রোগ-ব্যাধিও গুনাহ মাফের উপায়

রোগ

আল্লাহ তায়ালা মানুষের ইহকাল ও পরকালের কল্যাণের জন্য কখনো সুখ-শান্তি, দুঃখ-কষ্ট, রোগ-শোক পালাক্রমে ঢেলে দেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আর ভালো ও মন্দ দ্বারা আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমাদের ফিরে আসতে হবে।’ (সুরা আম্বিয়া আয়াত :৩৫)।

রোগ-শোকের দিনে; মানুষ বিচলিত হয়ে পড়ে। নড়বড়ে ইমানের মানুষেরা আবোলতাবোল আওড়াতে থাকে। তারা জানে না, রোগ-শোকেও মুমিনের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। স্বভাবতই মানুষ দুর্বল চিত্তের, অল্প রোগেই কাতর হয়ে পড়ে। মৃত্যুর কথা স্মরণে আসে। আর অসহায় ও হতাশায় ভেঙে পড়ে। রসুল (স) একদা আয়েশার (রা) কাছে গেলেন। দেখলেন আয়েশা কপালে একটি জলপট্টি দিয়ে আছেন এবং ব্যথার প্রকোপে কাঁপছেন। রসুল (স) জিগ্যেস করেন, ‘কী হয়েছে তোমার আয়েশা?’ তিনি বলেন, ‘জ্বর হয়েছে। আল্লাহ দ্রুত আরোগ্য দান করুন।’ রসুল (স) বলেন, ‘জ্বরকে মন্দ বোলো না। এটি বনি আদমের গুনাহকে এভাবে দূর করে দেয়, যেভাবে আগুন শুকনো লাকড়িকে জ্বালিয়ে শেষ করে দেয়।’ (মুসলিম, হাদিস :২৫৭৫)।

জ্ঞানের দৈন্যের কারণে গুনাহ মাফের অপার সুযোগ হাত ছাড়া হয় এবং আল্লাহর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে; গুনাহর কাজ করে। আল্লাহ সামান্য রোগের মাধ্যমে বান্দাকে পরীক্ষা করেন, বিনিময়ে বান্দাকে মরীচিকামুক্ত চকচকে নিখুঁত ছুরির মতো জান্নাতি উপযোগী বান্দা তৈরি করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জানমাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা আয়াত :১৫৫)। রসুল (স) বলেন, ‘কোনো মুসলিম যখন কোনো কষ্টের মুখোমুখি হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহসমূহ এমনভাবে ঝেড়ে ফেলে দেন, যেমন গাছের পাতাগুলো ঝরে পড়ে যায়।’ (বুখারি :৫৬৪৭)।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, রোগ-ব্যাধি আবার নেয়ামত হয় কীভাবে? রোগ-ব্যাধি কতটা কল্যাণকর একটু ইঙ্গিত দিলেই বুঝতে সহজ হবে। অর্থবিত্তের দম্ভ, পদমর্যাদার অহংকার, যৌবনের তীব্রতায় মৃত্যু ও পরকালের কথা ভুলে যায়। অসুস্থতার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের ফিরে আসার সুযোগ করে দেয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যখন মানুষকে বিপদ স্পর্শ করে, তখন সে শুয়ে, বসে বা দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকে। অতঃপর আমি যখন তার বিপদ দূর করে দিই, তখন সে এমনভাবে চলতে থাকে, মনে হয় যেন তাকে কোনো বিপদ স্পর্শ করার কারণে সে আমাকে ডাকেনি।’ (সুরা ইউনুস আয়াত :১২)।

বহু মানুষ আছে, যারা অধৈর্য হয়ে; আল্লাহর কাছে মৃত্যু কামনা করে। আল্লাহর উত্তম পরিকল্পনাকে জুলুম মনে করে। আর মুমিন বান্দারা অসুস্থ হলে ধৈর্য সহকারে জীবনযাপন করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তবে যারা সবর করেছে এবং সত্কর্ম করেছে, তাদের জন্যই রয়েছে ক্ষমা ও মহা প্রতিদান।’ (সুরা হুদ আয়াত :১১)। মুমিন বান্দারা জানে, আল্লাহ প্রিয় বান্দাদের দুনিয়াতে সামান্য দুঃখ-কষ্ট, রোগ-ব্যাধির মাধ্যমে গুনাহগুলো থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়। নবি (স) বলেন, মুসলমান কোনো যাতনা, রোগ-কর্ম, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, নির্যাতন ও শোকের শিকার হলে, এমনকি তার দেহে কাঁটাবিদ্ধ হলেও এর বদলে আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহ মাফ করে দেন (বুখারি)।

বাহ্যিক দৃষ্টিতে জাকাত অর্থের অপচয় মনে হলেও আল্লাহ তায়ালা জাকাতের মাধ্যমেই অর্থ পবিত্র করার নির্দেশ দেন। একইভাবে অসুস্থতা বেদনাদায়ক হলেও আল্লাহ তায়ালা বান্দার দেহকে অসুস্থতার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করেন। অন্তরের অহমিকা দূর করে দেন এবং আল্লাহর পথে ফিরে আসার উপলব্ধি অন্তরে জাগ্রত হয়। তাই সবার উচিত; আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর অবিচল থাকা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় কষ্টের সঙ্গেই রয়েছে সুখ।’ (সুরা ইনশিরাহ আয়াত :৬)।

পৃথিবীতে করোনার বিষাক্ত হাওয়া বইছে। আতঙ্কে মানুষ গুটিশুটি মেরে বসে আছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো বিপদই আপতিত হয় না।’ (সুরা তাগাবুন আয়াত :১২)। কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে কেউ কেউ অস্থির, হতাশার বাহুবাঁধনে বন্দি হয়ে আত্মহত্যা করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর কেবল আল্লাহর ওপরই মুমিনদের তাওয়াক্কুল করা উচিত।’ (সুরা ইব্রাহিম আয়াত :১১)। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে এমন বোঝা চাপিয়ে দেন না, যা সে বহন করতে পারবে না। হে আল্লাহ, আমাদের ধৈর্য ও গুনাহ মাফের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফিক দান করুন।