বিএনপির নির্বাচিত পাঁচজন সংসদ সদস্য হিসাবে শপথ নিলেও দলটির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ নিতে যাননি। ফলে তার পদটি শূন্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপি’র নির্বাচিতদের চার জন শপথ নেয়ার পর তাঁরা বলেন যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই তাঁরা শপথ নিয়েছেন।
এর আগে দলটির আরেকজন নির্বাচিত জাহিদুর রহমান শপথ নেন। তারও আগে শপথ নিয়েছেন তাদের জোট সঙ্গী গণফোরামের দুইজন নেতাও।
তবে বিএনপির এই পাঁচজন সদস্য সংসদে কতটা ভূমিকা রাখতে পারবেন?
আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলেও জাতীয় সংসদে বিরোধী আসনে বসেছে ২২টি আসনের জাতীয় পার্টি।
বিএনপি সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দল হলেও তাদের সংসদের বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ নেই।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম বলছেন, সম্ভবত তারা সংসদে হুইপ পাবেন না। তবে তারা একটি পার্লামেন্টারি গ্রুপ হিসাবে সংসদে থাকবেন।
তিনি বলছেন, ”পার্লামেন্টে যাওয়ার পর বিএনপির পাঁচজন সংসদ সদস্য একটি গ্রুপ তৈরি করতে পারেন। সেখানে তারা নিজেদের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করে নিয়ে সংসদীয় কার্য পরিচালনা করতে পারেন। এভাবে একটি নতুন প্র্যাকটিস তৈরি হবে।”
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের পার্লামেন্টে যে ঘটনা দেখা যাচ্ছে, এরকম এর আগে আর দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে নির্বাচন করার পর জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে বসেছে। আবার প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির পাঁচজন সদস্য পার্লামেন্টে এসেছেন, যারা আবার সংসদে বিরোধী দল নয়।
বিএনপির এই ছোট গ্রুপের কার্যাবলী নতুন একটি উদাহরণ তৈরি করবে বলে বলছেন ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম।
ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম বলছেন, এই সংসদ সদস্যদের জন্য যদি দলীয় হুইপ না থাকে,তাহলে কোন প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট দেয়ার সময় আর্টিকেল ৭০-এর ধারার প্রসঙ্গটি তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
তবে আরেকজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলছেন, যেহেতু তারা বিএনপির সংসদ সদস্য হিসাবে সংসদে গিয়েছেন, সেখানে কোন গ্রুপ গঠিত হলে সেটাকে বিএনপির পার্লামেন্টারি গ্রুপ হিসাবেই ধরা যাবে। সেই গ্রুপের সিদ্ধান্ত বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত হলে সেটি অন্যদেরও অনুসরণ করতে হবে। কেউ সেটির বিপক্ষে ভোট দিলে সেখানে আর্টিকেল ৭০ অনুচ্ছেদ ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘দলের কোনও নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রূপে মনোনীত হয়ে কোনও ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি (ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনও নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’
ফলে দলগতভাবে তাদের পরিচিতি হলে তখন এই ধারাটি প্রযোজ্য হবে বলে বলছেন মি. মালিক। যদিও সেরকম সম্ভাবনা খুব কম বলে তিনি মনে করেন।
এই দলের ওপর মূল দলের নিয়ন্ত্রণ থাকবে বলেই তিনি মনে করেন।
একজন সংসদ সদস্য হিসাবে তারা সংসদে যেকোনো বক্তব্য উপস্থাপন, মতামত প্রদান, বিল আইন উত্থাপন করতে পারবেন। তবে আইন বা বিল অনুমোদন হতে হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন লাগবে।
এই সংবিধান বিশেষজ্ঞ বলছেন, ”এক্ষেত্রে কোন সমঝোতা ছাড়া বিএনপির এই সদস্যরা আইন প্রণয়ন বা বিল অনুমোদনে খুব সামান্যই ভূমিকা রাখতে পারবেন। হয়তো তারা কোন আইনের বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারেন, কিন্তু তাদের সংখ্যা কম হওয়ায় সেটি ঠেকাতে পারবেন না।”
শাহদীন মালিক বলছেন,”তবে এই ২০১৬ সাল পর্যন্ত আইনগুলো পর্যালোচনা করে দেখেছি, ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই যেভাবে আইনটি মন্ত্রিসভায় পাশ হয়েছে, কোন সংশোধন ছাড়াই সেভাবে সংসদেও পাশ হয়েছে। সংসদে তার কোন পরিবর্তন হয়নি। ”
এ ক্ষেত্রে সরকারি দলের সংসদ সদস্য বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্যদের সঙ্গে তাদের কোন পার্থক্য থাকবে না। অন্যদের মতো তারা একজন সংসদ সদস্য হিসাবে যাবতীয় সুবিধা ভোগ করবেন।
এসএইচ-০৬/০১/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)