রেল লাইনের নিরাপত্তা নিয়ে যত প্রশ্ন

দেশে সড়ক পথে যাতায়াতের চেয়ে রেলপথকে নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করেন যাত্রীরা।

পরিসংখ্যানও সে কথাই বলছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশে যেসব ট্রেন যাতায়াত করে সেগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ গতি ৫০ থেকে ৫৫ কিলোমিটার।

কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন জায়গায় প্রায়শই ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়, যদিও তাতে প্রাণহানি কমই হয়।

রোববার রাতে কুলাউড়ায় যে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে প্রাণহানি অনেক বেশি হতে পারতো।

রেল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কূলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনা বড় ধরণের হলেও সে তুলনায় ক্ষতি অনেক কম হয়েছে।

তবে এই দুর্ঘটনার পর রেলপথের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

ঢাকা সিলেট রুটে ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সৈয়দা মারজানা।

গতরাতের দুর্ঘটনার পর রেলপথের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে তার মনে।

” পুরো ব্যাপারটাই অনিরাপদ মনে হচ্ছে। সবাই ভাবে ট্রেনটা সেফ (নিরাপদ)। কিন্তু এখন যা অবস্থা, সবাই আসলে কিছুই বুঝতেছে না যে কী করবে,” বলছিলেন সৈয়দা মারজানা।

দেশে রেলপথের রয়েছে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার এবং নিয়মিত কর্মচারীর সংখ্যা ২৫ হাজারের মতো।

রেলের কোচ ক্রয় এবং রেলপথ সম্প্রসারণের জন্য নানা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে গত ১০ বছরে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, নতুন প্রকল্পের প্রতি মনোযোগী হলেও পুরনোগুলো রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি কমই নজর দেয়া হচ্ছে।

অধ্যাপক আলমের বর্ণনায়, ” আমরা বানাই, ভুলে যাই, আবার বানাই। মাঝখানে যে এটাকে রক্ষণাবেক্ষণ করে টেকসই এবং নিরাপদ রাখবো সেই কালচারটা (সংস্কৃতি) কখনোই আমাদের গড়ে উঠেনি।”

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় স্থানীয় মানুষজন রেলপথের নানা ত্রুটির বিষয়গুলো তুলে ধরে। ফলে অনেক সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

রেল লাইন এমন একটি বিষয় যেটিকে সবসময় পর্যেবক্ষণের মধ্যে রাখতে হয়।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গতরাতের ঘটনাটি নিছকই একটি দুর্ঘটনা। এর মাধ্যমে যাত্রীদের মনে কোন আশংকা তৈরির সুযোগ নেই বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জেল হোসেন বলছেন, রেল লাইন নিরাপদ রাখার জন্য তাদের তরফ থেকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয়।

“ব্রিটিশ আমলের রেলে ব্যবস্থা খুবই নিখুঁত। নির্দিষ্ট ম্যানুয়াল ফলো করে এর ব্যবস্থাপনা করা হয়। তবে আমাদের লোকবলের কমতি আছে সেটা সত্য। তার মধ্য থেকে আমরা রেলের লাইন মেনটেইনেন্স আমরা নিয়মিত করে যাচ্ছি,” বলছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলছেন, ট্রেন কেন লাইনচ্যুত হয়েছে সেটি এখন খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

রেল লাইনে ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে নাকি এর অন্যকোন কারণ রয়েছে সেটি তদন্তের পরেই বোঝা যাবে বলে বলছেন রেলপথ সচিব।

এসএইচ-০৭/২৪/১৯ (আকবর হোসেন, বিবিসি)