিগ্রস্তও হবে। (বুখারি)

উল্লেখিত হাদিসটি মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এমন অনেক মানুষ আছে, যারা মৃত্যুর আগে অজ্ঞতাবশঃত নিজেদের সমূদয় সম্পদ দান-সাদকা কিংবা ওসিয়ত করে থাকেন। তাদের জন্য এ হাদিসে সম্পদ দানের সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া হয়েছে।

হাদিসের শিক্ষা

> কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া সুন্নাত।

> পরিবার-পরিজন থাকলে সম্পদের মালিক তার সমূদয় সম্পদ দান, ওয়িসত কিংবা ইসলামের পথে ব্যয় করবে না।

> কমপক্ষে তিন ভাগের দুই ভাগ সম্পদ পরিবার পরিজনের জন্য রেখে শুধু এক ভাগ সম্পদ দান কিংবা ওসিয়ত করবে।

> পরিবার-পরিজনের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ যাবতীয় খরচাদি বহন করলেও সম্পদের মালিক ব্যক্তি সাদকা বা দানের সাওয়াব লাভ করবে।

> পরিবার তথা সন্তান-সন্তুতিকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে যাওয়া যাবে না। যাতে তারা সম্পদশালী পরিবারের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও অন্যের দারস্থ হতে না হয়।

> এ হাদিস দ্বারা প্রত্যেককেই আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।

> আবার আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ দান-সাদকা করার নির্দেশনাও রয়েছে।

সুতরাং উল্লেখিত বিষয়গুলো নিজেদের জীবনে বাস্তবায়নে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী ধন-সম্পদ দান-সাদকা এবং ওসিয়ত করার তাওফিক দান করুন। প্রিয়নবি ঘোষিত পন্থায় সম্পদ বণ্টনের ফয়সালা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আরএম-৩০/০২/১২ (ধর্ম ডেস্ক)