দেশের রাজনীতিতে ফের ভারত বিরোধিতা

দেশের রাজনীতিতে আবারও ভারত বিরোধিতা প্রকাশ্যে জোরালোভাবে দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘ সময় পর বিরোধীদল বিএনপি সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছে।

দলটির নেতারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়গুলো বাদ দিয়ে একতরফা কিছু সিদ্ধান্ত হওয়ায় বিএনপি তার প্রতিবাদ করছে।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বা সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের সাথে সিদ্ধান্ত বা চুক্তিগুলো নিয়ে বারবার ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে।

দেশের রাজনীতিতে আবারও কেন ভারত বিরোধিতা, এই প্রশ্নে দলগুলোর পাশাপাশি বিশ্লেষকরাও বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরছেন।

দলটি দু’দিন আগে ঢাকায় যে সমাবেশ করেছে, এর মূল বিষয়ই ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রতিবাদ করা।

সমাবেশে বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যেই ছিল ভারতের সাথে সম্পর্ক নিয়ে কড়া সমালোচনা।

সাত আট বছর পর বিএনপি আবার প্রকাশ্যে ভারত বিরোধী অবস্থান নিয়ে এই সমাবেশ করে।

২০১২ সালের অক্টোবরে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সে সময় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে ভারত সরকারের আমন্ত্রণে দিল্লি সফর করেছিলেন। এরপর থেকে জেলে যাওয়া পর্যন্ত বিএনপি নেত্রী ভারতের বিরোধিতা বা সমালোচনা করে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেননি।

এমনকি চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর নিয়ে বিএনপি আগে রক্ষণশীল অবস্থানে থাকলেও গত বছর যখন এই বন্দর ভারতকে ব্যবহার করতে দেয়ার ব্যাপারে চুক্তি হয়, তখন দলটি সতর্ক বক্তব্য তুলে ধরেছিল বিবৃতির মাধ্যমে।

কিন্তু এখন আবার ভারত বিরোধী অবস্থান নিয়ে মাঠে নামার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলছেন, কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফরে ভারতের স্বার্থে একতরফা সব চুক্তি হয়েছে, সেকারণে তারা প্রতিবাদ করছেন।

“একতরফাভাবেতো বন্ধুত্ব হয় না। বন্ধুত্ব হচ্ছে টু ওয়ে ট্রাফিক। দেয়া নেয়ার ক্ষেত্রেতো একটা সমতা থাকতে হবে, একটা ন্যায্যতা থাকতে হবে। সেখানে আমরা দেখছি একটা বড় ধরণের অভাব বা ঘাটতি থাকছে।”

“তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে কিছু করা হলো না। কিন্তু হঠাৎ করে ফেনী নদী থেকে পানি দিয়ে দেয়া হলো। এখানেই মানুষের মাঝে সন্দেহ ঘনীভূত হয়েছে।”

বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী আরও বলেছেন, “বাংলাদেশের জনগণ মনে করে, দুই দেশের জনগণের মাঝে বন্ধুত্ব নয়, বরং একটি রাজনৈতিক দলকে তারা আস্থায় নিয়ে তাদেরকে দিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী বিষয়গুলো করিয়ে নেয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের যে প্রতিক্রিয়া, সেই প্রতিক্রিয়াই আমরা তুলে ধরছি।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরে তিস্তা নদীর পানি বন্টন ইস্যুসহ বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উদ্বেগের বিষয়গুলোতে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। এর বিরোধিতা করে ইসলামপন্থী কয়েকটি দল মাঠে নামে।

এরমধ্যে ভারত ইস্যুতে দীর্ঘসময় সতর্ক থাকা বিএনপি আবার মাঠে নামায় তাদের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

কারণ দলটির পক্ষ থেকে গত কয়েক বছর ভারতের সাথে একটা ভাল সম্পর্ক তৈরি চেষ্টা অনেকসময় দৃশ্যমান হয়েছে।

বিএনপি সিনিয়র কয়েকজন নেতা গত বছর ভারত সফরেও গিয়েছিলেন।

দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা বলেছেন, তাদের সম্পর্ক তৈরির চেষ্টায় ভারতে সেভাবে সাড়া দেয়নি, সেকারণে দলটির এমন চেষ্টার সাথে জড়িত অংশটি কিছুটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। ফলে বিএনপিতে ভারত বিরোধিতার বিষয়টি আবার মাথা চাড়া দিয়েছে।

বিশ্লেষকদের অনেকে আবার বলছেন, ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যও এটি বিএনপির একটি কৌশল হতে পারে।

আওয়ামী লীগ বা সরকারও ভারতের সাথে চুক্তিগুলো নিয়ে যুক্তি বা ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করছে।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলছেন, “বিএনপি বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ইস্যু পাচ্ছে না। সেকারণে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে তারা মাঠে নেমেছে। এটা তাদের সস্তা রাজনীতি।”

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে বিএনপি জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সেজন্য সরকার সঠিক তথ্য তুলে ধরছে।

তবে দলটির অন্য একাধিক নেতার সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, আওয়ামী লীগ এবং সরকার ভারতের সাথে ভাল সম্পর্ক বহাল রাখছে। একইসাথে মানুষের মাঝে আবার ভারত বিরোধী মনোভাব জোরালো হচ্ছে কিনা, সেটাও তারা নজরে রাখছে।

বড় প্রতিবেশি দেশ হিসেবে ভারতের সাথে ভাল সম্পর্ক তৈরির বিষয়টি বিএনপিও বিবেচনায় নিয়েছিল। সেকারণে লম্বা সময় বাংলাদেশে রাজনীতিতে ভারত বিরোধিতা সেভাবে ছিল না।

কিন্তু বিএনপির সেই কৌশলে ফল তারা পাচ্ছে না। সেকারণে এখন প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের বিষয়গুলোর সুযোগ নিয়ে বিএনপি মাঠে নেমেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক রুকসানা কিবরিয়া বলেছেন, বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়গুলোতে ভারতের উদাসীনতার কারণে ভারত বিরোধিতা পুরোনো পরিবেশ ফিরে আসছে।

“আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে ভারত সফর করলেন, তারপর রাজনৈতিক একটা ইস্যু তৈরি হয়ে গেছে। একটা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের বিষয়গুলোতে সমাধান আসেনি। এখন এটা রাজনীতি। এগুলো এখন যে যেভাবে পারবে ব্যবহার করার চেষ্টা করবে।”

এসএইচ-০৪/১৫/১৯ (কাদির কল্লোল, বিবিসি)