সিগারেট পরিবেশ নয় উদ্ভিদের বৃদ্ধিতেও প্রধান বাধা

ফেলে দেয়া সিগারেটের বাট বা সিগারেটের গোঁড়া উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে বাধার কারণ হতে পারে, এমনটাই বলছে একটি গবেষণার ফল।

এ্যাংগলিয়া রাস্কিন ইউনিভার্সিটি নেতৃত্বাধীন একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাটিতে সিগারেটের গোঁড়ার উপস্থিতির কারণে সে মাটিতে বীজ থেকে অঙ্কুর হওয়ার সম্ভাবনা কমেছে শতকরা ২৭ থেকে ২৮ ভাগ।

ঘাসের ক্ষেত্রে অঙ্কুরোদগমের সম্ভাবনা হ্রাস পেয়েছে ১০% এবং দৈর্ঘ্যের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে ১৩%।

গবেষণায় বলা হচ্ছে যে, প্রতি বছর অন্তত পক্ষে ৪.৫ ট্রিলিয়ন সিগারেট বাট পুরো পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে, যা কিনা উদ্ভিদের জন্যে সবচেয়ে বড় আকারের প্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করে।

বেশিরভাগ সিগারেটের গোঁড়া বা বাটে থাকে একটি সেলুলোজ এসিসেট ফাইবারের তৈরি ফিল্টার, যা এক ধরনের বায়োপ্লাস্টিক।

একইসাথে গবেষকরা দেখেছেন যে, অব্যবহৃত সিগারেটের ফিল্টারও একইভাবে পরিত্যক্ত ফিল্টারের মতোই উদ্ভিদের বৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলে। তামাকের বিষক্রিয়া ঘটুক আর না ঘটুক, ফিল্টারটিই উদ্ভিদের জন্যে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ইকোটক্সিকোলজি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সেফটি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে যে, গবেষকরা ক্যামব্রিজ শহরের আশেপাশে নমুনা সংগ্রহ করে দেখেছেন সেখানে প্রতি বর্গ মিটারে অন্তত ১২৮টি সিগারেটের গোঁড়া পাওয়া গেছে।

প্রধান গবেষক ড্যানিয়েল গ্রিন বলেন, যে সমাজে সিগারেটের অবশিষ্টাংশ যত্রতত্র ছুড়ে ফেলার সংস্কৃতি রয়েছে সেসব স্থানে পরিবেশের গুরুতর ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

সিনিয়র জীববিজ্ঞানী হিসেবে ড. গ্রিন বলেন, “আমাদের গবেষণার প্রধান বিষয় ছিল উদ্ভিদের ওপর সিগারেটে গোঁড়ার কি প্রভাব সেটি দেখা।”

“আমরা দেখেছি যে, সিগারেটের এই অবশিষ্টাংশ উদ্ভিদের অঙ্কুরোদগমের সফলতা এবং চারা গাছের কাণ্ডের দৈর্ঘ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে ঘাস এবং গুল্মের কাণ্ডের ওজন অর্ধেক হ্রাস করে দেয়।”

তাদের গবেষণায় দেখা গেছে সেইসব উদ্ভিদ থেকে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গবাদি পশুরা। যারা খাদ্য হিসেবে ওই উদ্ভিদ খেয়ে থাকে এবং শহুরে অঞ্চলের মাটিকে সবুজ করে।

মিজ গ্রিন বলেন, “এইসব উদ্ভিদ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করে, এমনকি শহরের উদ্যানগুলোতেও এবং এর মধ্যকার এক জাতের উদ্ভিদ পরাগায়ন ও নাইট্রোজেন বিশ্লেষণ করে পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”

সহ-গবেষক ড. বাস বুটস এর সাথে যোগ করেন, “যদিও এটি নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার দরকার, তারপরও আমরা মনে করি যে সিগারেটের ফিল্টারের রাসায়নিক গঠন উদ্ভিদের ক্ষতির কারণ।”

“এগুলোর বেশিরভাগই তৈরি হয় সেলুলোজ এসিসেট ফাইবার দিয়ে, সেটির সাথে আরও কিছু রাসায়নিক যোগ করা হয় যা প্লাস্টিকটিকে আরও নমনীয় করে তোলে, যাকে বলা হয় প্লাস্টিসিজার। এগুলোই উদ্ভিদের বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে থাকে।”

ব্রিটেনের আইনে যত্রতত্র আবর্জনা ফেলার জন্যে জরিমানার বিধান রয়েছে- সেগুলো যদি সিগারেটের উচ্ছিষ্টও হয়। তবে সেটি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে থাকে, কেন্দ্রীয় সরকার নয়।

লন্ডন শহর কর্তৃপক্ষ বলছে, বছরের অন্তত ৬০ লাখ সিগারেটের গোঁড়া শহরটির রাস্তায় ফেলা হয়।

যদিও যেখানে সেখানে সিগারেটের অবশিষ্টাংশ ছুড়ে ফেলা ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে পরে না, তবু ব্রিটেন টাইডি নামে একটি দাতব্য সংস্থা ধূমপায়ীদের এই কাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়।

সংস্থার প্রধান নির্বাহী অ্যালিসন অগডেন-নিউটন বলেন যে, এই সিগারেটের উচ্ছিষ্টগুলো বিষাক্ত এবং এগুলো ও প্লাস্টিক আমাদের জলজ ও সামুদ্রিক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য ক্ষতির কারণ।

তিনি বলেন যে, এই গ্রহটিকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে ধূমপায়ীদের দায়িত্ব নিতে হবে।

এসএইচ-০৪/২১/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বিবিসি)