দেশের দুইজন তরুণী সারাদেশের ৬৪ জেলার প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে রোববার তাদের ভ্রমণের ইতি টানছেন। পেশায় চিকিৎসক সাকিয়া হক এবং মানসী সাহা, যারা মোটর বাইকে করে তাদের এই ভ্রমণ অভিযানের নাম দিয়েছিলেন ‘নারীর চোখে বাংলাদেশ’।
বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় এই বয়সের দু’জন মেয়ের এভাবে মোটর বাইকে সারাদেশ ঘুরে বেড়ানো বেশ বিরল শুধু নয়, দুঃসাহসিকও বটে।
এই ভ্রমণের সময় দেশের নানা দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার পাশাপাশি তারা সামাজিক সচেতনতামূলক কাজেও অংশ নিয়েছেন।
সাকিয়া হক বলছিলেন, এই ভ্রমণ অভিযানের চিন্তা মেডিকেল কলেজে তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় তাদের মাথায় আসে।
সেটা চারবছর আগের কথা।
মেয়েরাও যে মোটর সাইকেলে চড়ে দেশ ঘুরতে পারে, সেটাই তারা প্রমাণ করতে চেয়েছেন।
“মেয়েরাও যে মোটর সাইকেলে চড়ে দেশ ঘুরতে পারে সেটা দেশের মানুষ কখনই ভাবেনি। আমরা নিজেরাও ভাবিনি যে আমরা আসলে পারবো”
২০১৭ সালের ৬ই এপ্রিল তাদের এই যাত্রা শুরু হয়। দুই বছর পরে ৫ই এপ্রিল তারা সম্পন্ন করতে যাচ্ছেন ৬৪ জেলা সফর।
এই সফরে প্রতিটি জেলায় একটি করে স্কুলে তারা মেয়েদের সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করেন।
কিন্তু কতটা সহজ ছিল এই সফর? প্রতিকূলতা ছিল দুই ধরনের- রাস্তায় এবং স্কুলে।
সাকিয়া হক বলেন, রাস্তার প্রতিকূলতা ছিল বেশি।
“অনেকসময় রাস্তায় অন্য যেসব যানবাহন চলতো, যেমন গাড়ি রিকশা – এসব যখন চলতো তারা [লোকজন] দেখা যেতো পেছনে ফিরে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসাহাসি করতো।”
তিনি বলেন, “আর অন্যান্য মোটর বাইকে যখন আমাদের পাশ দিয়ে যেতো এবং দেখতো যে কোনও মেয়ে বাইক চালাচ্ছে তখন তারা ইচ্ছে করে আমাদের সামনে দিয়ে একে-বেঁকে চালাতো আমাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য। এজন্য একবার আমাদের দুর্ঘটনার মুখেও পড়তে হয়েছে, যদিও সেটি খুব গুরুতর ছিল না।”
“অনেকে বলতো কেয়ামত চলে আসলো বেটি মানুষরাও(মেয়েরাও) হোন্ডা চালায়,” – এমন অনেক কথা-বার্তা শুনতে হতো বলে জানান তিনি। এসব কথায় কান দিলে আগাতে পারতেন না তারা।
“আবার আমরা যেহেতু বিভিন্ন স্কুলে যেতাম, মেয়েদের ইভ টিজিংসহ নানা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য। সেখানেও অনেক সময় আমাদের প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয়েছে।”
“কোথাও কোথাও স্কুল কর্তৃপক্ষ হয়তো বেশ রক্ষণশীল মানসিকতার ছিল, যার কারণে তারা বলতো ‘ইভ টিজিং নিয়ে মেয়েদের জানানোর কী দরকার, ইভ টিজিং তো মেয়েদেরই দোষ’।”
এভাবে দু’জন মেয়ের মোটর বাইকে দেশ ঘোরার ক্ষেত্রে কতটা নিরাপদ বলে মনে হয়েছে?
“রুট প্ল্যান আমরা আগে থেকেই করেছি। সন্ধ্যার আগে অর্থাৎ দিনের মধ্যে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। এছাড়া সব জেলাতেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বা পুলিশকে জানিয়ে গিয়েছি।”
সাকিয়া হক বলেন, “কিছু কিছু রাস্তা আছে যেগুলো হয়তো গা ছমছম করা অন্ধকার, তাছাড়া খুব একটা প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়নি। মানুষ খুব হেল্প-ফুল ছিল।”
তার নিজের মা বিষয়টিকে শুরুর দিকে ইতিবাচকভাবে নিতে পারেননি, তবে এখন তিনি বিষয়টিতে উৎসাহ দিচ্ছেন জানান মিজ হক।
সাকিয়া হক ‘ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ-ভ্রমণকন্যা’ নামে মেয়েদের নিয়ে ভ্রমণবিষয়ক একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। কিন্ত প্রথমদিকে তার এই পরিকল্পনার জন্য অন্য মেয়েদের সঙ্গী হিসেবে খুঁজে পাচ্ছিলেন না, তবে ধীরে ধীরে মেয়েদের আগ্রহ বাড়তে থাকে, জানান তিনি।
এসএইচ-০৬/০৫/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বিবিসি)