গোনাহমুক্ত থাকতে যে আমলের কথা বলেছেন বিশ্বনবি

গোনাহমুক্ত

গোনাহ বা পাপ করা মানুষের কাজ নয়। গোনাহের প্রতি আহ্বান বা আকৃষ্ট করাও ইসলামের বিধান নয়। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। আর শয়তান মানুষকে ধোকায় ফেলতে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমতা লাভ করেছে। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে শয়তানের ষড়যন্ত্র ও প্রচেষ্টা থেকে বাঁচাতে উন্মুক্ত রেখেছেন তাওবার দরজা।

কেননা আল্লাহ তাআলা মানুষকে গোনাহ করার জন্য সৃষ্টিও করেননি। আল্লাহ তাআলা কুরআনে ঘোষণা করেছেন- ‘আমি মানুষকে আমার ইবাদত ব্যতিত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি।’

তারপরও মানুষ গোনাহ করে। আর শয়তানের প্ররোচনায় গোনাহ করা মানুষের জন্য স্বাভাবিক বিষয়। মানুষ যেহেতু গোনাহ করে তাই গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করাও মানুষের একান্ত করণীয়। এ কারণেই গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে কুরআন-সুন্নায় অসংখ্য দিক নির্দেশনা এসেছে।

মানুষের গোনাহ করা ও গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা প্রসঙ্গে অনেক হাদিস এসেছে। হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে যে, মানুষ যদি গোনাহ না করতো তবে আল্লাহ মানুষের পরিবর্তে অন্য এমন এক জাতি সৃষ্টি করতেন, যারা গোনাহ করতো এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

‘সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন! তোমরা যদি গোনাহ না করতে তাহলে আল্লাহ তোমাদের ধ্বংস করে দিতেন এবং নতুন এমন এক জাতি সৃষ্টি করতেন, যারা গোনাহ করত আবার পরক্ষণেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতো। তার তিনি তাদের ক্ষমা করে দিতেন।’ (মুসলিম)

হাদিসটি মানুষকে গোনাহের প্রতি আকৃষ্ট করা উদ্দেশ্য নয় বরং আল্লাহর দিকে ফিরে আসার কিংবা আল্লাহর পথে থাকার তাগিদেই হাদিসের এ আহ্বান। গোনাহ হোক চাই না হোক যে কোনো কিছুর জন্য বারবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা-প্রার্থনা করা ও ক্ষমা অভ্যাস গঠনই এ হাদিস দ্বারা উদ্দেশ্য।

গোনাহ করার পর দেরি না করে, লজ্জা না করে, সংকোচ না করে, হতাশায় না থেকে, গোনাহ করার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা মুমিনের অন্যতম গুণ। আর গোনাহ না করলেও আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাওয়া।

মনে রাখতে হবে

মুমিন ব্যক্তির কাছে গোনাহ পাহাড়ের মতো বড়। আর পাপির কাছে গোনাহ মাছির মতো ছোট, যা তার নাকের ডগায় বসে উড়ে যায়। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

‘ঈমানদার ব্যক্তি তার গোনাহগুলোকে এত বড় মনে করে, যেন সে একটা পাহাড়ের নিচে বসে আছে, সে আশঙ্কা করতে থাকে যে, কখন যেন পাহাড়টা তার উপর ধ্বসে পড়ে। পক্ষান্তরে যে পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তার গোনাহগুলোকে মাছির মতো মনে করে, যা তার নাকের ওপর দিয়ে চলে যায়।’ (বুখারি)

সুতরাং উল্লেখিত হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, ঈমানদার ব্যক্তি গোনাহকে ভয় করে। গোনাহ হয়ে গেলেই সে দেরি না করেই গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। সে উপায়ও হাদিসে বর্ণনা করেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

মানুষের গোনাহমুক্ত জীবন গঠনের উপায় আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তাওবা করা এবং কান্নাকাটি করা। আর এটি বিশ্বনবির শেখানো আমল। যখনই মানুষ গোনাহ থেকে মুক্তি জন্য তাওবার পাশাপাশি বেশি বেশি কান্নাকাটি করে, তখন তার ক্ষমা পাওয়া সম্ভাবনা বেশি বেড়ে যায়। হাদিসে পাকে এসেছে-

‘হজরত উকবা ইবনু আমির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! মুক্তির উপায় কী? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘তুমি নিজের জিহ্বাকে আয়ত্বে রাখো, নিজ ঘরে পড়ে থাকো এবং আপন গোনাহের জন্য কান্নাকাটি করো।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)

সুতরাং জীবন চলার পথে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে নিজেদের হেফাজত রাখতে এবং গোনাহমুক্ত জীবন গঠন করতে তাওবা ও রোনাজারির বিকল্প নেই।

মুমিন মুসলমানের কোনো গোনাহকেই ছোট মনে করা উচিত নয়। গোনাহের কারণে মানুষ আল্লাহর জিম্মাদারি থেকে বেরিয়ে যায়। তাই গোনাহের কারণে বেশিক্ষণ আল্লাহর জিম্মাদারি থেকে দূরে থাকাও উচিত নয়।

গোনাহ হোক আর না হোক বেশি তাওবা করা এবং আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে গোনাহ মুক্ত থাকার চেষ্টা করাই মুমিনের একমাত্র কাজ।

আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে গোনাহমুক্ত জীবন গঠনের তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত গোনাহ থেকে মুক্ত থাকার আমলগুলো যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আরএম-২৪/১৮/০১ (ধর্ম ডেস্ক)