ইসলামের পরিভাষায় স্বাধীনতা ও দেশপ্রেম

ইসলামের পরিভাষায়

আল্লাহ নিজেই তার মাখলুককে স্বাধীনতা দিয়েছেন। পরীক্ষার অংশ হিসেবে মানুষকে স্বাধীন চলাফেরার ইচ্ছা দিয়ে তিঁনি দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। স্বাধীনতা মহান আল্লাহর বিরাট একটি নেয়ামত। কোনো জাতি অন্য কোনো জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে রাখা; জুলুম করা ইসলাম সমর্থন করে না। হাজার হাজার বছর আগে বনী ইসরায়েলদের পরাধীন করে রেখেছিল ফিরাউনের বংশ-ক্বিবতীরা। আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবী মুসা (আ:) নির্দেশ করলেন তাদেরকে মুক্ত ও স্বাধীন করার। তিনি বনী ইসরায়েলকে স্বাধীনতার স্বাদ এনে দিলেন। মুক্ত করলেন পরাধীনতা ও জুলুম থেকে। কুরআনে কারীমের বিশাল অংশ জুড়ে তাদের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন আল্লাহ তা’আলা। তা আমাদেরকে স্বাধীনতা অর্জন ও রক্ষার গুরুত্বের শিক্ষা দেয়।

আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সহচরদের অন্যায়ভাবে নিজ মাতৃভূমি থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করেছিল মক্কার মুশরিকরা। আল্লাহর নির্দেশে পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে তিনি মাতৃভূমি স্বাধীনভাবে প্রবেশ ও বসবাসের অধিকার আদায় করেছিলেন। আল্লাহ তা’আলাই মানুষকে পৃথিবীর বুকে কর্তৃত্ব ও প্রতিনিধিত্ব দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন-‘তিনিই যমীন হতে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, তন্মধ্যে তোমাদের বসতি দান করেছেন’। (সুরা হূদ, আয়াত ৬১)

অপর আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন-‘আমি তোমাদের পৃথিবীতে ঠাই দিয়েছি এবং তোমাদের জীবিকা নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর’। (সুরা আ’রাফ, আয়াত ১০) সুতরাং মাতৃভূমি আল্লাহর বিশাল একটি দান। আর এই মাতৃভূমির প্রতি মানুষের ভালোবাসা অনেকটা প্রাকৃতিক। স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কা ছেড়ে মদিনায় যেতে বাধ্য হয়েছিলেন তখন তিনি মাতৃভূমি মক্কার প্রতি করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে চোখের পানি ছেড়েছিলেন, আর বলেছিলেন, আল্লাহর শপথ! আমি জানি, তুমি আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় স্থান এবং আমার কাছেও তুমি প্রিয় ভূমি। যদি তোমার অধিবাসীরা আমাকে বের না করে দিত তাহলে আমি কখনোই তোমাকে ছেড়ে যেতাম না। (মুসনাদে আহমদ) প্রথম যখন তাঁর প্রতি ওহী নাযিল হলো তখন তাঁকে খাদিজা (রা:) নিয়ে গেলেন সে সময়ের পণ্ডিত ওরাক্বা ইবনে নওফেলের নিকট। তিনি হেরাগুহার বিস্তারিত বিবরণ শুনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অভয় দিয়ে কিছু সুসংবাদ দিলেন। সেই সাথে কিছু সতর্কবানীও করলেন। একপর্যায়ে যখন ওরাক্বা বললেন-‘তোমার জাতি তোমাকে তোমার মাতৃভূমি থেকে একদিন বের করে দিবে’। তখন নবীজি অবাক হয়ে বললেন- ‘তারা আমাকে বের করে দিবে?’ এ থেকে নবীজির নিজ মাতৃভূমির প্রতি সহজাত টান ও ভালোবাসা পরিস্কারভাবে ফুটে ওঠে। ইসলাম মুসলমানদের নিজ মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসার নির্দেশ করে।

এজন্য একাধিক হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের তাদের মাতৃভূমির সীমান্ত পাহারা দেওয়ার অনেক মর্যাদা বর্ণনা করেন। তার কোন কোনটিতে তিনি বলেন-একরাত জেগে শত্রুর আক্রমন থেকে রক্ষার জন্য পাহারা দেওয়া একমাস নফল নামাজ ও রোযার চেয়ে উত্তম।

অবশ্য দেশপ্রেম বিষয়ে একটি হাদীস লোকমুখে শোনা যায় সেটা হলো, ‘হুব্বুল ওয়াতানি মিনাল ঈমান’ যার অর্থ হলো দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। এই হাদীসটি মূলত: হাদীস বিশারদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী জাল ও ভিত্তিহীন। সুতরাং এটিকে হাদীস হিসেবে উল্লেখ করা অনুচিত এবং অপ্রয়োজনীয়। এ বিষয়ে ওপরে উল্লেখিত রেফারেন্স ছাড়াও আরো নানা বর্ণনা রয়েছে সেগুলো উপস্থাপন করা যেতে পারে। লেখক : দাঈ, পশ্চিম দাম্মাম ইসলামিক সেন্টার, সৌদি আরব।

আরএম-০৩/১৫/১২ (ধর্ম ডেস্ক)