নবী পরিবারকে জানা এবং মানা কী বলেছে কোরআন

নবী পরিবারকে

মোহাম্মদ (সা.)-এর বংশধরদের শ্রেষ্ঠত্ব কোরআন মজিদে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।

কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা করে আহলাল বাইত-আওলাদে রাসূলের সুমহান মর্যাদা-গুরুত্ব-শ্রেষ্ঠত্ব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হবে কোরআন বলছে- নিশ্চয়ই আল্লাহ্তায়ালা আদম, নূহ, ইবরাহিম ও ইমরানের বংশধরদের সমগ্র সৃষ্টির ওপর মনোনীত করেছেন।

উম্মতে মোহাম্মদের জন্য মোহাম্মদ (সা.) ও তার বংশধর অর্থাৎ আওলাদে রাসূলরা সমগ্র সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠ। শেষ নবী মোহাম্মদ (সা.)-এর জাগতিক ওফাতের পর এ বেলায়েতি জামানায় আওলাদে রাসূলরা সমগ্র সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠ।

সূরা আহযাবের ৩৩ নম্বর আয়াতের শেষাংশের ব্যাখ্যা হে আহলাল বাইত, আল্লাহ তো শুধু তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের পবিত্র বিশুদ্ধ করতে চান। এ আয়াতে দেখা যাচ্ছে, সমগ্র সৃষ্টি কূলের ওপর শ্রেষ্ঠ আহলাল বাইত-আওলাদে রাসূলের পবিত্রতা-বিশুদ্ধতা ঘোষণা করা হয়েছে।

আওলাদে রাসূলরা সব দিক দিয়ে সমগ্র সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ এ মহাসত্যই প্রকাশ পেয়েছে। কোরআন সংশ্লিষ্ট হাদিসে দেখা যাচ্ছে নবী স্ত্রীরা আওলাদে রাসূল নন।

সূরা শুরা (২৩) এ সুসংবাদই আল্লাহ্ মু’মিন ও পুণ্যবান বান্দাহদের প্রদান করেন; আপনি বলুন, আত্মীয়তার সদ্ব্যবহার ছাড়া তোমাদের থেকে আমি আর কিছুই চাই না। আর যে কল্যাণ করে আমি তাতে আরও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে থাকি, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল গুণগ্রাহী। (২৪) তারা কী বলে, সে আল্লাহ্র ওপর মিথ্যা রচনা করেছে? আল্লাহ্ যদি চাইতেন, তবে আপনার মনে মোহর মেরে দিতেন।

আর আল্লাহ্ মিথ্যাকে বিলুপ্ত করেন এবং হক প্রতিষ্ঠা করেন। নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের অন্তরে যা আছে তা সবিশেষ অবহিত। (২৫) আর তিনি বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং গুনাহগুলো মিটিয়ে দেন আর তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জানেন।

সূরা আহ্যাব (৩৬) বলা হয়েছে, কোনো ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারীর এ অধিকার থাকে না যে, আল্লাহ ও তার রাসূল কোনো সিদ্ধান্ত প্রদান করলে সে প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করে, যে অমান্য করে সে প্রকাশ্য ভ্রষ্টতা করল।

সূরা আলে ইমরান ৬১। আয়াতে বলা হয়েছে অতঃপর, আপনার কাছে সঠিক জ্ঞান আসার পর যারা আপনার সঙ্গে ঝগড়া করে, আপনি তাদের বলে দিন, আস আমরা ডাকি আমাদের সন্তানদের ও তোমাদের সন্তানদের, আমাদের মহিলাদের ও তোমাদের মহিলাদের এবং আমাদের নিজেদের ও তোমাদের নিজেদের।

অতঃপর আমরা আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করি, মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহ্র অভিসম্পাত করি।

এই আয়াতে খ্রিস্টান পাদ্রিদের সঙ্গে রাসূল পাকের সত্য-মিথ্যার প্রতিযোগিতার আহ্বান জানানো হয়। রাসূল পাক সমগ্র সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হাসান-হোসাইন-ফাতেমা-হজরত আলী এবং নিজেকে মোবাহেলার ময়দানে উপস্থিত করেন।

