বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার ৫ দোয়া

বিপদ-আপদ থেকে

মানুষের উপকার হয় ও বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়- এমন অনেক দোয়া পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আর এ দোয়াগুলো খুবই ছোট, যা সহজে মুখস্থ ও আমল করা যায়। নিম্নে ৫টি দোয়া পেশ করা হলো-

(১) সব ধরনের অনিষ্টতা থেকে হেফাজতের দোয়া:

হজরত ওসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেহ সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে এই দোয়াটি পাঠ করলে কোনো কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না।

দোয়া: বিসমিল্লাহিল্লাজী লা ইয়াদুররু মায়াসমিহি শাইয়ুন ফিল আরদি, ওয়ালা ফিস-সামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলীম।

অর্থ: আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। -তিরমিজি ও আবু দাউদ

(২) কোনো সম্প্রদায় থেকে ক্ষতির আশংকা হলে দোয়া:

হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) যখন কোনো সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকা করতেন তখন বলতেন—

দোয়া: আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআলুকা ফী নুহুরিহীম, ওয়া নাউজুবিকা মিন শুরুরিহীম।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমরা তোমাকেই তাদের মুখোমুখি করছি এবং তাদের অনিষ্টতা থেকে তোমারই কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। (আবু দাউদ ও নাসাই)

(৩) বিপদ-মসিবতের সময় পাঠ করার দোয়া:

হজরত উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মানুষের ওপর কোনো বিপদ এলে সে যদি এই দোয়া পাঠ করে- আল্লাহ তায়ালা তাকে তার বিপদের প্রতিদান দেন এবং সে যা কিছু হারিয়েছে তার বদলে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন।

দোয়া: ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনী ফী মুসিবাতী ওয়া আখলিফ-লী খাইরাম মিনহা।

অর্থ: আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমাদেরকে তারই দিকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! বিপদে আমাকে সওয়াব দান করুন এবং যা হারিয়েছি তার বদলে তার চেয়ে ভালো কিছু দান করুন। (সহিহ মুসলিম)

(৪) বিপদের সময় পাঠ করার দোয়া:

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিপদের সময় এই দোয়াটি পাঠ করতেন—

দোয়া: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালীমুল হাকীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি- ওয়া রাব্বুল আরশিল কারীম।

অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি পরম সহিষ্ণু ও মহাজ্ঞানী। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি মহান আরশের প্রভু। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি আকাশমন্ডলী, জমিন ও মহাসম্মানিত আরশের প্রভু। (সহিহ বোখারি ও মুসলিম)

(৫) ঋণ মুক্তির দোয়া:

হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, এক চুক্তিবদ্ধ দাস তার কাছে এসে বলে, আমি আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধে অপারগ হয়ে পড়েছি। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। তিনি বলেন, আমি তোমাকে এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দিব যা আমাকে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শিখিয়েছিলেন। যদি তোমার ওপর পর্বত পরিমাণ দেনাও থাকে তবে আল্লাহ তায়ালা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন।

তিনি বলেন, তুমি পাঠ করবে—

দোয়া: আল্লাহুম্মাকফিনী বিহালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনী বিফাদলীকা আম্মান সিওয়াক।

অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার হালাল দ্বারা আমাকে তোমার হারাম থেকে দূরে রাখ এবং তোমার দয়ায় তুমি ভিন্ন অপরের মুখাপেক্ষি হওয়া থেকে স্বনির্ভর কর। (তিরমিজি ও বায়হাকি)

সবার জানা উচিত, কোরআন ও মাথা ছুঁয়ে শপথ করলে কী হয়?

দেখা যায়, অনেকেই কোরআন ছুঁয়ে, মাথা ছুঁয়ে, মাজার বা পীরের নামে শপথ করে। কিন্তু জানেন কি ইসলাম কি বলে? ইসলামী বিধান মতে, তা শিরক ও সবচেয়ে বড় গুনাহ। হাদিস শরিফে আছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করে, সে অবশ্যই কুফরি বা শিরক করল।’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস : ১৫৩৫)

শপথ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নামে করতে হয়। কিন্তু কোরআন স্পর্শ করে যদি কেউ শপথ করে, তাহলে সে শপথও রক্ষা করতে হবে। কেননা কোরআন আল্লাহর কালাম। এটি রাব্বুল আলামিনের কথা। তাই এটিও এক ধরনের কসম।

এই ধরনের কসম করলে অবশ্যই তা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কালাম হওয়ার কারণে কোরআনের মর্যাদা কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন করার সুযোগ নেই। আল্লাহর নামে কসম করলে যেমন তার মর্যাদা রক্ষা করা জরুরি, তেমনি কোরআন ছুঁয়ে শপথ করলে এর মর্যাদা কোনোভাবে ক্ষুণ্ন করা যাবে না।

কোনো ব্যক্তি আল্লাহর নামে করা শপথ ভঙ্গ করলে কাফফারাস্বরূপ তিনটি কাজের মধ্যে যেকোনো একটি কাজ করতে হবে।

এক. ১০ জন দরিদ্রকে মধ্যম শ্রেণির খাদ্য সকাল-বিকাল দুই বেলা খাওয়াতে হবে। এটি অর্থমূল্যে দিতে চাইলে প্রত্যেককে পৌনে দুই সের গম বা তার অর্থমূল্য দিতে হবে।

দুই. ১০ জন দরিদ্রকে ন্যূনতম ‘সতর ঢাকা’ পরিমাণ পোশাক-পরিচ্ছদ দান করতে হবে।

তিন. ক্রীতদাস থাকলে একজন ক্রীতদাস মুক্ত করে দিতে হবে। কেউ যদি এ আর্থিক কাফফারা দিতে সমর্থ্য না হয়, তার জন্য কাফফারা হলো তিনটি রোজা রাখা। হানাফি মাজহাব মতে, ওই রোজা উপর্যুপরি ও ধারাবাহিকভাবে রাখতে হবে।

কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করে, তাহলে তার কাফফারা হলো কালেমা ত্বাইয়েবা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করা। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি শপথ করতে গিয়ে লাত ও উজজার (আরবের মূর্তির) নামে শপথ করে বসে, সে যেন বলে, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত, হাদিস : ৩৪০৯)

স্মরণ রাখতে হবে, অহেতুক শপথ করা ইসলাম সমর্থন করে না। আবার শপথ ভঙ্গ করাও ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

আরএম-১২/০২/০৪ (ধর্ম ডেস্ক)