কবর থেকে ওঠার পরের অবস্থা যেমন হবে

কবর থেকে ওঠার

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পৃথিবীর সব প্রাণীকেই মৃত্যু স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’ জীবন যার আছে মৃত্যু তার সুনিশ্চিত। আর দুনিয়াতে সবচেয়ে কষ্টদায়ক হচ্ছে মানুষের মৃত্যু। কারো আপন জনের মৃত্যুতে স্বজনের বিয়োগ ব্যাথাই নয় বরং মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিও প্রচণ্ড শারীরিক কষ্টের সম্মুখীন হয়।

ইসরাফিল (আ.) যখন সর্বশেষ ফুৎকার দেবেন, তখন পিপীলিকা ও বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের মতো সবাই উঠে দাঁড়াবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর দ্বিতীয়বার শিঙায় ফুৎকার দেওয়া হবে, তখন সবাই দাঁড়িয়ে যাবে এবং পরস্পরের দিকে তাকাবে।’ (সুরা জুমার, আয়াত : ৬৮)

তখন সব মৃত জীবিত হয়ে—‘হে আল্লাহ! আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং প্রশংসা করছি’ বলে হাশরের ময়দানে একত্র হবে। হাশরের ময়দানে উত্থিত হওয়ার সময় কাফিররাও আল্লাহর প্রশংসা করবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যেদিন তিনি তোমাদের (হাশরের মাঠে একত্র হওয়ার জন্য) আহ্বান করবেন, অতঃপর তোমরা তাঁর প্রশংসা করতে করতে চলে আসবে এবং তোমরা অনুমান করবে যে, সামান্য সময়ই (দুনিয়ায়) অবস্থান করেছিলে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৫২)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘বিচার দিবসে তোমাদের ও তোমাদের পিতার নাম ধরে ডাকা হবে। সুতরাং সুন্দর নাম রাখো।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪৯৪৮)

হাশরের ময়দানে মানুষ তিনটি অবস্থায় উত্থিত হবে। ১. একদল বাহনে করে, ২. একদল পায়ে হেঁটে, ৩. একদল মাথায় হেঁটে। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই মানুষ তিনটি দলে বিভক্ত হবে। একদল আরোহী—স্বাদগ্রহণকারী ও সম্মানী। আরেকদল রয়েছে, ফেরেশতারা যাদের চেহারায় হাঁটিয়ে দোজখে নিয়ে যাবেন, আরেকদল পায়ে হেঁটে হাশরে উত্থিত হবে।’ (নাসায়ি, পৃষ্ঠা ৪৮৪)

প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! মানুষ চেহারায় কীভাবে হাঁটবে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আল্লাহ পায়ে হাঁটাতে পারেন, তিনি কি চেহারায় হাঁটাতে পারবেন না?’ (বুখারি, হাদিস নং : ২৮০৬)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন মানুষদের নগ্নপদে, নগ্নদেহে ও খতনাবিহীন অবস্থায় সমবেত করা হবে।’ তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! নারী-পুরুষ সবাই কি একজন অন্যজনের লজ্জাস্থান দেখতে থাকবে? তখন তিনি বলেন, ‘হে আয়েশা! সেই সময়টি এতই ভয়ংকর হবে যে, কেউ কারো প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার সুযোগও পাবে না।’ (বুখারি, মুসলিম)

কেয়ামতের দিন বহু মানুষ অন্ধ অবস্থায় উত্থিত হবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করবো। সে বলবে, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে কেন অন্ধ করে উত্থিত করলেন? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম। আল্লাহ বলবেন, এভাবেই তোমার কাছে আমার আয়াতগুলো এসেছিল, অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব।’ (সুরা তাহা, আয়াত : ১২৪-১২৬)

কেয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার নেতার নাম নিয়ে ডাকা হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ওই দিন আমি প্রত্যেককে তাদের নেতাসহ আহ্বান করব, অতঃপর যাদের ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে, তারা নিজেদের আমলনামা পাঠ করবে এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও জুলুম করা হবে না।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭১)

কেয়ামতের দিন মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির দৈর্ঘ্য হবে আট গজ, চেহারা হবে উজ্জ্বল। তার মাথায় মুক্তার টুপি পরানো হবে। অতঃপর সে বন্ধুদের কাছে যাবে। তারা তাকে দূর থেকেই দেখতে পাবে। পক্ষান্তরে কাফিরদের অবস্থা হবে সীমাহীন করুণ। তাদের বাঁ হাতে আমলনামা দেওয়া হবে এবং মাথায় আগুনের টুপি পরানো হবে। (তিরমিজি, হাদিস নং : ৩১৩৬)

আরএম-২৪/০২/০২ (ধর্ম ডেস্ক)