খালেদা জিয়ার ভোট করা হচ্ছে না

রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিলে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছিলেন খালেদা জিয়া; এতে তার ভোটে অংশ নেওয়ার পথ ‍খুলবে বলে আশায় ছিলেন বিএনপি নেতারা।

কিন্তু সেই আপিলও নাকচ হয়ে গেছে শনিবার, ফলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকল না কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসনের।

অবশ্য ইসির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার পথ খোলা রয়েছে খালেদা জিয়ার। কিন্তু দুই বছরের বেশি সাজায় দণ্ডিতদের নির্বাচন করার পথ যে বন্ধ, তা ইতোমধ্যে আদালতেরই আদেশে এসেছে।

তিন যুগ আগে খালেদা জিয়া দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম তাকে ছাড়াই জাতীয় নির্বাচন করতে হচ্ছে বিএনপিকে। এই অবস্থাকে ‘দুর্দিন’ হিসেবে দেখছেন দলটির নেতারা।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজার রায়ের পর গত ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন ৭২ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। এর মধ্যে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায়ও তার সাজার রায়ও হয়।

তখন থেকে বিএনপির আইনজীবীরা বলে আসছিলেন, বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন খালেদা।

কিন্তু সম্প্রতি বিএনপির কয়েকজন নেতার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের এই আদেশে দণ্ডিতদের নির্বাচন অংশ নেওয়া আটকে যায়।

হাই কোর্টের আদেশে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপিলে ওই দণ্ড বাতিল বা স্থগিত হয়।

তার মধ্যে হাই কোর্টের আরেকটি বেঞ্চ ভিন্ন আদেশ দিলেও আপিল বিভাগে গিয়ে তা আটকে গেলে দণ্ডিতদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ আর খোলেনি।

এর মধ্যে খালেদা জিয়ার পক্ষে ফেনী-১ এবং বগুড়া-৬ ও ৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু গত ২ ডিসেম্বর বাছাইয়ের সময় দণ্ডের কারণ দেখিয়ে তা বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই তিনটি আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন খালেদা; তার আগে ১৯৯১ সাল থেকে পরের তিনটি নির্বাচনে পাঁচটি আসনে ভোট করে সবগুলোতে জয়ী হয়ে আসছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

রিটার্নিং কর্মকর্তারা এবার মনোনয়নপত্র বাতিল করলে বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, ভোটের দায়িত্বে আসা সরকারি ওই কর্মকর্তারা ‘সরকারের ইঙ্গিতেই’ ওই পদক্ষেপ নিয়েছেন।

ইসিতে আপিলে ‘ন্যায়বিচারে’ দলীয় চেয়ারপারসন প্রার্থিতা ফিরে পাবেন বলে শনিবার দুপুরেও এক সংবাদ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করেছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তার মধ্যেই নির্বাচন ভবনে সিইসি কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন আপিল কর্তৃপক্ষ খালেদার আবেদনের শুনানি নেয়। এতে খালেদার পক্ষে ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী।

শুনানির সময় সিইসি নূরুল হুদা খালেদার আইনজীবীকে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য তুলে ধরতে বলেন। নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলামও বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় জানতে চান আইনজীবীর কাছে।

শুনানি শেষে ইসি খালেদার বিষয়ে সিদ্ধান্ত বিকালে দেবে বলে জানায়।

এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল ইসিতে গিয়ে জানিয়ে আসে, কোনো চাপের মুখে যেন সাংবিধানিক সংস্থাটি নতি স্বীকার না করে। এরপর সন্ধ্যায় ইসি সিদ্ধান্ত জানায় যে খালেদা জিয়া ভোট করতে পারছেন না।

এসএইচ-০৯/০৮/১২ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বিডিনিউজ)