যৌন হয়রানি বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা মানা হচেছ না!

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধে ২০০৯ সালে হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনা কতটা প্রয়োগ হচ্ছে তা নিয়ে এক গবেষণার পর ফলাফলের যে চিত্র উঠে এসেছে তাকে হতাশাজনক বলে মনে করছেন গবেষক-দলের সদস্যরা। ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা অ্যাকশন এইডের উদ্যোগে এই গবেষণা কর্মের ফলাফল আজ ঢাকায় প্রকাশিত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়, কর্পোরেট খাত, মিডিয়া সহ পাঁচটি খাতের ২১টি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী এবং ব্যবস্থাপকদের মধ্যে গবেষণাটি চালানো হয়েছে।

অ্যাকশন এইডের পরামর্শক হিসাবে গবেষণাটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক তাসলিমা ইয়াসমিন।

গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে জানতে চাইলে বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন, “প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০০৯ সালের গাইডলাইন এর প্রয়োগ একবারেই নাই বললে চলে। যেখানে আছে সেখানে সীমিত-ভাবে প্রয়োগ হচ্ছে।”

“আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একেবারেই নাই, এবং শুধু যে নাই তা নয় যাদের সেটা প্রয়োগ করার কথা তারা অনেকে এই গাইডলাইন সম্বন্ধে জানেনই না।”

মিজ ইয়াসমিন বলেন, বর্তমান যে আইনি কাঠামো আছে তাতে যৌন হয়রানি সম্পর্কে কোনও সংজ্ঞা পাওয়া যায়না।

“এই আইনে যৌন হয়রানি বা সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট বলতে আমরা কী বুঝি – তার একটা সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে।”

গবেষক মিজ ইয়াসমিন আরও জানান, এই গাইডলাইনে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর ছিল- এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারা কী কী পদক্ষেপ নিতে পারেন যাতে করে যৌন হয়রানি সম্বন্ধে আরও সচেতনতা সৃষ্টি করা যায়।

তার মতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি ছিল তা হল – প্রত্যেকটি কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে , একটি যৌন হয়রানি বিষয়ক অভিযোগ কমিটি গঠন করতে হবে নীতিমালা অনুসারে।

গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক তাসলিমা ইয়াসমিন জানান, বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে গবেষণায় যারা ছিলেন সেখানে দেখা গেছে গাইডলাইন প্রয়োগ হয়েছে, সে ধরনের একটা কমিটিও করা হয়েছে।

কিন্তু যে পরিমাণ ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা সে তুলনায় অভিযোগের সংখ্যা একদমই সমানুপাতিক না।

“বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সীমিত সংখ্যক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এইধরনের সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট কমপ্লেইন কমিটি আছে। কিন্তু দু-একটি ছাড়া বাকিগুলো একবারেই নন-ফাংশনাল (অকার্যকর),” তিনি বলেন।

কিন্তু কর্মক্ষেত্রে এই চিত্রটি আরও খারাপ বলে জানান এই শিক্ষক।

“কর্মক্ষেত্রে আমরা দেখলাম, রাইট-বেজড এনজিও যারা (মানবাধিকার নিয়ে কর্মরত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান) এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছেন তারা দুয়েকটি ছাড়া সকলেরই ২০০৯ সালের গাইডলাইনের ইমপ্লেমেন্টেশেন নেই।”

“এর কারণ সম্পর্কে আমরা জেনেছি যাদের এই গাইডলাইনটি প্রয়োগ করার কথা তারা কিন্তু এই গাইডলাইনের বিষয়ে জানেনই না।”

“ধরুন একটি গার্মেন্টস যার পাঁচ/দশ হাজার শ্রমিক আছে, তার শীর্ষ ব্যবস্থাপনায় যে বা যারা আছে তারা হয়তো জানেনই না যে এরকম একটি গাইডলাইন আছে।”

এই নীতিমালা বাস্তবায়নের দিক থেকে বিবেচনা করলে পরিস্থিতি সব মিলিয়ে হতাশাজনক বলে তিনি তার মতামত তুলে ধরেন।

এসএইচ-২১/১৭/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বিবিসি)