সমগ্র সৃষ্টির শ্রেষ্ঠদের ভেতর থেকে নুরে মোহাম্মদির তাজাল্লির বহিঃপ্রকাশ দেখে খ্রিস্টান পাদ্রিরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গিয়েছিল। পাদ্রিরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করে বশ্যতা স্বীকার করে জিজিয়া কর দেবে এ শর্তে মদিনা ত্যাগ করে।

এ ঘটনাটি রাসূল পাকের জাহেরি ওফাতের কিছু দিন আগে ঘটেছিল। প্রধান প্রধান সাহাবিসহ সোয়া লাখ সাহাবি ছিল; কিন্তু সমগ্র সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ না হওয়ার কারণে সাহাবিদের একজনকেও মোবাহেলার ময়দানে সেদিন নেয়া হয়নি।

আল্লাহ ও রাসূলের বিবেচনায় সাহাবিদের আওলাদে রাসূলের সমতুল্য বা সমকক্ষ ভাবা হয়নি; কিন্তু আজকের মুসলমান সাহাবিদের সমগ্র সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ আওলাদে রাসূলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বানাতে তৎপর যা মোটেও ঠিক নয়। আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) বিবেচনা মতে উম্মতে মোহাম্মদকে আওলাদে রাসূলের প্রতি আনুগত্যশীল থাকতে হবে।

সূরা আহ্যাব (৩৬) আয়াতে বলা হয়েছে, কোনো ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারীর এ অধিকার থাকে না যে, আল্লাহ ও তার রাসূল কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে সে প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করে, যে অমান্য করে সে প্রকাশ্য ভ্রষ্ট বলে পরিচিত।

সূরা আলে ইমরানের আয়াত নম্বর ৩৩-এ দেখা যাচ্ছে, ইবরাহিমের বংশধরদের সমগ্র সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। রাসূল পাক ইবরাহিমের বংশধর এবং আওলাদে রাসূলরাও ইবরাহিমের বংশধর। আল্লাহ্ তার করুণায় ইবরাহিমের বংশকে কিতাব ও হিকমত দিয়েছেন আর দিয়েছেন বিশাল সাম্রাজ্য। ইবরাহিমের বংশকে অর্থাৎ আওলাদে রাসূলকে হিংসা করা যাবে না, তাদের প্রতি বিশ্বাসীদের আনুগত্যশীলতা থাকতেই হবে।

সমগ্র সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ আওলাদে রাসূলের প্রতি আনুগত্যশীলতা না থাকাই হচ্ছে কুফুরি। সমগ্র সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ রাসূলপাকের প্রতি ইমান আনা ও আনুগত্যশীলতাই শুধু ইমান নয়, আওলাদে রাসূলের প্রতি আনুগত্যশীলতা থাকাই কুফুরির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার একমাত্র উপায়।

আওলাদে রাসূলের প্রতি যাদের আনুগত্যশীলতা নেই তাদের প্রতি আল্লাহর লা’নত, ফেরেশতাদের ও সমগ্র মানুষের লা’নত। নবী (সা.) কে মানতে হবে ও তার বংশধরদের মানতে হবে। কোরআন মতে নবী এবং নবীর বংশধররা সমগ্র সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠ।

‘যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ় অঙ্গীকারের পর তা ভঙ্গ করে এবং যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আল্লাহর নির্দেশ প্রদান করেছেন তা ছিন্ন করে এবং জমিনে অশান্তি সৃষ্টি করে তারাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত। (২:২৭)’

আল্লাহপাক যাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তাদের সঙ্গেই আমাদের সুসম্পর্ক রাখতে হবে অন্যদের সঙ্গে প্রশ্নই ওঠে না- কোরআন মতেই থাকতে হবে। চালাতে হবে জীবন।

আরএম-০৮/১৭/০৮ (ধর্ম ডেস্ক)