নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ৩৪ হাজার ৬৭১ জনের আবেদন

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইসিতে নিবন্ধিত ৮১টি দেশি সংস্থার ৩৪ হাজার ৬৭১ জন আবেদন করেছেন। তবে সারাদেশে ২৫ হাজার ৯২০ জন পর্যবেক্ষককে অনুমতি দিতে চাইছে ইসি। আর বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে আবেদন করেছেন ১৬৭ জন।

শনিবার নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত কমিশন বৈঠকে উত্থাপিত সভার কার্যপত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যান্য কমিশনার ছাড়াও নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিতি ছিলেন।

এছাড়া এখন পর্যন্ত ৮ জন বিদেশি সাংবাদিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আবেদন জানিয়েছেন। তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্সটার্নাল পাবলিসিটি উইংয়ের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসির বৈঠকে ৭টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক ছাড়া নির্বাচনের সিগনেচার টিউন, টিভিসি, বিদেশি ও স্থানীয় সাংবাদিক, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের রাজনৈতিক দলের বক্তব্য প্রচার নিয়ে আলোচনা হয়।

স্থানীয় পর্যবেক্ষক : বৈঠকের কার্যপত্র উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ১১৮টি সংস্থার মধ্যে ৮১টি সংস্থা থেকে ৩৪ হাজার ৬৭১ জন পর্যবেক্ষকের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। কোনো কোনো আসনে অধিক সংখ্যক পর্যবেক্ষণের জন্য আবেদন করায় তা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সারাদেশে কেন্দ্রীয়ভাবে ২৫ হাজার ৯২০ জন পর্যবেক্ষকের মোতায়েন পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছে।

৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার মধ্যে ১৪টি পর্যবেক্ষক সংস্থার বিষয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট রয়েছে। এছাড়া একটি রাজনৈতিক দল থেকে চারটি সংস্থার বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে।

বিদেশি পর্যবেক্ষক : ফোরাম অব ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিস অব সাউথ এশিয়া (এফইএমবিওএসএ), এ-ওয়েব, অ্যাসোসিয়েশন অব আফ্রিকান ইলেকশন অর্থরিটিসকে (এএইএ) নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

এদের মধ্যে ভারত, ভূটান এবং মালদ্বীপ থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক টিম পাঠানোর বিষয়ে নিশ্চিত করেছে এবং পর্যবেক্ষক টিমের সদস্যদের নাম পাঠিয়েছে। আন্তর্জাতিক এনজিও নেটওয়ার্ক-এনফ্রেল থেকে ৩২ জন এবং নেপালের বেসরকারি সংস্থা ভিপেন্দ্র ইনিশিয়েটিভ কেন্দ্র থেকে তিনজনের জন্য আবেদন জানিয়েছে।

বাংলাদেশ থাকা ৫২টি কূটনৈতিক মিশন থেকে ১০০ জন বিদেশি এবং লোকাল স্টাফদের বিষয়ে আবেদন জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, বিদেশি সংস্থার লোকাল স্টাফদের স্থানীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে কার্ড দেওয়া হয়।

এছাড়া ৪ বিদেশি সংস্থা ৩২ জনের জন্য আবেদন জানিয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি স্টাফ এবং স্থানীয় স্টাফ রয়েছেন। বিদেশিদের অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে তবে স্থানীয় স্টাফদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।

বিদেশি সাংবাদিক : এ পর্যন্ত ৮ জন বিদেশি সাংবাদিক আবেদন জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্সটার্নাল পাবলিসিটি উইংয়ের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আসতে হবে।

স্থানীয় সাংবাদিক : সাংবাদিকদের বিষয়ে নির্দেশনা কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকার সাংবাদিকদের অনুমোদন ও কার্ড নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে দেওয়া হয়। সকল টেলিভিশন চ্যানেল, যে সব পত্রিকা বা সাপ্তাহিকের নাম পিআইডির মিডিয়া গাইড ও ডেএফপির বিজ্ঞাপন তালিকায় রয়েছে সেই সব পত্রিকার সাংবাদিকদের তথ্যাদি যাচাই-বাছাই করে কার্ড দেওয়া হয়।

অনলাইন পোর্টালের ক্ষেত্রে যেসব অনলাইনের অন্তত একজন সাংবাদিকের পিআইডি কার্ড রয়েছে তাদের কার্ড দেওয়া হয়। পিআইডি থেকে এই তালিকা সংগ্রহ করে তা মিলিয়ে দেখা হয়। তবে গত কয়েক বছর ধরে অনলাইনের কোনো সাংবাদিককে পিআইডি কার্ড দেওয়া হচ্ছে না। এতে অনেক পরিচিত অনলাইন সাংবাদিকদের অনুমোদন দেওয়া হয় না। এতে খুবই সমস্যার সৃষ্টি হয়।

এছাড়া ঢাকার বাইরে অনলাইন থাকলেও তাদের কারো পিআইডি কার্ড দেওয়া হয় না। আসন্ন নির্বাচনে আগের মত একই নীতিমালা অনুসরণ করা হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বেতার ও টেলিভিশনের রাজনৈতিক দলের বক্তব্য প্রচার সকল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলকে তাদের ইশতেহারসহ বক্তব্য প্রচারের সুযোগ দেওয়া হয়।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ বিষয়ে কিরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিটিভি বেতার থেকে পলিসি নির্ধারণ করে বক্তব্য প্রচার করা হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে গত ২ ডিসেম্বর বিটিভি থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচন কমিশন থেকে যেরূপ সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিগনেচার টিউন : নির্বাচনের ১৫ দিন আগে থেকে ভোট গ্রহণের দিন পর্যন্ত প্রচারের জন্য একটি সিগনেচার টিউনসহ কাউন্ট ডাউন তৈরি করা হয়েছে। এটি অনুমোদিত হলে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সকল টিভি চ্যানেলে প্রচারের জন্য পাঠানো হবে। এছাড়া নির্বাচন ভবনের রিসিপশনের এলইডি স্ক্রিন এবং ভবনের সামনে পাঁচতলায় স্থাপিত এলইডি স্ক্রিনে প্রচার করা হবে।

টিভিসি : আচরণবিধি ও তরুণ ভোটার, নারী ভোটার, প্রতিবন্ধী ভোটারদের ভোট দেওয়ার বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে ছয়টি টিভিসি তৈরি করা হয়েছে। এসব টিভিসি অনুমোদিত হলে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সব বেসরকারি টেলিভিশনে জনস্বার্থে প্রচারের জন্য পাঠানো হবে। এছাড়া জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে নির্বাচনী এলাকায় মোবাইল প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রচার করা হবে। সারাদেশে সব ডিস লাইনের মুভি চ্যানেলে প্রচার করা হবে।

একই সঙ্গে নির্বাচন ভবনের এলইডি স্ক্রিন, ফেসবুক, ইউটিউব, ওয়েবসাইটেও প্রচার করা হবে। ইতিমধ্যে ইউএনডিপি প্রকল্প থেকে ছয়টি টিভিসি তৈরি করা হয়েছে, যা বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারিত হচ্ছে।

এসএইচ-৩৩/১৫/১২ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : সারাবাংলা)