চামড়া কেনার লোক নেই!

কোরবানি পশুর চামড়া কেনার লোক নেই। অনেকেই চামড়া বিক্রি করতে না পেরে স্থানীয় মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করে দিচ্ছেন। লক্ষাধিক টাকা দামের গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র দুইশ থেকে পাঁচশ টাকায়। ছোট গরুর চামড়ার কেউ দামই করছেন না। আর ছাগলের চামড়া কেনা হচ্ছে একশ টাকারও কম।

অন্যদিকে, চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অনেকেই সকালে বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহ করলেও বাজার খারাপের শঙ্কায় দুপুরের পর থেকে কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, গত কয়েকবছরের মধ্যে এবারই চামড়ার দাম সবচেয়ে কম। সোমবার  ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদরে সংগঠন বাংলাদশে হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হাজী দেলোয়ার হোসনে বলেন, ‘এবার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সব চামড়া কেনা সম্ভব হবে না। এছাড়া চামড়া কেনার মতো পর্যাপ্ত টাকাও ব্যবসায়ীদের কাছে নেই। এ কারণে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের লবণ দিয়ে চামড়া রাখার মতো ক্যাপাসিটি থাকলেই তাদের চামড়া কেনার পরামর্শ দিচ্ছি।’

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই এবারের চামড়ার বাজার খারাপ যাওয়ার কথা বলেছি। আমরা সাধারণত মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরাসরি চামড়া কিনি না। লবণ দেওয়ার পর কিনে থাকি।’

তিনি বলেন, ‘চামড়ার পুরো বাজার নির্ভর করছে রফতানির ওপর। আগের চেয়ে রফতানি কমে গেছে। ফলে চামড়া সংগ্রহও আমাদের কমাতে হয়েছে। এছাড়া এবার ট্যানারি ব্যবসায়ীদের অনেকেই আগের বছরের চামড়া বিক্রি করে শেষ করতে পারেনি। আর অর্থের সংকট তো আছেই।’

ঢাকার গ্রীন রোড, কলাবাগান, সায়েন্সল্যাব, ধানমন্ডি, পরীবাগ, সেগুনবাগিচা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালে গরু কোরবানি দিলেও অনেকেই বেলা তিনটা পর্যন্ত চামড়া বিক্রি করতে পারেনি। বাসার সামনে চামড়া ফেলে রেখেছেন। পাশাপাশি এলাকাগুলোতে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের ভিড় বিগত বছরগুলোর মতো নেই। এর বিপরীতে বিনামূল্যে চামড়া সংগ্রহ করতে বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা ও এতিমখানার লোকজনকে বেশি দেখা গেছে। অনেকেই আশানুরূপ দামে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে মসজিদ, মাদ্রাসা বা এতিমখানায় চামড়া দান করে দিচ্ছেন।

গ্রীন রোড আল আমিন রোডের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন জানান, সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যে তার কোরবানির গরু কাটাকুটি শেষ। ৮৬ হাজার টাকা দামের গরুর চামড়া দাম মাত্র তিনশ টাকা বলছে।

তিনি বলেন, গত ৫ বছরের মধ্যে এত কমদামে চামড়া বিক্রি করেছি বলে মনে পড়ে না। সকালে এই চামড়ার দাম তিনশ টাকা উঠলেও এখন দেড়শ দুইশ টাকা বেশি কেউ দাম করছে না। আর এবার চামড়া কেনার লোকও কম মনে হচ্ছে।

একই অবস্থা দেখা গেছে ধানমন্ডি ও কলাবাগানের বিভিন্ন এলাকা। কলাবাগানের ডলফিনের গলিতে দুপুর ১২টায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি ভবনের সামনে স্তুপ করে ফেলে রাখা হয়েছে চামড়া। এই গলির একাধিক বাসিন্দা এই প্রতিবেদককে জানান, বেলা ১১টার মধ্যে কোরবানির কাজ শেষ হলেও চামড়া কেনার কোনো লোক এখনও আসেনি।

এ গলির বাসিন্দা সোহানুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘আরও কিছুক্ষণ দেখব। না হলে স্থানীয় মসজিদে দান করে দেব।’

ধানমন্ডি ৩/এ এর বাসিন্দা মাহমুদুল ইসলাম জানান, আগে বেলা ১০টা সাড়ে ১০টার মধ্যে চামড়া কেনার লোকজনের আনাগোনা বেড়ে যেত। আর এখন দুপুর একটা বাজে। এখন পর্যন্ত দুজন ছাড়া চামড়া কিনতে কেউ আসেনি।

তিনি জানান, প্রায় দেড় লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম সকালে করলো মাত্র ৫শ টাকা। এরপরতো আর কেউ কিনতে আসেনি। বিক্রি করতে না পারলে কোনো এতিমখানা কিংবা মাদ্রাসায় দান করে দিবেন বলে তিনি জানান।

গত ৬ বছর ধরে ধানমন্ডি, গ্রীনরোড, কলাবাগান এলাকায় কোরবানির সময় চামড়া কিনতেন মো. ফিরোজ। এ বছর তিনি এই ব্যবসা করছেন না। কেন করছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এবার চামড়ার দাম ভালো যাবে না, এটি আগে থেকেই জানছি। কারণ ট্যানারি মালিকরা এবার কম দামে চামড়া কিনবে। এইসব কারণে এবার ব্যবসা করছি না।

তিনি জানান, এবার ধানমন্ডি কলাবাগান এলাকার অন্তত ২০ জন মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া কিনছে না।

সরকারের নির্ধারণ করা দাম অনুযায়ী, এবার গরুর কাঁচা চামড়ার দাম ঢাকায় প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সারাদেশে খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা।

এসএইচ-১৩/১২/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)