উদ্বিগ্ন জনগণ মোবাইল কলরেট বাড়া নিয়ে

বাংলাদেশের ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পেশ হয়েছে বৃহস্পতিবার৷ সাধারণ মানুষ বাজেট খুব একটা দেখেন না, ভেতরে কী আছে জানতেও চান না, শুধু জানতে চান কিসের দাম বাড়ছে, আর কোন জিনিসটার দাম কমছে?

বাজেটটা নাগরিকেরা কীভাবে দেখছেন? অধিকাংশের কথায়ই উঠে এসেছে মোবাইল ফোনে কথা বলার উপর খরচ বাড়ায় বিরক্ত তারা৷ পাশাপাশি স্মার্টফোনের আমদানিশুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়টিও ভালোভাবে নেননি তারা৷

স্মার্টফোনের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশের ব্যবসা করেন ইমরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘মোবাইল ফোনে ধনীর মতো গরীবও ব্যবহার করে৷ বড়লোক যারা এক দুই হাজার টাকা বিল দেন তাদের জন্য তো কোন সমস্যা না৷ পাঁচ শতাংশ বাড়তি কর গরীব মানুষের জন্য বড় চাপ৷ এটা সরকার না বাড়ালেও পারত৷

আবার মটরসাইলের রেজিষ্ট্রেশনের উপর কর বাড়ানো হয়েছে৷ এটা কিন্তু সাধারণ মানুষের বাহন হিসেবেই পরিচিত৷ এখানে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করা হয়নি৷ আবার দেখেন ধনীদের নেট সম্পদের উপর ট্যাক্সে ছাড় দেওয়া হয়েছে৷ এটা না দিয়ে বরং আমরা যারা আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করলে ট্যাক্সের মধ্যে পড়ে যাচ্ছি, তাদের ক্ষেত্রে এটা বাড়িয়ে তিন বা সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা যেত৷’

ঢাকা পুলিশ সিটি কলেজের প্রভাষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাজেট দেখে আমার যেটা মনে হয়, বড়লোক বড়লোকই থাকছে, আর মধ্যবিত্ত আরেকটু নিচে নামছে৷ মানুষের জীবনমানের চাহিদার দিকে ওই অর্থে নজর দেওয়া হয়নি৷ যেমন দেখলাম স্মার্টফোনের দাম বাড়বে৷ এখন আপনি ডিজিটাল বাংলাদেশ করবেন, আবার স্মার্টফোনের দাম বাড়াবেন সেটা তো আর হয় না৷’

প্রাইমব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জিয়াউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে সরকার টকটাইমের খরচ একদফা বাড়িয়েছে৷ এবার আরো পাঁচ শতাংশ কর বাড়ানোতে একজন মানুষকে ১০০ টাকার কথা বললে সরকারকে বাড়তি দিতে হবে ২৭ টাকা৷ এটা বিশ্বে কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই৷ আরেকটা জিনিস দেশে স্মার্ট ফোনের এর উপর ১০ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো ঠিক হয়নি৷’

কারওয়ান বাজারের চায়ের দোকানদার খোরশেদ আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা তো আর বাজেট বুঝি না, শুধু বুঝি কিসের দাম বাড়বে? বাজেটে যে ঘোষণাই থাক, বাজেট ঘোষণার পর জিনিসপত্রের দাম আরেকদফা বেড়ে যাবে এটা নিশ্চিত৷ প্রতি বছরই বাজেটের পর এক দফা করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে৷ এবার কি পরিমান বাড়ে সেটাই দেখার৷ আর চা পাতা, চিনি এগুলোর দাম বাড়বে না কমবে কাল কিনতে গেলে বুঝতে পারব৷ আর মোবাইল ফোনে কথা বলার উপর খরচ বাড়ানো হচ্ছে বলে শুনলাম৷ এটা ঠিক না’৷

একই দোকানে চা খেতে আসা সিএনজি অটোরিক্সাচালক রফিক উল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন, ‘ভাই বাজেট গরীব মানুষের জন্য একটা বিপদই ডেকে আনে৷ বাজেট হলে সবকিছুর দাম বাড়ে আমাদের আয় তো বাড়ে না’৷ বাজেটে তো অনেক কিছুর দামই কমানো হয়েছে? জবাবে রফিক বলেন, ‘আপনাদের পত্রিকায়ই কমানো হয়৷

বাস্তবে বাজারে গিয়ে দেখেন কোন কিছুর দাম বাংলাদেশে একবার বাড়লে সেটা আর কমে কি-না? সাংবাদিকরা লিখে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন? আসলে জিনিসপত্রের দাম যেটা কমার কথা সেটা কমছে কি-না তা তারা দেখেন না৷ আর এবার যদি কিছু জিনিসের দাম কমে তাহলে তো ভালো’৷

এসএইচ-০৮/১৫/১৯ (সমীর কুমার দে, ডয়চে ভেলে)