৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এবারের নির্বাচনে প্রচারণার শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনার অভিযোগ পাওয়া যায়।
বিএনপি এবং তাদের নির্বাচনী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সর্বশেষ অভিযোগ করে যে তাদের প্রার্থী বা সমর্থকদের ওপর প্রায় দুইশ সহিংস হামলার অভিযোগ বা উদ্বেগকে নির্বাচন কমিশন গুরুত্বই দেয়নি, কোন ব্যবস্থাও নিতে পারে নি।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বিএনপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা অভিযোগ করছে যে ৫১টি জেলার ৮৮টি আসনে তাদের নেতাকর্মীদের ওপরই হামলা হয়েছে।
এসব ঘটনার কারণে অনেক ভোটারই জানান যে নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চয়তা না পেলে তারা ভোট দিতে যাবেন না।
এই নির্বাচন যেন অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয় সেজন্য দেশের তিনশো নির্বাচনী আসনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা কী হবে, সেবিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
৩০০ টি নির্বাচনী আসনকে মূলত মেট্রোপলিটন এলাকা, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে এবং বিশেষ এলাকা (পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল, হাওড় ইত্যাদি) এই তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
এই প্রত্যেকটি এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলোকে আবার দু্ই ভাগে ভাগ করা হয়েছে: সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ। এলাকাভেদে মোতায়েন করা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা একেক রকম।
একটি নির্বাচনি এলাকার সামগ্রিক নিরাপত্তা এবং ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়োগের দায়িত্বে থাকবেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার।
স্থানীয়ভাবে গুরুত্ব বিবেচনায় পুলিশ কমিশনার বা পুলিশ সুপার রিটার্নিং অফিসারের সাথে পরামর্শ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতা রাখেন।
এবারের নির্বাচনে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে দেশের ৫০০’র বেশি উপজেলায় সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী ও বর্ডার গার্ড সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও রিটার্নিং অফিসারের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে তাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ক্ষেত্রেও কিছু বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
রিটার্নিং অফিসারের সাথে সমন্বয়ের ভিত্তিতে প্রয়োজন অনুসারে উপজেলা বা থানায় নিয়োগ করা হতে পারে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের। রিটার্নিং অফিসার বা প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদার ভিত্তিতে ভোট কেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনা কক্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োগ করা হতে পারে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের।
রিটার্নিং অফিসারের সাথে সমন্বয় করে ঝুঁকির বিবেচনায় প্রতিটি জেলায় হ্রাস/বৃদ্ধি করা হতে পারে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা। যেই ৬টি আসনে ইভিএম’এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে, সেসব আসনের ভোটকেন্দ্রগুলোতে কারিগরী সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে নিয়োজিত থাকা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র বা গোলা-বারুদ বহন করতে পারবেন না।
অধিকাংশ উপজেলায় সেনাবাহিনীর সদস্য বাদে উপকূলীয় জেলাসমূহে নৌবাহিনী এবং সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বর্ডার গার্ডের সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন।
এছাড়া বর্ডার গার্ড, কোস্ট গার্ড, আর্মড পুলিশ এবং আনসার সদস্যরা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
অর্থাৎ রিটার্নিং অফিসারের চাহিদার ভিত্তিতে তারা পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনী সহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবে।
আর কোনো একটি নির্বাচনি এলাকার সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করবে র্যাব। র্যাব একই সাথে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবে।
র্যাবের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনে হেলিকপ্টারও ব্যবহার করতে পারবে।
নির্বাচনি এলাকায় ২৯শে ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ৩০শে ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত যন্ত্রচালিত যানবাহন এবং যন্ত্রচালিত নৌ-যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে নির্বাচনে প্রার্থী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসন ও অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক এবং নির্বাচনি এজেন্টদের জন্য এই নিয়ম কার্যকর হবে না।
জাতীয় হাইওয়েগুলোর ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
এসব বাদেও ভোটারদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি করতে বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত ব্যক্তিদের এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
ভোট কেন্দ্র স্থাপনে ভোটারদের সুবিধাকে প্রাধান্য দেয়া এবং ভোটদানের গোপনীয়তার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
মহিলা ভোটারদের জন্য আগের তুলনায় বেশি মহিলা বুথ স্থাপন করা এবং মহিলা ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণী বা সমমানের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগে অগ্রাধিকার প্রদান করা।
চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সুবিধার্থে যৌথ সভা আয়োজনের মাধ্যমে এলাকার জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা।
এসএইচ-০৫/২৮/১৮ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বিবিসি)