অমুসলিমদের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে কী বলে ইসলাম?

অমুসলিমদের সঙ্গে

ইসলাম মানবতার ধর্ম হিসেবে শান্তিপ্রিয় বিধর্মীদের প্রতি সদ্ব্যবহার ও ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়েছে।মক্কার কাফির মুশরিকরা রাসুলুল্লাহ (সা) এবং সাহাবায়ে কিরাম (রা) এর উপর দীর্ঘ তের বছর পর্যন্ত অবর্ণনীয় নির্যাতন করা সত্তে¡ও মক্কা বিজয়ের পর প্রতিশোধ গ্রহণ না করে রাসুলুল্লাহ (সা) তাদের সকলকে নিঃশর্তে ক্ষমা করে দেন।এটা ইসলামের সর্বোচ্চ পর্যায়ের উদারতা।

যুগ যুগ ধরে প্রকৃত মুসলমানগণ রাসুলুল্লাহ (সা) এর এ আদর্শ অনুসরণ করে অমুসলিম বা বিধর্মীদের সাথে সর্বদা সদ্ব্যবহার করেছেন ৷তবে এ কথাটি ভালোভাবে বুঝতে হবে যে, অমুসলিমদের সাথে সদ্ব্যবহার করা এবং তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা কখনোই এক বিষয় নয়।তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করা বৈধ হলেও বন্ধুত্ব করা কখনোই বৈধ নয়।কোরআন ও হাদীসের অনেক জায়গায় অমুসলিম বা বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

শান্তিকামী বিধর্মীদের সাথে সদাচরণ ও ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন। (সুরা মুমতাহিনাঃ ৮)

বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধাজ্ঞারোপ করে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না, তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রæতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখ থেকে বেরিয়েই যায়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো বেশি জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও। (অর্থ্যাৎ অনুধাবন করো।) (সুরা আল-ইমরানঃ ১১৮)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুসলমানদের ব্যতিত কাফেরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর না। তোমরা কি এমনটি করে নিজেদের উপর আল্লাহর প্রকাশ্য দলীল কায়েম করে দেবে? (সুরা নিসাঃ১৪৪) আল্লাহ তায়ালা এক আয়াতে বিধর্মীদের মধ্যে বিশেষভাবে ইয়াহুদী খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন এবং যারা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে তারা তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে এ ঘোষণা দিয়েছে। হে মুমিণগণ! তোমরা ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদের পথ প্রদর্শন করেন না।’ (সুরা মায়েদাঃ ৫১)

ইয়াহুদী খ্রিস্টানদের সাথে বন্ধুত্ব করে তাদের খুশি করা সম্ভব নয়।তাদের ধর্ম অনুসরণ করা ব্যতিত তারা কারো প্রতি সন্তুষ্ট হয় না।এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। বলে দিন, যে পথ আল্লাহ প্রদর্শন করেন, তাই হল সরল পথ। যদি আপনি তাদের আকাঙ্খাসমূহের অনুসরণ করেন, ঐ জ্ঞান লাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে কেউ আল্লাহর কবল থেকে আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা বাকারাঃ১২৹)

যারা ইসলাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রæপ ও খেলতামাশা করে তাদের সাথেও বন্ধুত্ব করা নিষেধ।এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মুমিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হও।(সুরা মায়েদাঃ ৫৭)

নিজের পিতামাতা, স্ত্রীসন্তান ও ভাই-বোন যদি কাফির মুশরিক হয় তবু তাদের সাথে বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক রাখা বৈধ নয়।আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত পরিস্কার ভাষায় ঘোষণা করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরকে ভালবাসে। আর তোমাদের যারা তাদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা সীমালংঘনকারী।(সুরা তাওবাঃ ২৩)একজন বদরী সাহাবী হাতিব ইবনে আবি বালতাআ (রা) মক্কার কাফির মুশরিকদের প্রতি বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরুপ পত্রযোগে মুসলমানদের গোপন তথ্য ফাঁস করার চেষ্টা করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে ভর্ৎসনা করে পবিত্র কোরআনে আয়াত নাজিল করেন।

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমারা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা তোমাদের কাছে যে সত্য এসেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা রাসুলকে এবং তোমাদেরকে মক্কা থেকে নির্বাসিত করেছে এ কারণে যে, তোমরা তোমাদের রব আল্লাহ্র প্রতি ঈমান রাখ। যদি তোমরা বের হয়ে থাক আমার পথে জিহাদ করার উদ্দেশে এবং আমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, তবে কেন গোপনে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাও? আর তোমরা যা গোপন কর এবং যা প্রকাশ কর তা আমি ভাল জানি। তোমরদের যে কেউ এরূপ করে, সে তো সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়”-(সূরা আল-মুমতাহিনাহঃ১)। (সহিহ বুখারিঃ ৪২৭৪)

কাফির মুশরিক ও ইসলামবিদ্বেষীদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করলে পরকালে আফসোসের কোন সীমা থাকবে না৷তখন শুধু বার বার এ আফসোস হবে।‘হায় আমার দূর্ভাগ্য, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।’ (সুরা ফুরকানঃ ২৮)

আরএম-২১/১৪/০২ (ধর্ম ডেস্ক)