অভাবে ধৈর্য ও তাড়া থেকে মুক্তির আমল

ধৈর্য

করোনায় পৃথিবীর অর্থনৈতিক চাকা স্থবির হয়ে গেছে। দারিদ্র্য ও মধ্যবিত্ত মানুষের চেহারায় স্পষ্ট হতাশার ছাপ। চোখের সামনে অমাবস্যার ঘোর অন্ধকার। অনেকেই অভাবের তাড়া খেয়ে অধৈর্য হয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পড়ে। জীবন হলো নদীর মতো কখনো অর্থ জোয়ারে ভাসিয়েছে রঙে। কখনো অভাব-অনটনে ডুবিয়েছে অন্ধকারে অতল গহ্বরে। মুমিনদের জন্য জীবন হলো পরীক্ষা। জীবন নদীর জোয়ার-ভাটা যে পরিস্থিতি আসুক, ধৈর্য সহকারে আল্লাহর ওপর ভরসা করে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। (সুরা তালাক আয়াত :৩)। কিছুসংখ্যক মানুষ অভাব-অনটনে হতাশ হয়ে মহা মূল্যবান ইমানকে অল্প দামে বিক্রি করে। কিন্তু তারা অনুধাবন করে না যে, রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বল, আমার রব যার জন্য ইচ্ছা রিজক প্রশস্ত করেন অথবা সংকুচিত করেন। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।’ (সুরা সাবা আয়াত : ৩৬)।

দেশে লকডাউন, শাটডাউন দিনমজুরের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। মধ্যবিত্তের পরিবার প্রধান হোম কোয়ারেন্টাইনে কেউ আইসোলেশনে কারো কাছে কিছু চাইবে নাকি দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকবেন উভয় সংকটে পতিত হয়ে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অস্থির করে। যখন তাকে বিপদ স্পর্শ করে তখন সে হয়ে পড়ে অতিমাত্রায় উৎকণ্ঠিত। —(সুরা মাআরিজ আয়াত : ১৯-২০)।

তবুও আল্লাহ রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের চাদর সব সময় আমাদের আবৃত করে রাখে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার দয়া না থাকত, (তাহলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যেতে) আর নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তওবা গ্রহণকারী, প্রজ্ঞাময়।—(সুরা নুর আয়াত : ১০)। অভাব থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে চাইতে হবে। আর আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রার্থনা ফিরিয়ে দেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ —(সুরা গাফির আয়াত : ৬০)।

দুনিয়ার মোহ ভুলিয়ে রাখে আল্লাহ তায়ালার স্মরণ। ভুলেও মনের কোণে প্রশ্ন জাগে না, জীবনের উদ্দেশ্য কী? শুধুই ভোগবিলাস? কিন্তু অভাব এলে ভাবনার কোনো সীমা নেই।

জীবন আকাশ মেঘে ঢেকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। মেঘমুক্ত আকাশের দেখা কি মিলবে জীবনে। সুখের মুখ দেখলাম না এই জীবনে। দুনিয়াতে অভাবের তাড়া খেয়ে জীবন অতিষ্ঠ। এই জীবনের কোনো মানে আছে? বিপর্যয়ে আল্লাহকে স্মরণ না করে বরং নিরাশার বাহুডোরে বন্দি হয়ে জীবনকে বিপথে পরিচালিত করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম আয়াত :৭)।

রাত দিন ব্যস্ততায় নাওয়া-খাওয়া, পরিবার, স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয় সম্পর্কের ব্যাপারে উদাসীন, মা-বাবার অসুস্থের সংবাদে দেখতে যাওয়ার ফুরসত নাই। ইবাদতের সময় বিন্দুমাত্র নেই। হজরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স) বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না।’ (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ ও ইবনে মাজাহ)।

অভাব থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালা আমাদের দোয়া শিখিয়েছেন সুরা মায়েদার ১১৪ নম্বর আয়াতে। অর্থ, মারইয়ামের পুত্র ঈসা বলল, ‘হে আল্লাহ, হে আমাদের রব, আসমান থেকে আমাদের প্রতি খাবারপূর্ণ দস্তরখানা নাজিল করুন; এটা আমাদের জন্য ঈদ হবে। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের জন্য। আর আপনার পক্ষ থেকে এক নিদর্শন হবে। আর আমাদেরকে রিজক দান করুন, আপনিই শ্রেষ্ঠ রিজকদাতা’। (সুরা মায়েদা আয়াত :১১৪)। এছাড়া যে সমস্ত কাজগুলো অভাব থেকে মুক্ত করে। আল্লাহভীতি ও সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা, পরিবার, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা, নিজের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়া, এতিম মিসকিনদের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা, আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা, নামাজের জন্য দুনিয়ার সকল ব্যস্ততাকে দূরে রাখা, আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া, তাড়াতাড়ি বিয়ে করা, আল্লাহ তায়ালার কাছে অভাব মুক্তির জন্য দোয়া করা।

অভাবের পরীক্ষায় বহু মানুষের স্বভাব নষ্ট হয়। প্রত্যেক মুমিনের উচিত ধৈর্য মাধ্যমে অপেক্ষা করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।—(সুরা বাকারা আয়াত :১৫৫)। করোনাকালের এই কঠিন পরীক্ষায় আল্লাহ তায়ালা আমাদের ধৈর্য সহকারে জীবনযাপন করার শক্তি দিন। অভাবমুক্ত ও হালাল উপার্জনের মাধ্যমে রিচিক বৃদ্ধি করে দিন।