উৎপাদনে আসছে দেশের প্রথম পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র

ডিসেম্বরে উৎপাদনে আসছে দেশের প্রথম আল্ট্রা সুপার ক্রিটিকাল প্রযুক্তি সম্পন্ন পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র৷ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রথম পর্যায়ে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে৷

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু৷ তিনি বলেন, ২০২০ সালের জুন থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে এই কেন্দ্র থেকে৷

পুরো প্রকল্পের ৭২ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছন বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (এনডব্লিউপিজিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদুল আলম৷

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে, গ্রিড লাইন নির্মাণের কাজও জোরে শোরে চলছে৷

সেপ্টেম্বরের মধ্যেই গ্রিডলাইন নির্মাণের সব কাজ শেষ হবে বলে জানান ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদুল আলম৷

এরই মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বসানো হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় স্টিম টারবাইন৷ এর মাধ্যমেই ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে৷ এই স্টিম টারবাইনের কারণে, উৎপাদন খরচও অনেকাংশে কমে আসবে৷ দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করতে দেশের আট হাজার এবং চিনের দুই হাজার শ্রমিক, দিনে তিনটি শিফটে কাজ করছে৷

১৮শে জুন সকালে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বয়লারের ওপর থেকে পড়ে সাবিন্দ্র দাশ নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়৷ ঘটনার জের ধরে ওই বিকেলে বাংলাদেশী ও চীনা শ্রমিকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে৷ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিণত হয় রণক্ষেত্রে৷ সংঘাতে চীনা ও বাংলাদেশিসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়৷ গুরুতর আহত চীনা নাগরিক ঝাং ইয়াং ফাংকে ভর্তি করানো হয় বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে৷ মাথায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে পর দিন তার মৃত্যু হয়৷ কিছুটা স্থবির হয়ে পড়ে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ৷

অবশ্য সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে কেন্দ্রে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরেছে বলে দাবি করেছেন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ৷ তিনি বলেন, এত বড় প্রকল্পে বিচ্ছিন্ন কিছু ঝামেলা হয়ে থাকে৷ তবে এখন আর কোনো জটিলতা নেই জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘‘স্থানীয়দের সঙ্গে যে ঝামেলা হয়েছে, তা মিটে গেছে৷ মামলা হয়েছে, আইন তার নিয়ম অনুযায়ী চলবে৷”

‘এই প্রযুক্তির ফলে, ৯৮-৯৯ ভাগ পর্যন্ত সালফার অপসারণ সম্ভব’ অবশ্য সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে কেন্দ্রে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরেছে বলে দাবি করেছেন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ৷ তিনি বলেন, এত বড় প্রকল্পে বিচ্ছিন্ন কিছু ঝামেলা হয়ে থাকে৷ তবে এখন আর কোনো জটিলতা নেই জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘‘স্থানীয়দের সঙ্গে যে ঝামেলা হয়েছে, তা মিটে গেছে৷ মামলা হয়েছে, আইন তার নিয়ম অনুযায়ী চলবে৷”

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির মূল জ্বালানি কয়লা৷ যার পুরোটাই আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা৷ তারা বলছেন, জ্বালানি হিসেবে সাব-বিটুমিনাস কয়লা ব্যবহার করা হবে৷ যার ক্যালরিফিক ভ্যালু ৪৭০০-৫৫০০ কিলোক্যাল। বছরে প্রায় ৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন পড়বে৷ প্রাথমিকভাবে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করা হবে। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ইতিমধ্যে একটি চুক্তিও হয়েছে৷ ১৭ই জুন ঢাকার একটি হোটেলে দুই দেশের চুক্তিটি হয়৷ যা কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে এটি দেশের প্রথম চুক্তি৷

এনডব্লিউপিজিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, অস্ট্রেলিয়া থেকেও কয়লা আমদানি করা হবে৷ তবে এখনও চুক্তি হয়নি৷ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কয়লা আমদানির বিষয়ে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি৷

তিনি জানান, এই প্রযুক্তির কারণে প্রতি একক বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার পরিমাণ কমে যাবে৷ ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও অন্যপ্রযুক্তির চেয়ে অনেক কম হবে৷

এদিকে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো নিয়ে, বরাবরই সমালোচনা করে আসছে পরিবেশবাদী ও বামপন্থী সংগঠনগুলো৷ এ প্রসঙ্গে খোরশেদ আলম বলেন, এজন্যই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিকাল প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হচ্ছে৷

তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে কয়লা আমরা ব্যবহার করবো, সেখানে সালফারের পরিমাণ খুবই কম৷ তারপরেও যতটুকু থাকবে সেটা ডিসালফারাইজেশন প্ল্যান্টের মাধ্যমে সেটা অপসারণ করা হবে৷”এই প্রযুক্তির ফলে, ৯৮-৯৯ ভাগ পর্যন্ত সালফার অপসারণ সম্ভব৷ তাই পরিবেশ দূষণের কোনো আশঙ্কা করছেন না তিনি৷

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড গঠন ও নিবন্ধন নেয়া হয়৷ এই কোম্পানিটি মূলত বাংলাদেশের নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এন্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি)-এর যৌথ উদ্যোগ৷ পাশাপাশি, একই স্থানে ৫০ মেগা ওয়াট বায়ু চালিত প্রকল্প বাস্তবায়নেরও পরিকল্পনা করছে কোম্পানিটি৷ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫৬০ মিলিয়ন ডলার৷

এসএইচ-০৬/২৮/১৯ (তানজীর মেহেদী, ডয়চে ভেলে)