মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময় কোনটি?

মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

মানুষের হায়াতে জিন্দেগি বা দুনিয়ার জীবন বরফের ন্যায়। যা সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিন, মাস, বছরের গন্ডি পেরিয়ে গলে গলে শেষ হয়ে যায়। তাই দুনিয়ায় মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ জিনিস হলো তার ‘আলমে দুনিয়া বা দুনিয়ার জীবন। সাধারণ অর্থে মানুষ যাকে হায়াত হিসেবে বেশি চেনে।

দুনিয়ায় মানুষ বিভিন্ন জিনিস কিনতে পারে কিংবা অর্থের বিনিময়ে প্রয়োজন পূরণ করতে পারে কিন্তু মানুষের হায়াত এমন এক জিনিস যা কোনোভাবেই কেনাও যায় না, পাওয়াও যায় না।

দুনিয়াতে একটা নির্ধারিত সময় বেঁচে থাকার পর মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। কুরআনে আল্লাহ তাআলা এ কথা ঘোষণা করেছেন- দুনিয়ার প্রতিটি জীবনকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’

আল্লাহ তাআলা মানুষকে নির্ধারিত কিছু দিনের জন্য সময় দিয়ে এ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতা দুনিয়ার এ নির্ধারিত সময়ের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করবে । আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন। যাতে তোমাদেকে পরীক্ষা করেন, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী ক্ষমাশীল।’ (সুরা মুলক : আয়াত ২)

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা প্রথমেই মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেছেন। অথচ মানুষের কাছে দুনিয়ার সময়ের দাম অনেক বেশি। মৃত্যুর মাধ্যমেই মানুষের দুনিয়ার এ সময়ের অবসান হবে।

মৃত্যুর মাধ্যমেই মানুষের দুনিয়ার সময় শেষ হয়ে যাবে। দুনিয়ার এ সময়কে কাজে লাগিয়েই মানুষ পরকালে সফলতা পাবে। তাই মৃত্যুর স্মরণই মানুষকে পরকরালের সফলতায় সঠিক কর্মপন্থা নির্ধারণে অনুপ্রেরণা দেবে।

তাই মানুষ যত ওপরেই আরোহন করুক না কেন, যত বড় নেতৃত্ব ও খ্যাতিই লাভ করুক না কেন, যদি সে মৃত্যুর কথা স্মরণ করে তবে অন্যায় করা সম্ভব হবে না। আর তাতে দুনিযার গুরুত্বপূর্ণ সময়ও কাজে লাগবে।

অতঃপর আল্লাহ তাআলা মৃত্যু’র কথা উল্লেখ করার পর হায়াতের কথা বলেছেন। মানুষের এ হায়াত আবার ৫ ধরণের-

– আলমে আরওয়াহ বা রুহের জগতের সময়।

– আলমে বুতুন বা মায়ের পেটে অবস্থানকালীন সময়।

– আলমে দুনিয়া বা দুনিয়ার বর্তমান সময়।

– আলমে বারজাখ বা কবরে অবস্থানের সময়। এবং

– আলমে আখেরাত বা পরকালের চিরস্থায়ী সময়।

মানুষ দুনিয়ার আসার আগেই ২টি জগত অতিক্রম করে আসে। সে জগতে কি হয়েছে, সে ব্যাপারে যেমন আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসিত হবে না। অনুরূপ দুনিয়ার জীবনের পরবর্তী ২ জগত কবর ও আখেরাতের কি হবে তাও মানুষ জানে না।

পরকালের সুখ-দুঃখ, সফলতা-ব্যর্থতা নির্ভর করবে মানুষের দুনিয়ার এ জীবনের কর্মকাণ্ডের ওপর। অর্থাৎ মানুষ যদি দুনিয়ার নির্ধারিত এ জীবনের কর্মকাণ্ডগুলো যথাযথ আদায় করে তবেই আলমে বারজাখ ও আলমে আখারাত সফল ও সুখময় হবে।

দুনিয়ার সব ফেতনা থেকে মুক্ত থাকতে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে বলেছেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে (সাহাবি) এ দোয়া শেখাতেন, যেভাবে তাদেরকে কুরআনের সুরা শেখাতেন। তিনি বলতেন-

اَللهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّم وَ اَعُوْذُبِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَ اَعُوْذُبِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ وَ اَعُوْذُبِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ – اَللهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَ مِنَ الْمَغْرَمِ-

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি জাহান্নাম। ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্ববর। ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জাল। ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্য়িয়া ওয়াল মামাত। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল মা’ছামি ওয়া মিনাল মাগরাম।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জাহান্নামের আজাব থেকে আশ্রয় চাই। কবরের আজাব হতে আশ্রয় চাই। দাজ্জালের ফেতনা থেকে আশ্রয় চাই। জীবন ও মৃত্যুর ফেতনা থেকে আশ্রয় চাই। পাপ এবং ঋণের বোঝা থেকে আশ্রয় চাই।’

সুতরাং দুনিয়ার জীবনকে হেলায়-ফেলায় না কাটিয়ে মৃত্যুর স্মরণের মাধ্যমে পরকালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে আল্লাহর বিধান যথাযথ পালন করা জরুরি। দুনিয়ার এ মূল্যবান সময় নষ্ট না করে যথাযথ মর্যাদা দেয়াও জরুরি। তবেই মানুষের পরকালের জীবন হবে সফল।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার এ জীবনের মহামূল্যবান সময়কে কাজে লাগাতে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আরএম-১৫/১৬/০৩ (ধর্ম ডেস্ক)