মে মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। রমজান মাস মুসলমানদের কাছে আত্মশুদ্ধির মাস। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, স্বেচ্ছা নিয়ন্ত্রণ আর বেশি সময় ধরে প্রার্থনার ভেতর দিয়ে মুসলমানরা এ মাসে নতুন করে আত্মশুদ্ধি অর্জনের চেষ্টা করেন।
তবে রোজা নিয়ে কিছু ভুল ধারণা আমাদের রয়েছে যা মোটেও ঠিক নয়।এছাড়া রোজা নিয়ে বেশকিছু ভুল ধারণা বিদ্যমান যেগুলো নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
নিচে রোজা নিয়ে সে রকম ৫টি খুব সাধারণ ভুল ধারণা তুলে ধরা হলো। ব্রিটেনে অ্যাডভান্সড (অগ্রসর) ইসলামি বিজ্ঞান এবং শারিয়া আইনের ছাত্র শাব্বির হাসান তার ধর্মীয় জ্ঞান প্রয়োগ করে এগুলোর বিশ্লেষণ করেছেন।
দাঁত ব্রাশ
মিসওয়াক ব্যবহার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও অনুমোদন করে। দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যায় এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। অনেক মানুষ মনে করেন পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যায়। কিন্তু ইসলামি চিন্তাবিদরা বলেন, দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভাঙে না।
শাব্বির হাসান বলেন, অনেক মানুষ অতি সাবধানী। তাদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তিনি, “সবচেয়ে ভালো পরামর্শ অল্প পরিমাণ পেস্ট নিন। মিন্টের গন্ধ কম এ রকম পেস্ট ব্যবহার করুন। ভয় পেলে, গাছের সরু ডাল থেকে তৈরি মিসওয়াক বা দাঁতন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
মুখের লালা
রোজা রেখে চুমু নিষিদ্ধ, অর্থাৎ অন্যের লালা মুখে ঢোকানো যাবে না। মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা থাকে না। শাব্বির হাসান বলছেন, মুখের লালা পেটে ঢুকলে কোনো অসুবিধা নেই।
মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা থাকে না- এই বিশ্বাসের কোনো ভিত্তি নেই, নিজের লালা গলাধঃকরণ করা খুব স্বাভাবিক একটি শারীরিক প্রক্রিয়া, এতে অবশ্যই রোজা ভাঙে না। তিনি বলেন, কিন্তু ইসলামে রোজার সময় মুখের লালা খাওয়া উৎসাহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, অন্যের মুখের লালা নিজের মুখে ঢুকলে রোজা থাকবে না।
দুর্নাম, গুজব
দুর্নাম, গুজব রটালে রোজা ভেঙে যেতে পারে। তবে শুধু খাবার অথবা পানি না খেলেই রোজা কবুল হয়ে যাবে। শুধুমাত্র খাবার মুখে দিলে বা পানি পান করলে রোজা ভেঙে যাবে তাই নয়। আরও কিছু আচরণে রোজা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
মি. হাসান বলছেন, কিছু অপরাধ জিহ্বা দিয়ে হয়। আপনি যদি দুর্নাম রটান, গুজবে অংশ নেন বা কাউকে গালিগালাজ করেন, তাহলে রোজা কবুল নাও হতে পারে।
ভুল করে খাওয়া
ভুল করে খেয়ে ফেললে রোজা ভাঙবে না। অসাবধানতাবশত কিছু খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙে যায় না। আপনি যদি সত্যিই একদম ভুলে কিছু খেয়ে ফেলেন, তাহলেও আপনার রোজা বৈধ থাকবে, যদি না আপনি বোঝার সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করে দেন।
ওজু
নামাজের আগে ওজুর সময় যদি আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে পানি খেয়ে ফেলেন তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। কারণ এই ভুল এড়ানো সম্ভব।
মি: হাসান বলেন, এ কারণে রোজা রেখে অজু করার সময় গারগল না করতে পরামর্শ দেয়া হয়। আপনি শুধু কুলি করে পানি ফেলে দিন।
ওষুধ
অসুস্থ থাকলে রোজা রাখা আবশ্যিক নয়।এছাড়া ওষুধ খাওয়া যাবে না। তবে মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) আন্তর্জাতিক গ্লুকোমা সমিতির সঙ্গে যৌথ একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে- রোজা রেখেও কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। যেমন, চোখের ড্রপ।
এমসিবি বলেছে, চোখের ড্রপ, কানের ড্রপ বা ইনজেকশনে রোজা ভাঙবে না। তবে যেসব ওষুধ মুখে দিয়ে খেতে হয়, সেগুলো নিষিদ্ধ। সাহরির আগে এবং ইফতারির পর তা খেতে হবে। মি. হাসান বলেন, প্রথম কথা আপনি যদি অসুস্থ থাকেন, তাহলে ভাবেতে হবে আপনি রোজা আদৌ রাখবেন কিনা?
এমসিবি বলছে- শিশু, অসুস্থ (শারীরিক এবং মানসিক), দুর্বল, ভ্রমণকারী, অন্তঃসত্ত্বা বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীর জন্য রোজা আবশ্যিক নয়।
যদি স্বল্প সময়ের জন্য কেউ অসুস্থ হন, তাহলে সুস্থ হওয়ার পর অন্য সময়ে তিনি ভাঙ্গা রোজাগুলো পূরণ করে দিতে পারেন, “মি হাসান বলেন।
যদি দীর্ঘস্থায়ী কোনো অসুস্থতা থাকে এবং রোজা রাখা সম্ভব না হয়, তাহলে রোজার মাসের প্রতিদিন ফিদা অর্থাৎ গরিবকে কিছু দান করুন। ব্রিটেনে এই ফিদার পরিমাণ নির্ধারিত করা হয়েছে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ পাউন্ড।
আরএম-০৮/২৮/০৪ (ধর্ম ডেস্ক)