আমল কবুল হওয়ার শর্ত সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা

ইসলামি পরিভাষায় যে কোনো কাজ বা কর্মকে আমল বলে। আর কোনো আমলের গ্রহণযোগ্যতাকে কবুল বা মাকবুল বলা হয়। মানুষের সব আমল বা কর্মগুলো কবুল হবে না। কেননা এ আমলগুলো ভালো-মন্দ দুইভাগে বিভক্ত। ভালো আমলগুলো কবুল হবে আর মন্দ আমলগুলো কবুল হবে না।

মানুষের নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, দান-সাদকা, উত্তম চরিত্র গঠন করা ইত্যাদি ভালো কর্ম বা কাজ হিসেবে পরিচিত। পক্ষান্তরে মানুষের খারাপ বা মন্দ কর্মের মধ্যে রয়েছে সুদ, ঘুষ, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানি, জেনা-ব্যভিচার, বেপর্দা, মদ-জুয়া ও অসৎচারিত্রিক কাজ। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ – وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ

‘অতপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে। এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।’ (সুরা যিলযাল : আয়াত ৭-৮)

মন্দ আমল বা কর্ম সাধারণত সব সময়ই মন্দ এবং পরিহারযোগ্য। আর নেক আমল সব সময় সব স্তর বা ক্ষেত্রেই কবুল বা গ্রহণযোগ্য হওয়ার যোগ্য। তবে মহান আল্লাহ তাআলার কাছে নেক আমল কবুল হওয়ার প্রথম দুইটি শর্ত রয়েছে। আর তাহলো-

– তাওহিদ বা একত্ববাদভিত্তিক আমল। যে আমলে আল্লাহর সঙ্গে কোনো অংশীদারিত্ব স্থাপন করা হয় না।

– সুন্নাহভিত্তিক ইসলামি শরিয়া অনুমোদিত আমল। যা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অনুমোদিত।

মানুষের এসব তাওহিদ ও শরিয়ত সমর্থিত প্রতিটি আমল গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য রয়েছে ইসলামের কিছু দিকনির্দেশনা। যে নির্দেশনা মোতাবেক আমল করলে তা কবুল হয়ে যাবে। আর তাহলো-

– বিশুদ্ধ নিয়ত। অর্থাৎ আমলটি শুধু আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্যই হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন-

إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى

‘কর্মের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে যা সে নিয়ত করবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

– হালাল জীবিকা থেকে খাবার গ্রহণ করা। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ

হে রসূলগণ! পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎকাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ৫১)

– দরূদ পড়া। যে কোনো নেক আমল কবুল বা গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরূদ পড়া অন্যতম একটি শর্ত। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-

إِنَّ الدُّعَاءَ مَوْقُوفٌ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ ، لا يَصْعَدُ مِنْهُ شَيْءٌ حَتَّى تُصَلِّيَ عَلَى نَبِيِّكَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

‘নিশ্চয় বান্দার দোয়া বা আমল আসমান ও জমিনের মাঝ ঝুলানো থাকে যতক্ষণ না বান্দা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠ করবে।’ (তিরমিজি)

– ইখলাসের সঙ্গে নেক আমল করা। বান্দার প্রতিটি নেক আমল মাকবুল হওয়ার জন্য অন্তরে ইখলাস নিয়ে বা একনিষ্ঠতার সঙ্গে ইবাদত করা। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-

وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ

তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে।’ (সুরা বাইয়্যেনাহ : আয়াত ৫)

মানুষ সাধারণত মন্দ কাজ প্রবণ হয়ে থাকে। যার কারণে মানুষ নিজেকে ভালো কাজ থেকে দূরে রাখার পাশাপাশি অসৎ কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। যার ফলশ্রুতিতে একজন মানুষ চির অশান্তির স্থান জাহান্নামের উপযুক্ত হয়ে পড়ে। এর অন্যতম কারণ হলো-

– আখেরাতের জীবনের প্রতি উদাসিনতা।

– আল্লাহর দরবারে জবাবদিহিতার বিষয়ে অসচেতনতা।

– দুনিয়ার প্রতি মোহগ্রস্ত হয়ে পড়া।

– মৃতু্যর কথা বেশি বেশি স্মরণ না করা।

– অতি লোভে পড়ে অতিরিক্ত চাহিদা পূরণে সচেষ্ট থাকা।

এসব কারণেই মানুষ নেক আমল থেকে বিমুখ হয়ে মন্দ আমলের দিকে ধাবিত হয়। যার ফলে পরিবার সমাজ ও দেশ চরম অশান্তিতে নিমজ্জিত হয়। মন্দ এ সব কাজ উত্তরণের অন্যতম উপায় হলো ‘চিরন্তন সত্য মৃতু্য ও আখেরাতের জবাবদিহিতার বিষয়ে নিজেদের সচেতনা বাড়ানো’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা দিয়েছেন-

মহান আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত বনি আদমকে এক কদমও বেহেশতের দিকে এগুতে দেবেন না।

– তোমার হায়াত বা তোমার জীবন কোন পথে ব্যয় করেছো।

– তোমার যৌবন শক্তি কীভাবে ব্যয় করেছো।

– তুমি কোন পথে সম্পদ উপার্জন করেছো।

– উপার্জিত সম্পদ কোন পথে কীভাবে খরচ করেছো।

– তোমাকে যে জ্ঞান দেয়া হয়েছিল বা তুমি যা জানতে তা থেকে তুমি কতটুকু আমল করেছো।

কোনো মানুষই চিরদিন দুনিয়া বেঁচে থাকবে না। অতিতের সব মানুষ যেভাবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব মানুষকে সেভাবেই বিদায় নিতে হবে। কেননা পরকালই মানুষের আসল ঠিকানা।

তাই পরকালের চিরস্থায়ী ঠিকানার জন্য রসদ বা সম্পদ জমা করতে দুনিয়া মন্দ কাজ পরিহার করে ভালো কাজের দিকে মনোযোগ দেয়া জরুরি।

মহান আল্লাহ দুনিয়াকে পরকালের শস্যক্ষেত্র জেনে পরকালের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা লাভের আমলে জীনকে সুন্দর করে সুসজ্জিত করি। আল্লাহ তাআলা কবুল করুন। আমিন।