তারা (মুনাফিকরা) বলে, ‘গরমের মধ্যে (তাবুক) যুদ্ধে বের হইও না।’ বলে দাও, ‘জাহান্নামের আগুন তো এর চেয়েও বেশি গরম’, যদি তারা তা উপলব্ধি করতে পারতো! [সুরা : তাওবা, আয়াত : ৮১ (শেষাংশ)]
তাফসির
তাবুক যুদ্ধ গরমের মৌসুমে হওয়ায় মুনাফিকরা এটাকে বাহানা হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। তাদের বাহানার জবাব দেওয়া হয়েছে আয়াতের এই অংশে। আয়াতের মূল বক্তব্য হলো, ওরা যদি পৃথিবীর উত্তাপ থেকে বাঁচতে চায় এবং ছায়ায় থেকে দুনিয়ার আরাম-আয়েশ ভোগ করাকে প্রাধান্য দেয়, তাহলে তাদের ভেবে দেখা দরকার, তারা যখন জাহান্নামের আগুনে পুড়বে তখন তাদের কী অবস্থা হবে। ওই আগুন হবে আরো উত্তপ্ত। আরো দীর্ঘস্থায়ী। এ আজাব তাদের চিরদিনের জন্য ঘিরে রাখবে। এটাই বাস্তব সত্য। গরমের মধ্যে আল্লাহর পথে সংগ্রাম সাময়িক ব্যাপার, কিন্তু জাহান্নামের উত্তপ্ত আগুনে তাদের অবস্থান হবে অনন্তকালের জন্য।
জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ
পবিত্র কুরআন ও হাদিসে জাহান্নামের আগুনের উত্তাপের কিছু বিবরণ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এটা তো লেলিহান অগ্নি, যা গায়ের চামড়া খসিয়ে দেবে।’ (সুরা মাআরিজ : ১৫-১৬)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তাদের মাথার ওপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি, যা দিয়ে তাদের চামড়া ও পেটের ভেতর যা আছে তা বিগলিত করা হবে।’ (সুরা হজ : ১৯-২০)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘যারা আমার আয়াত প্রত্যাখ্যান করে, আমি তাদের অগ্নিতে দগ্ধ করবই। যখনই তাদের চামড়া দগ্ধ হবে তখনই এর স্থানে নতুন চামড়া সৃষ্টি করব, যাতে তারা শাস্তি ভোগ করতে পারে।’ (সুরা নিসা : ৫৬)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এক হাজার বছর জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয়েছে। ফলে তার আগুন রক্তিম বর্ণ ধারণ করছে। অতঃপর পুনরায় এক হাজার বছর উত্তাপ দেওয়ার ফলে এটি সাদা রং পরিগ্রহ করেছে। তারপর আরো এক হাজার বছর উত্তাপ দেওয়ার ফলে এর আগুন কৃষ্ণবর্ণ হয়ে গেছে। সুতরাং জাহান্নাম এখন সম্পূর্ণরূপে গাঢ় কালো তমসাচ্ছন্ন।’ (তিরমিজি)
রাসুলে করিম (সা.) আরো ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের ব্যবহূত এ আগুন জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের এক ভাগ। সাহাবায়ে কিরাম আরজ করলেন : দহনের জন্য তো এ আগুনই যথেষ্ট। তিনি ইরশাদ করলেন : হ্যাঁ, এতদসত্ত্বেও পৃথিবীর আগুনের চেয়ে জাহান্নামের আগুন ৬৯ গুণ বেশি শক্তিশালী।’ (বুখারি ও মুসলিম)। অন্য এক বর্ণনা মতে, জাহান্নামিরা যদি পৃথিবীর আগুনে আসত, তাহলে তাদের (সুখ) নিদ্রা এসে যেত। (তারগিব)
মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জাহান্নামের মধ্যে সেই ব্যক্তির শাস্তি সবচেয়ে হালকা হবে, যার পাদুকাদ্বয় ও জুতার ফিতা হবে আগুনের তৈরি। এর ফলে হাঁড়ির ন্যায় তার মস্তিষ্ক ফুটতে থাকবে। সে মনে করবে, তার শাস্তিই সর্বাপেক্ষা কঠিন। অথচ তার আজাবই সর্বাপেক্ষা হালকা।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জাহান্নামিদের মুখের কাছে জাইতুন তেলের নিচের তপ্ত গাদ নিয়ে আসা হবে এবং এর উত্তাপে তাদের মুখের চামড়া-গোশত খসে পড়বে।’ (তিরমিজি)
তিনি আরো বর্ণনা করেন, ‘জাহান্নামিদের মুখ আগুনের তাপে ভাজাপোড়া হয়ে ওপরের ঠোঁট সংকুচিত হয়ে মাথার মধ্যস্থলে এবং নিচের ঠোঁট ঝুলে নাভির সঙ্গে এসে লাগবে।’ (তিরমিজি)
জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ কখনো প্রশমিত হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর তোমরা (আজাব) আস্বাদন করো, আমি তো তোমাদের শাস্তি কেবল বৃদ্ধিই করব।’ (সুরা নাবা : ৩০)
অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যখনই তা (জাহান্নামের আগুন) স্তিমিত হবে তখনই আমি তাদের জন্য অগ্নিশিখা বৃদ্ধি করে দেব।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৯৭)
আরএম-০৪/৩০/০৪ (ধর্ম ডেস্ক)