করোনায় মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামাজ পড়া যাবে কি?

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পুরো বিশ্ব আতঙ্কিত। দেশজুড়ে বড় জমায়েতে যোগদানের ব্যাপারে প্রশাসন থেকেও মাইকিং নিষেধ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মসজিদে জামাআতে উপস্থিত না হয়ে ঘরে নামাজ পড়ার ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা কী?

মসজিদে নামাজের ব্যাপারে ইসলামের দিকনির্দেশনা হলো- মসজিদ থেকে আজানের শব্দ শোনা যায়, এমন সব বাড়ির লোকেরা মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামাজ পড়বে। এ ব্যাপারে জোর তাগিদ রয়েছে। কেউ কেউ জামাআতে উপস্থিত হওয়াকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলেছেন এবং জামাআতে না যাওয়াকে মাকরূহে তাহরিমিও বলেছেন।

কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি কিংবা মারাত্মক অসুস্থতাসহ যথাযথ ওজর থাকলে মসজিদে না গিয়ে বাড়ি-বাসাতেও নামাজ পড়া যাবে। এতে ইসলামে কোনো বাধা নেই বলেও হাদিস থেকে প্রমাণিত।

হজরত নাফি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, প্রচণ্ড এক শীতের রাতে হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘যাজনান’ নামক স্থানে আজান দিলেন। অতপর তিনি ঘোষণা করলেন- صَلُّوا فِي رِحَالِكُمْ

‘সাল্লু ফি রিহালিকুম’ অর্থাৎ তোমরা আবাস স্থলেই নামাজ আদায় করে নাও।’

পরে তিনি আমাদের জানালেন যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরের অবস্থায় বৃষ্টি অথবা তীব্র শীতের রাতে মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে বললেন এবং সাথে সাথে এ কথাও ঘোষণা করতে বললেন যে, তোমরা নিজ বাসস্থলে সালাত আদায় কর।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)

এ হাদিসের ওপর ভিত্তি করেই সৌদি আরবের কাবা শরিফ ও মসজিদে নববি ছাড়া সব মসজিদে আজান হয় কিন্তু জামাআত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব আরব দেশগুলোতেই মসজিদে জামাআত স্থগিত রয়েছে।

সুতরাং প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাসের বর্তমান প্রেক্ষাপটেও মসজিদে না গিয়ে ফরজ নামায বাড়িতে পড়তে ইসলামে কোনো বাধা নেই।

মসজিদে জামাআতে নামাজের ব্যাপারে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলাররাসহ দারুল উলুম দেওবন্দও সতর্কতামূলক বাড়িতে নামাজের ব্যাপারে ফতোয়া দিয়েছেন।

তবে সল্প পরিসরে কীভাবে মসজিদে জামাআত চালু রাখা যায় সে ব্যাপারে তারা মতামত ও দিকনির্দেশনা তুলে ধরেছেন। তবে সার্বিকভাবে পরিস্থিতি বিবেচনায় মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে নামাজ আদায়ে কোনো বাধা নেই।

সমস্যার কারণে নিজ নিজ বাড়িতেও নামাজের অনুমতি রয়েছে। সংক্রামক রোগ-ব্যধির কারণে জনসমাগমে না আসতে সতর্ক করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে এসেছে-

হজরত আমর ইবনু শারিদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, ‘সাকিফ গোত্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে একজন কুষ্ঠ রোগী ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাছে এ মর্মে সংবাদ পাঠালেন যে, আমরা তোমাকে বায়আত করে নিয়েছি। তুমি ফিরে যাও।’ (মুসলিম)

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে বাড়াবাড়ি করে মসজিদে ব্যাপক জনসমাগম মোটেই উচিত নয়, বরং সতর্কতা অবলম্বন করে বাড়িতে নামাজ পড়াই শ্রেয়। আর মসজিদ কর্তৃপক্ষ ছোট পরিসরে স্বল্প সময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে যথাযথ সতর্কতার মাধ্যমে মসজিদে জামাআত চালু রাখবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহসহ পুরো জাতিকে করোনা থেকে হেফাজত করুন। কুরআন-সুন্নাহর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।