ঈদের ছুটিতে এডিস মশা বিকাশের আশঙ্কা

নাসিমা ফেরদৌস ঢাকার মোহাম্মদপুরে থাকেন পরিবার নিয়ে। ঈদে গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় যাবেন স্বামী সন্তান নিয়ে।

চারদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে তিনি চিন্তিত। কিন্তু এমন অবস্থার মধ্যে ঢাকার বাইরে যেতে হলে কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে – সে ব্যাপারে খুব পরিষ্কার ধারণা তার নেই।

নাসিমা ফেরদৌস বলছিলেন, “বাচ্চাদের নিয়ে যাচ্ছি চিন্তার মধ্যে আছি। কিন্তু ঢাকার বাসা কিভাবে রেখে যাবো বুঝতে পারছি না।”

তিনি বলছিলেন, “মশা প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন স্প্রে, ক্রিম ব্যবহার করছি। আর যাওয়ার আগে পানি জমে এমন জায়গাগুলো পরিষ্কার করে যাবো।”

এবারে ঈদ এমন এক সময় হচ্ছে যখন ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে অনেক জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

আবার এই অবস্থার মধ্যে ঢাকা ছেড়ে ঘরমুখো হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু যেসময়টা এসব মানুষ তাদের ঢাকার বাসায় থাকবেন না, সেই সময়টাতে এডিস মশার জন্ম, বিকাশের একটা বড় আশঙ্কা রয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মেহেরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলছিলেন, ঢাকা থেকে বাইরে যাওয়ার আগে দুইটি দিক লক্ষ্য রাখতে হবে। একটি স্বাস্থ্যগত দিক অন্যটি ফেলে যাওয়া বাড়িঘর এবং জিনিসপত্র।

অধ্যাপক মেহেরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলছেন, যদি কারো জ্বর থাকে তাহলে সেই ব্যক্তির ঢাকার বাইরে ভ্রমণ করা উচিত হবে না।

“আবার এমন হতে পারে মশা কামড়েছে , ইনফেকশনটা তার শরীরের মধ্যে ছিল কিন্তু সেই মুহূর্তে জ্বরটা প্রকাশিত হয়নি।”

“পরবর্তীতে বাড়িতে যাওয়ার পরে জ্বরটা প্রকাশিত হল। সেক্ষেত্রে তিনি যেন চিকিৎসকের পরামর্শ নেন এবং পরীক্ষা করান যে তার জ্বরটা ডেঙ্গু জ্বর কি-না।”

যদি ডেঙ্গু জ্বর হয় তাহলে তাকে সবসময় মশারীর মধ্যে থাকতে হবে । এতে সেখানে যদি এডিস মশা থাকে তাহলে ঐ রোগীকে কামড়িয়ে ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে অন্যদের কামড়াতে না পারে।

কারণ যদি ঐ মশা অন্যদের কামড়ায় তাহলে তারা ডেঙ্গুতে সংক্রমিত হতে পারেন, জানান মিজ. ফ্লোরা।

তিনি বলছিলেন, এটা এখন একটা বড় বিষয় যেটা সতর্ক থাকা প্রয়োজন যাতে করে ঈদ করতে যেয়ে এক জনের দ্বারা অন্যজন সংক্রমিত না হন।

এবারের ঈদের ছুটি সব মিলিয়ে নয় দিনের মত। একটি মশার ডিম থেকে পূর্নাঙ্গ মশা হতে সাত দিন সময় লাগে। সেক্ষেত্রে এ সময়ের মধ্যে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

অধ্যাপক মেহেরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বাসা বাড়ীতে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে সে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন।

১. বাসা বা বাসার আশেপাশে পানি জমে থাকতে পারে, এমন কোন জিনিস আছে কিনা সেটা দেখুন। থাকলে অবশ্যই সেগুলো সরিয়ে ফেলুন।

২. কোথাও পানি জমে থাকলে বাসা ছাড়ার আগে যেন তিনি জমানো পানি ফেলে দিন।

৩. পানি জমাট বাধতে পারে এমন কোন কৌটা, টায়ার, এসি এবং ফ্রিজের নীচে পানি জমতে পারে এমন কোন ব্যবস্থা থাকলে তা অপসারণ করুন।

৪. খোলা স্থানে কোন পাত্র ফেলে যাবেন না। এখনো যেহেতু বৃষ্টি হচ্ছে তাই সেসব পাত্রে পানি জমতে পারে।

৫. বাড়ির বাথরুমে কমোড বা প্যান আছে সেখানে কিছুটা পানি জমে থাকে। সেই জায়গাগুলো ঢেকে রাখতে হবে, যাতে মশা সেখানে প্রবেশ না করতে পারে।

৬. ছাদে পানির ট্যাংক ভর্তি হয়ে গিয়ে পানি যাতে ছাদে জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। সেই পানি বের হয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করতে হবে।

৭. বাড়ির আঙ্গিনায় যদি কোন গর্ত থাকে, সেগুলো বুজিয়ে দিতে হবে।

৮. যদি এমন হয় কোন স্থানে পানি জমবে এবং সেটা বন্ধ করার উপায় নেই, তাহলে জায়গা ঢেকে রাখতে হবে। এতে পানি জমলেও মশা ‌ওখানে ঢুকে ডিম পাড়তে পারবে না।

তবে আমাদের অনেকের বাসায় পানির বিশুদ্ধকরণের জন্য ফিল্টার রয়েছে। এই ফিল্টারের পানি যেহেতু ডাকা রয়েছে তাই এটা নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক মেহেরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

এসএইচ-০৪/০৭/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বিবিসি)