দু’বছরেও শুরু হয়নি সাংবাদিক শিমুল হত্যার বিচার

দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার দুই বছরেও শুরু হয়নি বিচার। এখন পর্যন্ত আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জও গঠন হয়নি। দফায় দফায় পরিবর্তিত হচ্ছে অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ। এরইমধ্যে প্রধান আসামি জামিনে বের হলে বিচারহীনতার শঙ্কায় রয়েছে নিহতের পরিবার।

২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুরে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল।

এ হত্যাকাণ্ডের পরপরই প্রধান আসামি পৌরসভার মেয়র (সাময়িক বহিষ্কৃত) হালিমুল হক মীরুসহ অন্যান্য অধিকাংশ আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। পরে মামলাটি শাহজাদপুর আমলি আদালত থেকে জেলা জজ আদালতে স্থানান্তরিত হয়। এরপর এটি অতিরিক্ত জেলা জজ (দ্বিতীয়) আদালতে স্থানান্তর করা হয়।

দীর্ঘদিন ধরে নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্বজন এবং স্থানীয় সংবাদকর্মীরা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিতে জোর দাবি জানিয়ে আসলেও এখনও সে দাবি পূরণ হয়নি।

সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতের সরকারি সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট শামসুল হক বলেন, কারাগারে থাকা মামলার প্রধান আসামি মীরু অসুস্থতার কথা বলে বিগত তারিখে আদালতে হাজির না হওয়ায় চার্জ গঠনের শুনানি হয়নি। বার বার পিছিয়েছে চার্জ গঠনের শুনানির তারিখ। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।

নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম বলেন, গত দুই বছরেও আমার স্বামী হত্যার বিচার না হওয়ায় উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছি। মামলার প্রধান আসামি শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র হালিমুল হক মীরু দুই বছর ধরে কারাগারে থাকলেও তার ভাই হাবিবুল হক মিন্টুসহ চার্জশিটভুক্ত বাকি ৩৭ আসামি জামিনে মুক্ত আছেন। মীরুকেও জামিনে মুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। প্রধান আসামি মীরু জামিনে মুক্ত হলে আমরা হয়ত আর বিচারই পাব না।

তবে মেয়র মীরুর ছোট ভাই হাবিবুল হক পিন্টুসহ আসামি পক্ষের দাবি, সাংবাদিক শিমুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটিকে পরিকল্পিতভাবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দুই বছর ধরে কারাবন্দী রয়েছেন ‘নির্দোষ’ মেয়র হালিমুল হক মীরু।

হাবিবুল হক পিন্টু বলেন, মেয়রের বাড়িতে হামলা ও সংঘর্ষের সময় সাংবাদিক শিমুল গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি আমাদের পক্ষেরও চারজন গুলিবিদ্ধসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন। সুষ্ঠু তদন্তে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কারা হামলা করেছে, কাদের গুলিতে শিমুলসহ আমাদের চারজন গুলিবিদ্ধ হলো সে রহস্য উদঘাটন হবে।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি বিমল কুণ্ডু বলেন, সংবাদকর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা গত বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্য সুপারিশ করেন। কিন্তু আজও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি আসেনি। অবিলম্বে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে বিচার কার্যক্রম শুরুর দাবি জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে মেয়র হালিমুল হক মীরুর বাড়ির সামনে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক শিমুল। পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম বাদী হয়ে মেয়র হালিমুল হক মীরু, তার ভাই হাবিবুল হক মিন্টুসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২২ জনের বিরুদ্ধে শাহজাদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।

তদন্ত শেষে ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৭ সালের ২ মে শাহজাদপুর আমলি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। তবে দেড় বছরেও অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়নি।

বিএ-১৭/০৩-০২ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)