পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাব বলছে, নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে একটি চক্র কোটি টাকার লেনদেন করছে। সংস্থাটির মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এজন্যে গত দুই মাসে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়েছে।
নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে টাকা ছড়ানোর অভিযোগে গতকাল ঢাকা থেকে তিনজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এসময় নগদ দশ কোটি টাকা ও আট কোটি টাকার চেকও উদ্ধারের দাবি করছে র্যাব।
তবে এই বিষয়গুলো সামনে আসার পরেও নির্বাচনে এই বিপুল পরিমাণ টাকার ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন?
এ ব্যাপারে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ শাখা – টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যেই নির্বাচনের সময় এই বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়ে থাকে।
তার মতে, “বাংলাদেশে নির্বাচন প্রার্থীদের জন্য একটি উচ্চমানের ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে।”
তিনি বলেন, নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারলে বা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে পারলে, তাদের অর্থ-সম্পদ বিকাশের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয়।
“সেই আকর্ষণ থেকেই এ ধরণের বড় বিনিয়োগের প্রতি তারা ঝুঁকে পড়ছেন। কেননা এ থেকে পরবর্তীতে বড় ধরণের মুনাফা লাভের সুযোগ থাকে,” ইফতেখারুজ্জামান জানান।
কিন্তু প্রার্থীরা নির্বাচনকে যে বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে দেখছে – এ ব্যাপারে ভোটাররা কতোটুকু সচেতন?
এ প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, “ভোটাররা প্রার্থীদের এমন মানসিকতাকে মোটেও ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছে না। তারা যথেষ্ট সচেতন।”
কারণ যে টাকাটা ভোটারদের পেছনে ব্যয় হয় সেটার মোট অর্থের খুবই নগণ্য অংশ।
“অর্থের একটা বড় অংশ মূলত ব্যয় হয় মনোনয়ন সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যে।”
তার চাইতে বড় খরচ হয় প্রচারণা কাজে। বিশেষ করে নেতা, এজেন্ট বা তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা এই প্রচারণাকে ঘিরে ব্যবসা করে থাকেন।
“তাদেরকে হাতে রাখার জন্য অর্থাৎ, মিছিল, মিটিংয়ের মাধ্যমে জন সমর্থন সৃষ্টি বা এলাকায় বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে ভয়ভীতি প্রদর্শন। সবকিছুতেই একটা বড় ধরণের অর্থের বিনিয়োগ হয়,” বলেন মি. ইফতেখারুজ্জামান।
তবে দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো চাইলেই এই বিনিয়োগ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলে জানান ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, “যেটা প্রচারের জন্য ব্যয় হয় সেটা চাইলেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। টিআইবি দেশের একটি দায়িত্ববান সংস্থা হিসেবে সেটাকে পরিমাপ করে, তথ্য প্রকাশ করে।”
কিন্তু তাদের সেইসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন কমিশন কোন পদক্ষেপ নেয়ার মতো সদিচ্ছা দেখাতে পারেনি বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
নির্বাচন কমিশন এই পদক্ষেপ কেন নিতে পারছেনা?
এমন প্রশ্নের উত্তরে ইফতেখারুজ্জামান জানান, নির্বাচন কমিশনের যে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা রয়েছে সেটা দিয়ে কি পরিমাণ আর্থিক লেনদেন হচ্ছে – সেই বিষয়টি শতভাগ পর্যবেক্ষণ বা যাচাই করা সম্ভব নয়।
কিন্তু যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে কারা অর্থ বিতরণ করছে এবং সেটা কী প্রক্রিয়ায় – সেগুলো বের করা সম্ভব।
এ কারণ হিসেবে তিনি জানান যে, দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
তাই চাইলে এই বিষয়গুলো মনিটর করা সম্ভব এবং আইনগতভাবে সেটা করার এখতিয়ারও নির্বাচন কমিশনারের রয়েছে।
“কিন্তু নির্বাচন কমিশন তার সক্ষমতা বা সদিচ্ছার ঘাটতির কারণে এখনও সেদিকটায় পিছিয়ে আছে,” তিনি অভিযোগ করেন।
নির্বাচন কমিশন এবার প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সার্বিক খরচের সীমা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
কিন্তু কোন প্রার্থীই এই খরচ সীমার মধ্যে থাকেন না বলে অভিযোগ করেন ইফতেখারুজ্জামান।
তার মতে, প্রার্থীরা যে হিসাব দেখান প্রকৃতপক্ষে তার চেয়ে অন্তত কয়েকগুণ বেশি শুধুমাত্র প্রচার প্রচারণার ক্ষেত্রেই ব্যয় হয়।
“এর বাইরে মনোনয়ন বাণিজ্য বা অন্যান্য অদৃশ্য আর্থিক লেনদেন অর্থাৎ ইনভিসিবল ট্রানজ্যাকশন পরিমাপ করার মতো কোন পদ্ধতি তাদের নেই।”
তারপরও তারা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যে খরচের হিসাব বের করেন, সেটা সেই বেঁধে দেয়া আর্থিক সীমার চাইতে নূন্যতম কয়েকগুণ বেশি হয় বলে ইফতেখারুজ্জামান অভিযোগ করেন।
এসএইচ-০৬/২৬/১৮ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বিবিসি)