জামায়াতে ইসলামী দলকে বিচারের কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার জন্য দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারের জন্য আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আজ জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে তারা এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া তৈরি করেছেন এবং তা মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার মৃত্যুদন্ড ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে, অন্য কয়েকজন এখনো সাজা খাটছেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, যে আইন এখন আছে তাতে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করা যায় না – এ কথা আগেই বলা হয়েছিল, এবং এ জন্য আইনটি সংশোধন করা হবে।

তিনি বলেন, “আইনটির একটি সংশোধনী আমরা তৈরি করেছি, কিন্তু তা এখনো মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপিত হয় নি। খুব শিগগীরই আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করবো।”

১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন নেতার বিচার এবং মৃত্যুদন্ড সহ বিভিন্ন সাজা হয়েছে। এ জন্য গঠিত বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচারের পর মতিউর রহমান নিজামী,আলি আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা, এবং মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মতো পাঁচজনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জামায়াতে ইসলামী যে যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত ছিল – তা আদালতের তিনটি রায়ে বেরিয়ে এসেছে। তখনই দল হিসেবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তাদের বিচার করার একটা দাবি উঠেছিল।

“দাবি ওঠার সময় দেখা গিয়েছিল যে ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইবুনাল এ্যাক্ট’ আইনটিতে আমাদের দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে – সে আইনে তাদের বিচার করা যায় না। এর কারণ হলো ১৯৭৩ সালে এ আইনটা সংসদ পাস করে, কিন্তু ১৯৭২ সালে আমাদের সংবিধানে ‘ধর্মভিত্তিক কোন রাজনৈতিক দল হতে পারবে না’ – এই কথা লেখা থাকায় জামায়াতে ইসলামী তখন নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।” –  এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

“সেই কারণে, এই তিনটি রায়ের প্রেক্ষিতে জামায়াতে ইসলামীকে যুদ্ধাপরাধ বা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য বিচার করার যে দাবি – তা আইনের আওতায় আনার একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়” – বলেন তিনি।

আইন সংশোধনের খসড়াটি আগেই তৈরি হলেও অনুমোদনের উদ্যোগটা এখন নেয়া হচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সকল সরকারই চায় দ্বিতীয় মেয়াদে তাদের অসম্পূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন করতে।

আইনের খসড়ায় কিভাবে বিচারের কথা আছে? জামায়াতে ইসলামী দলকে, নাকি এ দলের সাথে জড়িত নেতাদেরকে?

জবাবে আনিসুল হক বলেন, “দলকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে, এবং দলের সেই সব কাজের জন্য যারা রেসপন্সিবল তাদেরও দাঁড় করানো হবে।”

এরকম বিচারের কোনো নজির কি আছে?

এ প্রশ্ন করা হলে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমি যতদূর জানি কিছু জায়গায় দলটিকে ব্যান (নিষিদ্ধ) করা হয়েছে, কিন্তু বিচারের কাঠগড়ায় দলকে দাঁড় করানোর নজির বোধ হয় খুঁজতে হবে। আমি সম্পূর্ণটা জানি না।”

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারের মুখোমুখি করার এই উদ্যোগের ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

এসএইচ-০৪/১০/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বিবিসি)