‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখর আরাফাত ময়দান

পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে। গতকাল সারাদিন মিনা শহরের তাঁবুতে অবস্থান করেছেন হজযাত্রীরা।

শনিবার আরাফাতের ময়দানে অবস্থান ও রোববার সৌদি আরবে ঈদুল আজহার দিন পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা।

হজ পালনে সৌদি আরবে হাজির হওয়া মুসলমানরা শুক্রবার জুমআর নামাজের পর থেকে জড়ো হতে শুরু করেন কাবা শরিফের ১০ কিলোমিটার দূরে তাবুনগরী মিনায়। সাদা কাপড়ে আচ্ছাদিত বিভিন্ন বর্ণ, ভাষা, জাতীয়তার লাখো মুসলমান কেউ বাসে, কেউ গাড়িতে, কেউবা হেঁটে মিনার পথে রওনা হন।

সবারে মুখে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক’ ধ্বনি।

হজযাত্রীরা ইবাদত-বন্দেগির মধ্যে দিয়ে শুক্রবার সারাদিন ও রাত মিনায় কাটানোর পর শনিবার সকালে তারা সমবেত হবেন প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে বিদায় হজের স্মৃতিজড়িত আরাফাতের ময়দানে। সেলাইবিহীন শুভ্র এক কাপড়ে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা সেখানে থাকবেন।

চার বর্গমাইল আয়তনের এই বিশাল সমতল মাঠের দক্ষিণ দিকে মক্কা হাদা তায়েফ রিং রোড, উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাত সীমান্ত পশ্চিমে আরও প্রায় পৌনে ১ মাইল বিস্তৃত।

মুসলমানদের কাছে পবিত্র এই ভূমিতে যার যার মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে তারা ইবাদত করবেন; হজের খুতবা শুনবেন এবং জোহর ও আসরের নামাজ পড়বেন।

মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, আদি পিতা আদম ও আদি মাতা হাওয়া পৃথিবীতে পুনর্মিলনের পর এই আরাফাতের ময়দানে এসে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। ১৪০০ বছরের বেশি সময় আগে এখানেই ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) দিয়েছিলেন তার বিদায় হজের ভাষণ।

তাই আরাফাতে উপস্থিত না হলে হজের আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণাঙ্গ হয় না। তাই হজে এসে যারা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হয় স্বল্প সময়ের জন্য।

ইসলামী রীতি অনুযায়ী, জিলহজ মাসের নবম দিনটি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে ইবাদতে কাটানোই হল হজ।

আরাফাত থেকে মিনায় ফেরার পথে শনিবার সন্ধ্যায় মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ পড়বেন সমবেত মুসলমানরা। মুজদালিফায় রাতে থাকার সময় তারা পাথর সংগ্রহ করবেন, যা মিনার জামারায় শয়তানের উদ্দেশ্যে ছোঁড়া হবে।

রোববার সকালে মিনায় ফিরে সেই পাথর তারা প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে ছুঁড়বেন। এরপর কোরবানি দিয়ে ইহরাম ত্যাগ করবেন এবং সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।

নিরাপদ হজ নিশ্চিত করতে এ বছর ১০ হাজারের বেশি নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করবে। স্বাস্থ্যসেবা দিতে ৩২ হাজারের বেশি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দায়িত্বে থাকবেন।

তারা হজযাত্রীদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে প্রবেশ পথের চৌকি বসিয়ে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দেবেন। হজযাত্রীদের সেবা দেওয়ার জন্য ১৮০টি হাসপাতাল ও মেডিকেল সেন্টার প্রস্তুত করে রেখেছে মন্ত্রণালয়।

বিশ্বের প্রায় ২৫ লাখ মুসলমান এবার হজ করছেন, যাদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা সোয়া এক লাখের মত।

এসএইচ-০৪/১০/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)