মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীদের সামলাতে কৌশলী হয়েছে দলগুলো

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মত বড় দলগুলোর অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাই চূড়ান্তভাবে দল থেকে মনোনয়ন পাননি।

মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আবার অনেকে অন্য দলের প্রতীকে নির্বচন করছেন। রাজনৈতিক দলগুলো এই মনোনয়ন বঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থীদের সামাল দিতে কী কৌশল অবলম্বন করছে?

আওয়ামী লীগ
এবারের নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে প্রত্যাশিত মনোনয়ন না পেয়ে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করে দলের প্রায় ৮০ জন নেতা।

দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রার্থিতার আবেদন দাখিল করা প্রার্থীদের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

যাচাই-বাছাই শেষে এই বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেকের মনোনয়ন পত্র বাতিল হয়ে গেলেও বাকিদের মনোনয়ন বৈধতা পায়।

তবে নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোনো নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করবে না বলে আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ।

“আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সব নেতাই যোগ্য, তাদের অনেকেই নিজ নিজ এলাকায় জনপ্রিয়। কিন্তু সবাইকে তোর আর মনোনয়ন দেয়া সম্ভব নয়”, বলেন হানিফ।

হানিফ বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাথে দলের পক্ষ থেকে কথা বলা হয়েছে। তাদের সবাই আজকের মধ্যেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন বলে মনে করেন তিনি।

তিনি জানান, বিদ্রোহী প্রার্থীরা যেন তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন এবং দলের মনোনীত প্রার্থীর জন্য কাজ করেন সেই লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে খোলা চিঠি দেয়া হয়েছে।

“সভানেত্রী তাঁর চিঠিতে মনোনয়ন বঞ্চিতদের প্রতি সহানুভূতি ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এর ফলে মনোনয়ন বঞ্চিতদের অনেকের অসন্তোষ প্রশমিত হয়েছে এবং তারা সবাই আজকের মধ্যেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন বলে আমার বিশ্বাস।”

হানিফ জানান, এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও জোটের ২৪ জনের মত বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রার্থিতা এখন পর্যন্ত বহাল রয়েছে।

বিএনপি
বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় শনিবার দলটির গুলশান ও পল্টন কার্যালয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন মনোনয়ন বঞ্চিত কয়েকজন নেতার সমর্থকরা।

বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় এবং পল্টন কার্যালয় বন্ধ করে দেয়।

বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে আজও মনোনয়ন বঞ্চিতদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

এবারের নির্বাচনে দলগত কৌশল হিসেবে অনেক আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয় বিএনপির পক্ষ থেকে।

বিভিন্ন কারণে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রার্থিতার আবেদন বাতিল করা হতে পারে – এমন আশঙ্কায় আসনগুলোতে একাধিক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয় দলের পক্ষ থেকে।

তবে শেষ পর্যন্ত দলের চূড়ান্ত মনোনয়নের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হলে বিক্ষোভ প্রকাশ করে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত অনেক নেতার সমর্থকরা।

বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন, দলের শীর্ষ দু’জন নেতার অনুপস্থিতিতে দলের মধ্যে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দূর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন। প্রায় দশ বছর ধরে দেশের বাইরে রয়েছেন দলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমান।

তাই স্বাভাবিকভাবেই, শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছানো বার্তা যতটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে, কারাগারে থাকায় খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে বার্তা পৌঁছানো এবং তার কার্যকারিতা নিশ্চিত করা ততটা সহজভাবে নির্বাহ করা সম্ভব নয়।

জাতীয় পার্টি
বিএনপি আর আওয়ামী লীগের মত জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিতদের মধ্যেও অসন্তোষ রয়েছে।

দল থেকে প্রত্যাশিত মনোনয়ন না পাওয়ায় দলের কয়েকজন নেতা পদত্যাগ করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন অনেকে।

মনোনয়ন বঞ্চিত জাতীয় পার্টি নেতার ভিন্ন দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের সাথে আসন নিয়ে দরকষাকষির সময় জাতীয় পার্টিতে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে দলীয় নেতাদের মধ্য থেকেই।

দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কয়েকজন প্রকাশ্যে এ সংক্রান্ত অভিযোগ আনেন।

বিতর্কের মুখে জাতীয় পার্টি রুহুল আমিন হাওলদারকে দলের মহাসচিবের পদ থেকে অপসারণ করে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে নতুন মহাসচিব ঘোষণা করে।

তবে এর কিছুদিন পরই দলের প্রেসিডেন্ট এরশাদের বিশেষ সহকারী হিসেবে রুহুল আমিন হাওলাদারের নাম ঘোষণা করা হয়।

এসএইচ-০৬/০৯/১২ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বিবিসি)