শিশুর প্রতি নিপীড়ন বেড়েছে

বাংলাদেশের ছয়টি জাতীয় দৈনিকের শিশু বিষয়ক সংবাদগুলো পর্যালোচনা করে ২০১৮ সালের বাংলাদেশের শিশু পরিস্থিতির একটি চিত্র তৈরি করেছে একটি বেসরকারি সংস্থা।

বছর শেষে পুরো বছরের তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ বলছে, ২০১৮ সালে শিশুদের নিয়ে ১,০৩৭টি ইতিবাচক সংবাদের বিপরীতে নেতিবাচক সংবাদ ছিলো ২,৯৭৩টি।

প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার হওয়ার মোট ৩৪৫টি সংবাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৩৫৬, যার মধ্যে মারা গেছে ২২ জন এবং আহত হয়েছে ৩৩৪ জন।

প্রকাশিত খবরগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায় শিশুরা প্রতিবেশী, উত্যক্তকারী, বন্ধু, আত্মীয় স্বজন বা অপরিচিত ব্যক্তির দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

এর মধ্যে উত্যক্তকারী দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১০ জন আর প্রতিবেশী দ্বারা ১০২ জন। গণধর্ষণের শিকার ৩৭ জন, শিক্ষক দ্বারা সতের জন।

তবে ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে ধর্ষণ সংক্রান্ত সংবাদ সংখ্যা ও ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।

এছাড়া গত বছর ৫৩টি শিশু ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে যাদের প্রত্যেকেই আহত হয়েছে।

যৌন নির্যাতন
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, গত বছর ধর্ষণ ছাড়া আরো ৭৭টি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং এর মধ্যে মারা গেছে একজন।

যৌন নির্যাতনের সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম জেলায়।

হত্যা ও হত্যা চেষ্টা
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে মোট ২৭৬টি শিশু হত্যা ও হত্যা চেষ্টার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ২২৭ জন। এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি খবর ছিলো ঢাকা জেলার। এ জেলায় ৩৭ জন আক্রান্ত হয়েছে আর দ্বিতীয় অবস্থানে গাজীপুর জেলা।

এ সব ঘটনার কারণ হিসেবে যেগুলো উঠে এসেছে তার মধ্যে আছে- পারিবারিক কলহ, সম্পদের জন্য, প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে, চাঁদা না দেয়া, মেয়ে হয়ে জন্মানোসহ বিভিন্ন কারণ।

এছাড়াও দেশে ১৭৭টি বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি হয়েছে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলায়। আর দ্বিতীয় স্থানে আছে কিশোরগঞ্জ।

নির্যাতন ও আত্মহত্যা
২০১৮ সালে শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৪৬ জন। মূলত প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, স্কুলে না যাওয়া, চোর সন্দেহে, আত্মীয়, সৎমা, সহকর্মীর হাতে তারা নানা কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

একই সময়ে আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ১৯৭টি এবং এতে প্রাণ হারিয়েছে ১৫২ জন। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা জেলায় আর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে রাজশাহী।

এছাড়া ছয়জন এসিড নিক্ষেপের শিকার হয়েছে।

আর পাচার হয়েছে ৩৮ জন।

সুপারিশ
শিশুদের সুরক্ষায় কিছু সুপারিশও করেছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।

এর মধ্যে আছে– শিশুদের জন্য পৃথক অধিদপ্তর, জাতীয় শিশু সুরক্ষা কাঠামো গঠন, শিশু বিষয়ক যাবতীয় বিষয় পর্যবেক্ষণে প্রধান কর্তৃপক্ষ হিসেবে শিশুশ্রম ইউনিটি সক্রিয় করা, শিশুদের জন্য পৃথক বাজেট, শিশুদের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার বন্ধ এবং জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন।

‘বিচারহীনতাই মূল কারণ’
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী শাহীন আনাম বলছেন এটা একটা উদ্বেগজনক বিষয় যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বাচ্চাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। প্রতিটি সূচকেই গত বছরের চেয়ে শিশুর প্রতি নিপীড়ন বেড়েছে।

“আমরা শিশুদের নিরাপত্তা দিতে পারছি না। সংবাদপত্রে যেটা বের হয় আসলে ঘটনা তার চেয়েও অনেক বেশী ঘটে। কিন্তু এগুলো জানা যায় না কারণ মানুষ সহজে মামলা করে না কিংবা পুলিশের কাছে যায় না।”

তিনি বলেন, অপরাধীরা মনে করে না যে তাদের শাস্তি হবে।

“সবচেয়ে বড় কারণ বিচারহীনতা। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার কারণে দোষী ব্যক্তির শাস্তি নিয়ে আস্থা নেই মানুষের। বিচারহীনতা বা দায়মুক্তির সংস্কৃতি বড় কারণ। মূল্যবোধের অবক্ষয় তো আছেই,” বলেন তিনি।

এসএইচ-৩০/২৮/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বিবিসি)