নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষনা হলেও প্রতিফলন ঘটে না !

দেশে ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহার দিতে শুরু করেছে। শুক্রবার জেনারেল এরশাদের জাতীয় পার্টি তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে অন্যান্য দলগুলোও আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করবে।

কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এসব ইশতেহারকে কতটা গুরুত্ব দেয়?

এ বিষয়ে ঢাকার গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন জানান, নির্বাচনী ইশতেহারে রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দর্শন প্রতিফলিত হওয়ার কথা থাকলেও আমাদের দেশে তেমনটা হয়না।

উন্নত দেশগুলোতে যখন নির্বাচন আসে তখন দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারকে যে গুরুত্ব দেয়া হয়, এখানে সেই প্রবণতা কম দেখা যায়।

এই ইশতেহারের বিভিন্ন ইস্যুকে ঘিরেই বাইরের দেশগুলোকে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতারা মুখোমুখি হয়ে তর্ক-বিতর্ক করে থাকেন।

যার মধ্যে বিস্তারিতভাবে উঠে আসে তাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, বিভিন্ন নীতিমালার ফলাফল কি হতে পারে, তাদের কোন উদ্যোগ সমাজের কোন স্তরকে কিভাবে প্রভাবিত করবে এমন আরও নানা ইস্যু।

কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহার আসলে কতটা গুরুত্ব বহন করে?

আমাদের দেশে নির্বাচনী ইশতেহারকে দুই পক্ষের কেউই খুব একটা গুরুত্বের সাথে দেখে না, সেইসঙ্গে সাধারণ মানুষও ইশতেহারকে তেমন একটা আমলে নেয় না বলে মনে করেন ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, “যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহার বানান তারা কিন্তু প্রায়শই এটা দায়সারাভাবে করে থাকেন। বিশেষ করে অর্থনীতির যে বিষয়গুলো সেগুলোর লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয় না। এছাড়া নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর সেই ইশতেহারের কোন ফলোআপ হয়না।

তারপরও রাজনৈতিক দলগুলো এতো ঢাকঢোল পিটিয়ে ইশতেহার বিলি করে কারণ এটা একটি নির্বাচনী সংস্কৃতি বা বাধ্যবাধকতার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

“অনেকটা কোটা পূরণের মতো আর কি। করতে হবে বলে করা।”

এছাড়া ইশতেহার গুরুত্ব না পাওয়ার পেছনে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ বা গণমাধ্যমের জবাবদিহিতা চাওয়ার অভাবকেও বড় কারণ বলে মনে করেন ফাহমিদা খাতুন।

রাজনৈতিক দলগুলোকে এই ইশতেহার ধরে তারা কোন প্রশ্ন রাখেনা বলেই রাজনীতিকরা সেই সুযোগটা নেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, “অন্য সময় দেখা যায় যে সরকার বা কোন একটা রাজনৈতিক দল কোন নীতি গ্রহণ করলে সেগুলো কিন্তু অনেক ধরণের আলোচনা হয়। সেগুলো নিয়ে মিডিয়াতে লেখালেখি হয়। কিন্তু ইশতেহারটা নিয়ে আমাদের মধ্যে সবার পক্ষ থেকেই অর্থাৎ নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের জবাবদিহিতা চাওয়ার অভাব রয়েছে।”

আগামী কয়েকদিনে যে কয়টি ইশতেহার সামনে আসবে নির্বাচনের সময় এগুলো কাজে লাগলেও এর নির্বাচন পরবর্তী কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

তাঁর মতে, নেতারা যখন ভোট চাইতে যাবেন, তখন ইশতেহার থেকেই অনেক প্রতিশ্রুতি দেবেন।

কিন্তু পরবর্তীতে যে কাজগুলো হয়, সেগুলো ইশতেহারের সঙ্গে মিল রেখে করা হয় কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, “নির্বাচনে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এখনও ইস্যুর ভিত্তিতে দল বিবেচনা করার সংস্কৃতি তৈরি হয়নি।”

“এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও ইস্যু নিয়ে তর্ক বিতর্ক করে নিজেদের প্রমাণ করা বা মানুষের কাছে ইস্যুকে ঘিরে প্রতিশ্রুতি দেয়ার সংস্কৃতি দেখা যায় না।”

তার মতে, সাধারণ জনগণ ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে দলগুলো তাদের শাসনামলে কি ধরণের কাজ করেছে সেটা বিবেচনা করে। এক্ষেত্রে মানুষজন ইশতেহারের দিকে খুব একটা তাকান না।

এসএইচ-০৬/১৫/১২ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বিবিসি)