ইসলামের বিধানে বিয়ের প্রথম রাতে যা করণীয়

ইসলামের বিধানে

ইসলাম একটি সর্বজনীন ধর্ম। কোনো ভ্রান্তি ও প্রান্তিকতার স্থান ইসলামে নেই। জীবন ও বাস্তবতার আলোকে জীবনকে ভোগ করার সরল সহজ ও শুদ্ধতর পথ ইসলামই বলে দিয়েছে।

অন্যান্য ধর্মের মতো সংঙ্কীর্ণতা নেই, আবার ধর্মের নামে জীবন ভোগের লাগামহীনতাও নেই। ইসলামে জীবন সুন্দর ও উপভোগময়।

জীবনের সাধারণত থেকে সাধারণ, কঠিন থেকে কঠিন বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে সমাধান। জীবনের অপ্রিয় প্রসঙ্গগুলোতে ইসলাম যেভাবে উপস্থিত তেমনি প্রিয় প্রসঙ্গগুলোতেও। শিশু শৈশবে দূরন্তপনায় ইসলাম যেমন উপস্থিত তেমনি প্রৌঢ়ত্বের সন্ধ্যায় উপস্থিত। যুবকের মাথা গরম সিদ্ধান্তে ইসলাম যেভাবে কথা বলে তেমনি বৃদ্ধের পাকা আকলের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও কথা বলে ইসলাম।

জীবনের দীর্ঘ সফরের প্রতিটি উত্থান পতনে ইসলাম উপস্থিত। জীবনের প্রতিটি দুঃখ দুর্দশায় ইসলাম উপস্থিত। দ্বি-প্রহরে ইসলাম উপস্থিত তেমন নিকষ কালো রজনীতেও উপস্থিত। মোটকথা জীবন বাস্তবতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত বস্তু ও ব্যবস্থাপনার নামই ইসলাম।

একারণেই হাদিসের পাতায় আমরা দেখতে পাই- আমাদের মান্যবর রাসূল (সা.) আমাদেরকে ইস্তিঞ্জা গোসল কাপড় ধোয়ার কথা শিখাচ্ছেন! আবার তিনিই জিহাদের কথা ও কৌশল শিখাচ্ছেন গুরুত্বের সঙ্গে। কীভাবে বন্ধুত্ব করতে হয় শিখাচ্ছেন, প্রয়োজনে কীভাবে বন্ধুত্ব বিনাশ করতে হয় তাও বলে দিচ্ছেন। কীভাবে শত্রু চিনতে হয়, কীভাবে শত্রুকে বুঝতে হয় তাও বলছেন নির্দ্বিধায়।

জীবন বাস্তবতার প্রিয় প্রসঙ্গ বিয়ে। জীবন সেখানে মজাময় মজাদার। জীবনের বাস্তবরূপ যেখান থেকে শুরু। বিয়ে হলো জীবনকে ভোগ করা ভয় করা আয়েশ করা। জীবন থেকে নিরাশ হওয়ায় পথকে বাতলে দেয় এই বিয়ে। এই প্রসঙ্গেও আমাদের লালিত বিশ্বাসের পরম ধন ইসলাম দিয়েছেন নিদের্শনা।

বিয়ের হাজারো পর্বের অন্যতম একটি পর্ব ‘বাসর রাত’। প্রতিটি নারী ও পুরুষের আশার রাত, আকাক্সক্ষার রাত, মধুর রাত মাধুরির রাত। সেই বাসর রাত সম্পর্কেও আমাদের ইসলাম উপস্থিত হয়েছে অভিভাবক হিসেবে। ওই রাতের প্রোগ্রাম কী হবে! কীভাবে কী করতে হবে! বলে দিয়েছে। এটাইতো জীবন ব্যবস্থা যেখানে মানুষের সর্বহালতের সবিস্তারিত বিবরণ থাকে।

বিয়ের সকল কাজ সমাধান করে যখন বর কণে এক চৌকিতে বসে রাত তখন অনেকটা নীরব। বাড়ীর মানুষগুলো ঘুমের আয়োজনে ব্যস্ত। পাড়াপড়শি সবাই ঘুমিয়ে পড়ছে। ইসলাম সেই সময়টা আপনাকে সঙ্গ দেবে সন্তোর্পণে। প্রথম ইসলাম তার চিরাচরিত নামাজের আদেশ দিয়েছে স্বামী স্ত্রীকে।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘বাসত রাতে স্ত্রী যখন স্বামীর কাছে যাবে স্বামী তখন দাঁড়িয়ে যাবে, আর স্ত্রীও তার পিছনে দাঁড়িয়ে যাবে। অতপর তারা একসঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে।’

