আত্মীয়-স্বজনের চেয়ে প্রতিবেশির হক কি বেশি?

আত্মীয়-স্বজনের

প্রতিবেশির চেয়ে আত্মীয়-স্বজন প্রতিটি মানুষের কাছেই অনেক আপন। কিন্তু আত্মীয়-স্বজন কখনোই প্রতিবেশির চেয়ে বেশি উপকারে আসে না। কারণ আত্মীয়-স্বজন সবসময় ধারে-কাছে থাকে না। প্রতিবেশিরাই বিপদে-আপদে, দুঃখ-দুর্দশায় একে অপরের কাছে প্রথমে এগিয়ে আসে। প্রতিবেশির যথাযথ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই সামাজিক শান্তি নিশ্চিত হয়।

বিপদের সময় আত্মীয়-স্বজনের আগে প্রতিবেশিরাই খোঁজ-খবর নেয় এবং সেবাযত্ন করে থাকে। শুধু তা-ই নয়, সামাজিক কাজ-কর্ম, বিয়ে-শাদীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আত্মীয়-স্বজনের চেয়ে প্রতিবেশিরাই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।

যদিও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদেরকে কুরআন-হাদিসে পাকে অভিশপ্ত বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তথাপিও প্রতিবেশির সঙ্গে সদাচরণের ব্যাপারে কুরআনে পাকে সুস্পষ্ট নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘কাছের প্রতিবেশি, দূর প্রতিবেশি এবং সঙ্গী-সাথীদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার কর।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩৬)

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হক বা অধিকার হিসেবে প্রতিবেশিকে ৩ ভাগে বিভক্ত করেছেন-

> এক হক বিশিষ্ট প্রতিবেশি। যারা আত্মীয় নয় আবার মুসলিমও নয়।

> দুই হক বিশিষ্ট প্রতিবেশি। যারা আত্মীয় নয়, তবে মুসলিম।

> তিন হক বিশিষ্ট প্রতিবেশি। যারা আত্মীয় এবং মুসলিম।

প্রতিবেশি অমুসলিম হলেও একে অন্যের সহযোগী। একে অপরের সঙ্গে চলা-ফেরা, ওঠা-বসায় পাস্পরিক সহযোগিতা করে থাকে।

আবার প্রতিবেশি মুসলিম হলে এমনিতেই তার দু’টি হক প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। একটি হলো সে প্রতিবেশি হিসেবে খোঁজ-খবর রাখার অধিকার রাখে। আবার মুসলিম হওয়ার কারণে হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী এমনিতেই এক মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের একাধিক ৬টি হক জড়িত বলে হাদিসে প্রিয়নবি ঘোষণা করেছেন।

আবার প্রতিবেশি যদি আত্মীয় হয় তবে সে ক্ষেত্রে উপরোল্লেখিত অধিকারগুলোর সঙ্গে আত্মীয়তার হকও মিলে যায়। কেননা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর প্রতি কুরআন এবং হাদিসের একাধিক স্থানে ভয়াবহ ক্ষতির ঘোষণা এসেছে।

সুতরাং প্রতিবেশি সঙ্গে মিলেমিশে থাকা, তাদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক আচরণ করা প্রত্যেকের মুসলমানেরই নৈতিক দায়িত্ব। কেননা কাছের এবং দূরেরসহ সব প্রতিবেশির সঙ্গে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা।

মনে রাখতে হবে

প্রতিবেশিকে কষ্ট দেয়া ঈমানের পরপন্থী কাজ। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশিকে কষ্ট না দেয়।’ (মিশকাত)

শুধু এ হাদিসই নয়, বরং প্রিয়নবি ৩বার শপথ করে বলেছেন-

– আল্লাহর শপথ! সে ব্যক্তি ঈমানদার নয় (৩ বার এ শপথ করার পর সাহাবায়ে কেরাম) প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কে সেই ব্যক্তি? জবাবে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘যার প্রতিবেশি তার অনিষ্ট বা ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকতে পারে না।’ (মিশকাত)

সুতরাং কুরআনের নির্দেশ এবং হাদিসের নির্দেশনা থেকে বুঝা যায়, প্রতিবেশির হক বা অধিকারের প্রতি সেভাবেই লক্ষ্য রাখা উচিত যেভাবে প্রতিবেশিদের একজন অপর জনের বিপদ-আপদে সাহায্যের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আত্মীয়-স্বজনের চেয়েও প্রতিবেশিরাই একে অপরের উপকারে আসে। যদিও আত্মীয় স্বজনের হক বেশি কিন্তু সামাজিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রতিবেশির হক বা গুরুত্বও কম নয়। বরং আত্মীয়-স্বজনের অধিকারের চেয়ে প্রতিবেশির প্রতি দ্বায়িত্ববোধ অনেক ক্ষেত্রেই বেশি।

তাই প্রতিবেশির সঙ্গে সদ্ব্যহার করার পাশাপাশি তাদের সামনে-পেছনে মঙ্গল কামনা করা, তাদের কাউকে কোনো ব্যাপারে কষ্ট না দেয়া। সব সময় একে অপরের উপকারের মানসিকতা পোষণ করা। গরিব ও অসহায় প্রতিবেশিকে ধিক্কার বা অবহেলা না করে তাদের প্রতি কোমল হওয়ার পাশাপাশি সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা করা।

প্রিয়নবির এ কথার ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে যে-

‘ওই ব্যক্তি ঈমানদার নয় যে তৃপ্তিসহকারে খাবার গ্রহণ করে অথচ তার প্রতিবেশি তার পাশেই অভুক্ত, খাদ্যাভাবে পড়ে থাকে।’

আল্লাহ তা্আলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক প্রতিবেশির অধিকারগুলোর যথাযথ সম্মান, সম্পর্ক বজায় রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আরএম-২০/০২/০১ (ধর্ম ডেস্ক)