রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর উপর নজরদারি বাড়ছে

বিদেশে পাঠানোর নামে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার ঘটনা ঠেকাতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর উপর নজরদারি বাড়াবে সরকার৷

বার্তা সংস্থা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ পরিকল্পনার আওতায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিদেশে পাঠানোর জন্য সারা দেশে অবৈধভাবে নিয়োজিত দালালদের একটি তালিকা তৈরি করবে৷ অবৈধ এ দালালদের চিহ্নিত করে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে, যাতে এ সকল দালালের সাথে বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে কোন ধরনের লেনদেন কেউ না করেন৷ কর্তৃপক্ষ আশা করছে এর মাধ্যমে দেশের বাইরে যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের খরচও অনেক কমে আসবে৷

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রওনক জাহান বলেন ‘‘বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে প্রতারণা ঠেকাতে আমরা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে দালালদের একটি তালিকা দিতে বলবো৷” এর ফলে অভিবাসনপ্রত্যাশী শ্রমিকদের প্রতারিত হওয়ার হাত থেকে বাঁচানো ও মানব পাচার রোধে কাজ করা সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি৷

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশের প্রায় ৭৫ লক্ষ লোক বিদেশে বাস করছেন৷ শুধু ২০১৭ সালেই প্রায় এক লক্ষ লোক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দেশের বাইরে পাড়ি জমিয়েছেন৷ তবে বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকেই৷

দালালদের মাধ্যমে দেশের বাইরে যেতে গিয়ে একদিকে যেমন তাঁদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা, অন্যদিকে কাজের পরিবেশেও রয়েছে নিরাপত্তার অভাব৷ রয়টার্সের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালেই বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রায় তিন হাজার আটশ বাংলাদেশি মারা গিয়েছেন৷

এ ধরণের পাচারের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সোচ্চার ছিল দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো৷ অভিবাসি কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের সভাপতি সাকিরুল ইসলাম রয়টার্সকে জানান, ‘‘দেশে প্রায় ১,২০০ বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি রয়েছে৷ সাধারণ মানুষের অনেকেই এ এজেন্সিগুলোতে পৌঁছুতে না পেরে বিদেশে যাওয়ার জন্য দালালদের দ্বারস্থ হন৷ আবার অনেক রিক্রুটিং এজেন্সির যথেষ্ট জনবল না থাকায় গ্রাহক সংগ্রহের জন্য তারা দালালদের উপর নির্ভর করে৷ আর এ সুযোগে দালালরা সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে থাকে বলেও জানান তিনি৷”

জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিদেশ যেতে বাংলাদেশিদের গড়ে আট হাজার পাঁচশ ডলার ব্যয় করতে হয়, যা অন্যান্য দেশের নাগরিকদের তুলনায় অনেক বেশি৷ বিদেশ যেতে বাংলাদেশিদের মাথা পিছু বেশি খরচ হওয়ার জন্য দালালদের দায়ী করছেন এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা৷ রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের একজন কর্মকর্তা মারিনা সুলতানা বলেন, বেশিরভাগ অভিবাসন প্রত্যাশী শ্রমিকই দালালদের মাধ্যমে দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ তাদের প্রায় অর্ধেকই শেষ পর্যন্ত প্রতারণার শিকার হন৷

মারিনা সুলতানা বলেন, ‘‘বিদেশে যাওয়ার জন্য এ সকল শ্রমিক দালালদের যে অর্থ প্রদান করে থাকেন তার কোন বৈধ কাগজপত্র থাকে না৷ কারণ দালালরা অভিবাসনপ্রত্যাশী শ্রমিকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত অর্থের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ আদায় করে থাকে৷ আর এ কারণে কোনো শ্রমিক বিদেশে গিয়ে প্রতারণার শিকার হলে তাঁরা দালালদেরকে দেয়া বাড়তি অর্থ ফেরত দাবি করতে পারেন না৷”

প্রতারিত হওয়া এক শ্রমিক মোহাম্মদ মাহবুব বলেন দালালদের মাধ্যমে তিনি পর পর দু’বার প্রতারিত হয়েছেন৷ তিনি রয়টার্কে জানান, ভুয়া ভিসা দেখিয়ে এক দালাল তাকে দু’বার প্রতারিত করেছে৷ তাঁর কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে৷

এদিকে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দালালদের অনেকেই৷ মোহাম্মদ পারভেজ নামের একজন দালাল তিনটি রিক্রুটিং এজেন্সির হয়ে গ্রাহক সংগ্রহের কাজ করেন৷ তিনি বলেন, এজেন্সিগুলো যদি এ সকল মধ্যস্বত্বভোগীকে বেতনভুক্ত হিসেবে নিয়োগ দেয়, তাহলে দালালদের মধ্যেও জবাবদিহিতা তৈরি হবে৷

তবে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বলছে ভিন্ন কথা৷ তারা বলছে মধ্যস্বত্বভোগীদের যদি বেতন প্রদানের মাধ্যমে বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়ার অংশ করা হয়, তাহলে বিদেশগামীদের খরচ কমানো যাবে না৷ বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়ার অংশ করা হলে এ সকল মধ্যস্বত্বভোগীকে কারা বেতন দেবে, এমন প্রশ্নও করেন তিনি৷ বলেন, বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়ার সাথে খুব বেশি ধাপ সংযুক্ত করা যাবে না৷ যত বেশি ধাপ থাকবে, তত বেশি খরচ পড়বে বিদেশগামীদের৷

এসএইচ-০৮/১৭/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : রয়টার্স)