রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার মুখে

ব্যাপক প্রস্তুতি ও উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনাগ্রহের কারণে শেষ পর্যন্ত এ দফায়ও শুরু করা গেলো না প্রত্যাবাসন কর্মসূচী।

এর আগে গত বছর নভেম্বর মাসে একই রকমের একটি প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণেই ভেস্তে যায়।

এ দফায় গত কয়েক দিন ধরেই আজকের তারিখটিকে প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো।

টেকনাফে উপস্থিত বিবিসির আকবর হোসেন জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টেকনাফের নোয়াপাড়ার ২৬ নং ক্যাম্পের কাছে প্রস্তুত রাখা হয়েছিলো তিনটি বাস ও দুটি ট্রাক।

উদ্দেশ্য প্রত্যাবাসনে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের এসব পরিবহণে করে কুড়ি কিলোমিটার দূরবর্তী বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে পৌঁছে দেয়া।

তবে দুপুর সাড়ে বারটা পর্যন্ত কোন রোহিঙ্গা সেখানে আসেনি।

পরে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম, ঢাকাস্থ চীন দূতাবাসের দুজন প্রতিনিধি এবং মিয়ানমার দূতাবাসের এক জন প্রতিনিধি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন।

কালাম সেখানে বলেন, “আজ প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য রোহিঙ্গাদের সীমান্তে পৌঁছে দেয়ার জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি রাখা হয়েছিলো। কিন্তু সেখানে কোন রোহিঙ্গা আসেনি”।

“এ পর্যন্ত ২৯৫টি পরিবারের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। যাদের কেউই মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেনি,” তিনি বলেন।

তবে এই কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাস ও ট্রাকগুলো উপস্থিত থাকবে সেখানে। প্রত্যাবাসনে আগ্রহী কোন শরণার্থী এলেই পরিবহণগুলোতে করে তাদের সীমান্তে পৌঁছে দেয়া হবে।

কালাম জানান, প্রত্যাবাসনের তালিকায় মোট ১০৩৭টি পরিবার রয়েছে। তাদের মতামত নেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। এর ফলে খতিয়ে দেখা হবে যে, তাদের মধ্যে কেউ ফিরে যেতে রাজি হয় কিনা।

তবে কাউকে জোর করে ফেরত পাঠানো হবে না বলেও জানান তিনি।

চীনের প্রতিনিধি ঝেং তিয়ানঝু বলেন, প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনায় মধ্যস্থতার দায়িত্ব তার দেশ নিয়েছে।

তবে সবচাইতে বড় যে প্রশ্ন, রোহিঙ্গারা কেন নিজ দেশে ফিরতে চায়না? কেন তারা মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের ওপর আস্থা পায়না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মিয়ানমারের কূটনীতিকদের কাছে বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা এই প্রশ্নগুলি বারবার তুলে ধরলেও তারা কোন জবাব দেননি।

এর আগে, প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি হিসেবে টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ঘুমধুম সীমান্ত পর্যন্ত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা জানায় কর্তৃপক্ষ।

দেশে বর্তমানে এগারো লাখের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে। যার বেশিরভাগই বাংলাদেশে প্রবেশ করা শুরু করে ২০১৭ সালের ২৫শে অগাস্টের পর।

ওই সময়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী।

এরপর জাতিসংঘসহ নানা সংস্থার নানা উদ্যোগের পর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সরকারের আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সিদ্ধান্ত হয়।

এর আগে যে কয়বার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে প্রতিবারই রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহে ভেস্তে গেছে।

বরং তারা নানা রকম শর্ত দিয়েছে।

এর মধ্যে ছিল – নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, বাড়িঘর জমি ফেরত পাবার নিশ্চয়তার মতো বিষয়গুলো।

এবার আবারও ২২শে অগাস্ট প্রত্যাবাসনের একটি সম্ভাব্য তারিখ মিয়ানমারের তরফ থেকে প্রকাশের পর বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশন জানায়, প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে ২২শে অগাস্ট ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কাজ চলছে।

এর আগে বাংলাদেশ ২২ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছিলো প্রত্যাবাসনের জন্য। তা থেকে সাড়ে তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গার নাম প্রত্যাবাসনের জন্য নির্বাচন করে বাংলাদেশকে দেয় মিয়ানমার।

ওই তালিকায় থাকা ১ হাজার ৩৩ পরিবারের মধ্যে ২৩৫ পরিবারের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন এবং ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিরা।

এসএইচ-০৪/২২/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বিবিসি)