মহামারি প্রসঙ্গে ইসলামের পরামর্শ ও দোয়া

মহামারি

যে সংক্রামক রোগ দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেক আক্রান্ত করে সেটাই মহামারি। ‘করোনা’ নামের নতুন একটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে ইতোমধ্যে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই রোগের কোনো প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। সচেতনতা ও উপসর্গ অনুযায়ী এই রোগের চিকিৎসা করতে হয়।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তারের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি আল্লাহতায়ালার দরবারে বেশি বেশি দোয়া-মোনাজাত করার পরামর্শ দিয়েছেন ইসলামি চিন্তাবিদরা।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব মুফতি মিজানুর রহমান এ বিষয়ে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বিভিন্ন রোগব্যাধি ও ভাইরাস কিছুদিন পরপর জানান দেয়, মানুষ যত উন্নতি করুক, আল্লাহতায়ালার করুণা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই ছোট-বড় সব ধরনের পাপ থেকে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। কারণ পাপের কারণেই বিভিন্ন আজাব ও মহামারি নেমে আসে বলে হাদিসে রয়েছে। ’

চলমান পরিস্থিতিতে মুসলমানদের বেশি বেশি দান-খয়রাত করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘দানে সব ধরনের বিপদ কমার কথা হাদিসে উল্লেখ আছে।’

জাতীয় মসজিদের ভারপ্রাপ্ত এই খতিব আরও বলেন, ‘মহামারি ছড়িয়ে পড়া কিয়ামতের নিদর্শন। শুধু আক্রান্ত এলাকা নয়, বিশ্বের সব মুসলমানের উচিত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, তওবা করা। অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকা ও সর্বদা পবিত্র-পরিচ্ছন্ন থাকা। কারণ কিয়ামতের নিদর্শনগুলোর একটি হলো- মহামারি। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখো। আমার মৃত্যু, অতঃপর বায়তুল মোকাদ্দাস বিজয়, অতঃপর তোমাদের মধ্যে বকরির পালের মতো মহামারি ছড়িয়ে পড়বে, সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যক্তিকে একশ দিনার দেওয়ার পরও সে অসন্তুষ্ট থাকবে। অতঃপর এমন এক ফিতনা আসবে, যা আরবের প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করবে। অতঃপর যা তোমাদের ও বনি আসফার বা রোমকদের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি সম্পাদিত হবে। অতঃপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং ৮০টি পতাকা উড়িয়ে তোমাদের বিপক্ষে আসবে; প্রতিটি পতাকার নিচে থাকবে ১২ হাজার সৈন্য।’ –সহিহ বোখারি: ৩১৭৬

বায়তুল মোকাররমের এই ইমাম আরও বলেন, ‘মহামারি প্রসঙ্গে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘এটি আল্লাহর গজব বনি ইসরায়েলের এক গোষ্ঠীর ওপর এসেছিল, তার বাকি অংশই হচ্ছে মহামারি। অতএব, কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা ছেড়ে চলে এসো না। আবার কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করে থাকলে, সে জায়গায় গমন করো না।’ -সুনানে তিরমিজি: ১০৬৫

তাই এ ধরনের রোগের প্রকোপ যেখানে দেখা দেবে, সেখানে যাতায়াত না করা উচিত। তাতে দুর্বলচিত্তের মানুষ ঈমানহারা হতে পারে, তবে কারও ঈমান যদি খুব মজবুত থাকে তাহলে সে যাতায়াত করতে পারবে।

মহামারিতে আক্রান্ত মৃত কোনো ব্যক্তিকে পাপী অথবা জাহান্নামি মনে করা যাবে না বলে উল্লেখ করে মুফতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘নবী করিম (সা.) মহামারিতে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে শহীদ গণ্য করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, পাঁচ প্রকার মৃত শহীদ। মহামারিতে মৃত, পেটের পীড়ায় মৃত, পানিতে ডুবে মৃত, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত এবং যে আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করেছে।’ –সহিহ বোখারি: ২৮২৯

হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মহামারির কারণে মারা যাওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত।’ –সহিহ বোখারি: ২৮৩০

আরেক বিখ্যাত আলেম ও ইসলামি বক্তা মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘শুধু করোনা নয় সব ধরনের মহামারি থেকে বাঁচার জন্য দোয়া করতে হবে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিন বার বলবে- ‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মায়াসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামায়ি, ওয়াহুয়াস সামিউল আলিম।’ সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি আকস্মিক কোনো বিপদ আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার বলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর আচমকা কোনো বিপদ আসবে না।’ -সুনানে আবু দাউদ: ৫০৮৮

অর্থ: আল্লাহর নামে, যে নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।’

এ ছাড়া মাওলানা আইয়ুবী اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُوْنِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّءِ الأَسْقَامِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আয়ুজুবিকা মিনাল বারাস, ওয়াল জুনুন, ওয়াল জুযাম, ওয়া সায়্যিইল আসক্বাম’ (অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ধবল, কুষ্ঠ এবং উন্মাদনাসহ সব ধরনের কঠিন দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে পানাহ চাই) দোয়াটি পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। -সুনানে আবু দাউদ

তিনি এই দোয়াটিও পাঠ করার পরামর্শ দিয়েছেন, اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ وَالأَدْوَاءِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাকি ওয়াল আমালি ওয়াল আহওয়ায়ি ওয়ালা আদওয়ায়ি।‘ অর্থ: হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি তোমার নিকট দুশ্চরিত্র, অসৎ কর্ম, কুপ্রবৃত্তি এবং কঠিন রোগসমূহ থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। -সুনানে তিরমিজি

আরএম-২৪/১৮/০৩ (ধর্ম ডেস্ক)