চীনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হুরুন গ্লোবাল এর তালিকা অনুযায়ী পৃথিবীর ধনী ব্যক্তিদের একজন হলেও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমানের নিজস্ব কোনো বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট নেই। নেই কোনো আসবাবপত্র ও বৈদেশিক মুদ্রা।
শুধু তাই নয় নিজের, স্ত্রীর বা নির্ভরশীলদের কারোরই বাড়ি-আসবাবপত্র নেই। এমনকি ব্যক্তিগত গাড়িও নেই কারো। নিজের নামে যানবাহন থাকার কথা বললেও স্ত্রী কিংবা নির্ভরশীলদের কোনো যানবাহন নেই। এমনকি তিনি ঋণ খেলাপী তো দূরের কথা ব্যাংক থেকে কোনো ঋণই গ্রহণ করেননি। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর হলফনামায় তিনি এমনটাই উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা প্রতীকের সম্ভাব্য এ প্রার্থী হলফনামায় নিজের নাম উল্লেখ করেছেন-সালমান ফজলুর রহমান, বাবা ফজলুর রহমান, মা সৈয়দা ফাতিনা রহমান। স্থায়ী ঠিকান-বেথুয়া, মুকসুদপুর, দোহার, ঢাকা। সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১ আসনের প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন গত ২৭ নভেম্বর।
বর্তমানে তার নামে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই। অতীতের মামলার তথ্য হলফনামায় উল্লেখ না করলেও পৃথকভাবে সংযুক্তি করেছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতায় তিনি নিজেকে স্নাতক পাস উল্লেখ করেছে। পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তিনি ঢাকার ধানমন্ডির বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান।
সালমান এফ রহমানের তার বার্ষিক মোট আয় ৯ কোটি ৩৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬২৮ টাকা দেখিয়েছেন। এর মধ্যে বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট বা দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে আয় দেখানো হয় ৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। যদিও ‘নিজ নামে, স্ত্রীর নামে, নির্ভারশীলদের নামে, যৌথমালিকানায় তার কেনো বাড়ি বা এপার্টমেন্ট এবং আসবাবপত্র নেই’ বলেও উল্লেখ করেছেন।
বলেছেন-‘আমি একক বা যৌথভাবে আমার ওপর র্নিভরশীল কোনো সদস্য অথবা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর বা ডিরেক্টর হওয়ার সুবাদে আমি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করি নাই।’
তবে নিজের নামে ৮৩ কোটি ৭৯ লাখ ৫৩ হাজার ৪১০ টাকার দায় দেনা আছে। আর স্ত্রীর নামে ১৩ কোটি ৫লাখ ২৭ হাজার টাকা দায়-দেনা আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
অস্থাবর সম্পদ হিসেবে তিনি বলেছেন, তার কোনো কৃষি জমি নেই। নিজ নামে ২ কোটি ৩ লাখ ১২ হাজার ৬৮৭ টাকার এবং স্ত্রীর নামে ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৩ হাজার ৭০৮ টাকার অকৃষি জমি আছে।
৮ লাখ ৫৩ হাজার ১৭৯ টাকার আবাসিক/বাণিজ্যিক দালান আছে নিজ নামে। স্ত্রীর নামে নেই। তবে স্ত্রীর নামে ২৫ কোটি ১৯ লাখ ৭১ হাজার ৮৪৯ টাকার বিল্ডিং কন্সট্রাকশন আছে।
স্থাবর সম্পত্তির বর্ণনায় তিনি বলছেন- নিজের কাছে নগদ ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আছে। আর স্ত্রী কাছের নগদ আছে ৬০ হাজার টাকা। নিজের কাছে, স্ত্রীর কাছে কিংবা নির্ভরশীল কারো কাছেই বৈদেশিক মুদ্রা নেই। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার ১২৮ টাকা নিজ নামে এবং স্ত্রীর নামে ৪৫ লাখ ৫১ হাজার ১০৯ টাকা জমা আছে। স্ত্রীর নামে না থাকলেও নিজের নামে বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার আছে ২৫০ কোটি ৮৪ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৬ টাকার। নিজের নামে বাস, ট্রাক, মোটর গাড়ি, লঞ্চ, স্টিমার, বিমান ও মোটরসাইকেল ইত্যাদি আছে ৩৪ লাখ টাকার। স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর নির্মিত অলংকারাদি তার নিজের নামে আছে ১৫ লাখ ৫ হাজার টাকার আর স্ত্রীর নামে আছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার।
সালমান এফ রহমান বার্ষিক আয় হিসেবে ব্যবসা থেকে ৬ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। এছাড়া শেয়ার/সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত ডিভিডেন্ট থেকে ৪ কোটি ২৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭৭৮ টাকা, চাকরি (সম্মানী ভাতা) থেকে ৪১ লাখ ৯২ হাজার ২০০ টাকা, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানির বোনাস শেয়ার ও আইএফআইসি ব্যাংকের বোনাস শেয়ার বাবদ ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫০ টাকা আয় দেখিয়েছেন। তিনি ও তার স্ত্রী কোনো রকম সুদ ছাড়াই আত্মীয়-স্বজন ও বিভিন্ন কোম্পানিকে ৩৩ কোটি ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা ঋণ দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন।
সালমান এফ রহমান ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার কাছে হেরেছেন। ২০০৬ সালে এক-এগার সরকারের সময় গ্রেফতার হন সালমান এফ রহমান। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০০৯ সালে তিনি ছাড়া পান।
এসএইচ-১৬/০১/১২ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : পূর্বপশ্চিম)