হাদিস থেকে বুঝলাম, সবার আগে দুই রাকাত নামাজ আদায় করো। দুই রাকাত নামাজ যেকোনো সূরা দিয়ে হতে পারে। তবে যারা পারে তারা যেন সূরা ইয়াসিন দ্বারা দুই রাকাত নামাজ আদায় করে। নামাজের পর নিন্মোক্ত দোয়াটি পড়ুন। আপনার স্ত্রীর কপালে হাতে রেখে এই দোয়া পাঠ করুন,

اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ

‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা আলাইহি ওয়াউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শারির মা জাবালতাহা আলাইহি।’

অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট তার মঙ্গল চাই এবং তার সেই কল্যাণময় স্বভাব প্রার্থনা করি, যার ওপর তুমি তাকে সৃষ্টি করেছো। আর আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই তার অনিষ্ট হতে এবং সেই মন্দ স্বভাবের অনিষ্ট থেকে যা দিয়ে তুমি তাকে সৃষ্টি করেছো।’

এছাড়াও অন্য দোয়াও আছে-

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বা-রিক লি ফি আহলি ওয়া বা-রিক লাহুম ফিইয়্যা, আল্লাহুম্মা জমা বাইনামা মা জামাতা বিখাইরিন ওয়া ফাররিক বাইনামা ইজা ফাররাকত ইলা খাইরিন।’

অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ আপনি আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত দিন আমার আমার ভেতরেও বরকত দিন পরিবারের জন্য। হে আল্লাহ আপনি তাদের থেকে আমাকে রিযক দিন আমার থেকে তাদেরও রিযক দিন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের যতদিন একত্রে রাখেন কল্যাণেই একত্র রাখেন আর যদি বিচ্ছেদ ঘটান তখন কল্যাণের পথেই বিচ্ছেদ ঘটিয়েন।’

এই দোয়ার পর স্বামী স্ত্রী নিজের মধ্যে আলাপ আলোচনা করবে। মোহর বিষয়ে কথা পরিষ্কার করে নিবে। স্বামীকে মোহরানা আদায় করা ফরজ। আর এই ফরজ কাজটি না করে কীভাবে সংসার জীবন শুরু করা যায়? এই বিষয়ে সুরাহা না করে সংসার শুরু করা একটি অন্যায়। সুতরাং মোহরানা আদায় করেই আপনার সংসার যাত্রা শুরু করুন।

তবে সঙ্গে সঙ্গে দিতে হবে! এমন কোনো কথা নেই। পরে দিলে এটাও পরিষ্কার করুন। তবে এই বিষয়ে আলাপ পরিষ্কার রাখুন। কেননা মোহর এমন একটি হক যা স্বামীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগে পাওনা হয় হয় স্ত্রী, তবে স্ত্রী (স্বেচ্ছায় ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে) সময় দিলে বাকি রাখা যাবে। কিন্তু মোহরানার টাকা আবশ্যিকভাবে পরিশোধ করতে হবে।

বিবাহিত স্ত্রীকে অসহায় মনে করে ছলে-বলে-কৌশলে বা অজ্ঞতার সুযোগে মাফ করিয়ে নিলে মাফ না হয়ে তা হবে জুলুম প্রতারণা। এ জুলুম প্রতিরোধকল্পে মহান আল্লাহপাক ঘোষণা করেন,

وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَرِيئًا

‘নারীদের খুশি মনে তাদের মোহর আদায় করো। যদি স্ত্রী নিজের পক্ষ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে মোহরের কিছু অংশ ক্ষমা করে দেয়, তবে তোমরা তা হৃষ্টচিত্তে গ্রহণ করতে পার।’ (সূরা: নিসা, আয়াত: ০৪)।

তারপর আস্তে আস্তে নিজের মধ্যকার আলাপ আলোচনাগুলো সারতে থাকা। কাছে থেকে আরো কাছে আসা। নিজেদেরকে একে অপরকে জানতে ও বুঝতে সহযোগিতা করা। স্বামী-স্ত্রী হওয়ার পর সবকিছুর অনুমতি আছে বিধায় নিষিদ্ধ কাজে জড়িয়ে না পড়া। বাসর রাতে স্ত্রী হায়েজা হলে মিলন থেকে বিরত থাকা। ঋতুবর্তী স্ত্রীর সঙ্গে মিলন করতে হাদিসে গুরুত্বের সঙ্গে নিষেধ করা হয়েছে।

হজরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ঋতুবর্তী নারীর সঙ্গে মিলন করে সে যেন আমার প্রতি যা নাজিল হয়েছে তা অস্বীকার করলো।’ ঋতুবর্তী স্ত্রীর সঙ্গে যতটুকুর অনুমতি আছে ততটুকুই করা। মিলনের আগে দোয়া পড়া। মিলনের পর গোসল করা। গোসলে দেরি হলে কমপক্ষে সঙ্গে সঙ্গে ওজু করা।

আরএম-১২/১৬/০৭ (ধর্ম ডেস্ক)