যাদের তাওবা’য় আল্লাহ বেশি খুশি হন

তাওবা

গোনাহ বা অন্যায় কাজ থেকে তাওবা করা আবশ্যক কর্তব্য। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দুই ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ (কুদরতিভাবে) হাসেন। তাদের একজন অপরজনকে হত্যা করে, (অথচ) তারা উভয়েই জান্নাতবাসী হবে। একজন এ কারণে জান্নাতবাসী হবে যে সে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা হত্যাকারীর তাওবা কবুল করেছেন। ফলে সেও আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়েছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮২৬)

আলোচ্য হাদিসে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। আল্লাহ তাঁর দুই বান্দাকেই নিজ অনুগ্রহে শামিল করেছেন ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে। অথচ তারা উভয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছিল।

এই দুই ব্যক্তি যে বার্তা দেয় : প্রথম ব্যক্তিকে আল্লাহ দ্বিতীয় ব্যক্তির ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন, তাকে সম্মানিত করেছেন। যারা আল্লাহর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করেন। তারা আল্লাহর সম্মানিত বান্দাদের তৃতীয় স্তরে রয়েছে। নবী-রাসুল ও সিদ্দিকদের পরেই তাদের অবস্থান।

দ্বিতীয় ব্যক্তি একজন খুনি হওয়ার পরও আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়ে বান্দাদের তিনি তাঁর অনুগ্রহের প্রতি আশান্বিত করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি বলুন! হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছ আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাবতীয় পাপ ক্ষমা করেন। তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ৫৩)

তাওবা পাপচিহ্ন মুছে দেয়: আলোচ্য হাদিস দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয় যে তাওবা মানুষের অতীতের পাপচিহ্ন মুছে দেয় এবং তার জন্য সম্মান ও মর্যাদার পথ খুলে দেয়। যেমন—আল্লাহ দ্বিতীয় ব্যক্তির জীবন থেকে কুফরির চিহ্ন মিটিয়ে দিয়ে তাকে জান্নাতের পথে পরিচালিত করেছেন।

যারা তাওবার সৌভাগ্য লাভ করে : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ অবশ্যই সেসব মানুষের তাওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে এবং সত্বর তাওবা করে। এরাই তারা, যাদের তাওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা আজীবন মন্দ কাজ করে, অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলো; সে বলে, আমি এখন তাওবা করছি। এবং তাদের জন্যও নয়, যাদের মৃত্যু হয় কাফির অবস্থায়। এরা তারাই, যাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তির ব্যবস্থা।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৭-১৮)

আল্লাহর হাসি দ্বারা উদ্দেশ্য : ইমাম নববী (রহ.) আলোচ্য হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, হাদিসে ‘আল্লাহ হাসেন’ দ্বারা রূপকার্থ উদ্দেশ্য। আমাদের মাঝে হাসির প্রচলিত অর্থ আল্লাহর জন্য প্রয়োগ করা বৈধ নয়। কেননা তার জন্য দেহাবয়বের প্রয়োজন হয় আর আল্লাহ তা থেকে মুক্ত। বরং এর অর্থ হবে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, খুশি হন, ভালোবাসেন। (শরহুন নাবাবি লিল-মুসলিম)

তবে কোনো হাদিসবিশারদ বলেন, আল্লাহ হাসেন, তবে তাঁর হাসি আমাদের মতো না, এমনকি কোনো সৃষ্টির মতো না। তাঁর অন্য সব গুণের মতো তাঁর হাসিও অনন্য ও অতুলনীয়। কেননা আল্লাহর সত্তার সঙ্গে যেমন কারো সামঞ্জস্য নেই, তেমনি তাঁর কোনো গুণের ক্ষেত্রেও সামঞ্জস্য নেই। আল্লাহ সবাইকে ক্ষমা করুন। আমিন।