ভারতের ওড়িশায় আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ফণী শনিবার সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করবে। এটি খুলনা হয়ে দুপুর ১২টার মধ্যে যশোর ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে প্রবেশ করবে। ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় প্রায় ২১ কিলোমিটার বেগে অগ্রসর হচ্ছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ। আবহাওয়া অধিদফতরের কার্যালয়ে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণী একাধিকবার দিক পরিবর্তন করে অবশেষে শুক্রবার ভারতের ওড়িশায় আঘাত হানে। সেখানে এই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে প্রাণ তিন জনের প্রাণহানি ঘটে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ভয়াবহতার তালিকায় চারে রেখেছিল আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থাগুলো। যেটি ২০০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানবে বলেও সংস্থাগুলো জানিয়েছিল। ভারতের ওড়িশার উপকূলে আঘাত হেনে কলকাতা হয়ে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী।
তবে ওড়িশায় আঘাত হেনেই শক্তি হারাতে শুরু করেছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এ ঘূর্ণিঝড়। কিন্তু ভয়াবহতা কমলেও গতি ও দিক পরিবর্তন হয়নি ফণীর। কলকাতা ঘেঁষে বাংলাদেশের খুলনার দিকেই আসছে এ ঘূর্ণিঝড়। শুক্রবার রাতে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ওয়েবসাইটে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে এই বিষয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ফণী শুক্রবার সন্ধ্যার পর বাংলাদেশে সীমানায় আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি সারা রাত ধরে বাংলাদেশ অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে শনিবারও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করবে। ফণী ভারতের ওড়িশায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানলেও ওই গতিবেগ কমে ১০০ কিলোমিটার হয়েছে। এটি ধীরে ধীরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হবে। ১০০ কিলোমিটার গতিবেগ হলেও অতীতে এই ঝড়ো হাওয়াতেও প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটেছে।’
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক বলেন, ‘ভূমির উপর দিয়ে ফণী আসার কারণে জলোচ্ছাসের সম্ভাবনা কম, তবে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। উৎপত্তি স্থল থেকে ঘূর্ণিঝড়টি এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার অতিক্রম করেছে।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এবারের মডেল অত্যন্ত আপডেটেড। আমরা কোনো জীবনের ক্ষতি হতে দেব না, মানুষের কোনো ক্ষতি হতে দেব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ৪ হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্র পুরোপুরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে দুর্গো এলাকার জনগণকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে, হচ্ছে (বাকিদের কেউ নেয়া হচ্ছে)। এ জন্য আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, সেনাবাহিনী, কোস্ট গার্ড, রেড ক্রিসেন্টসহ সকল সংস্থা সম্মিলিতভাবে কাজ করছেন। সন্ধ্যার আগে সমস্ত লোককে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি কাউকে যেন রেখে আসা না হয়। একটি লোকও রেখে আসলে ঘূর্ণিঝড় যে বেগে আসবে তাতে তার মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে।’
এদিকে আবহাওয়া অফিসের সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারে মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় ফণী কিছুটা দুর্বল হয়ে ভারতের উপকূলীয় ওড়িশায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার সকালের মধ্যে খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে। ফণীর প্রভাবে বাংলাদেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে এবং দেশের অনেক স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে।
এসএইচ-০১/০৪/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)