এখনও চিহ্নিত হয়নি বিপ্লবের আইডি হ্যাককারি

দেশে বিপ্লব নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ইসলামের নবীকে নিয়ে অবমাননাসূচক পোস্ট দেয়া হ্যাকার কে ছিল – তা এখনো ‘সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি’ বলে জানা গেছে। ওই পোস্টকে কেন্দ্র করে ভোলার বোরহানউদ্দিনে সহিংস বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে চার জন নিহত হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সরকারের অনুরোধে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ হ্যাকারের ব্যাপারে ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য’ নয়, ‘কিছু ধারণা’ দিয়েছে, এবং এর ভিত্তিতে হ্যাকারকে শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।

মন্ত্রী বলেন, “চিহ্নিত করা হয়নি, চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা ফেসবুকের কাছে চেয়েছি যে এটা হ্যাকিংয়ের পর কিভাবে ফেসবুকে আসলো? ফেসবুক এখনও স্পষ্ট আইডিয়া আমাদেরকে দেয়নি।”

কিন্তু পুলিশ এবং কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, হ্যাকিংএর ব্যাপারে দু’জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, এবং তারা পুলিশ হেফাজতে আছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তারা দু’জনই বলছে যে, তারা এটা করে নাই। সেজন্য ফেসবুকের কাছে গিয়েছি নিশ্চিত হওয়ার জন্য।”

তিনি বলেন, “ফেসবুক হ্যাকার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনও দেয়নি, কিন্তু কিছু ধারণা দিয়েছে। (আইডিয়া) দিয়েছে। সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। সুনির্দিষ্টভাবে আমরা এখনও কাউকে নিরুপণ করতে পারি নাই। প্রক্রিয়া চলছে।”

তিনি বলেন, ফেসবুক যে সমস্ত তথ্য দিচ্ছে, সেগুলো তারা খতিয়ে দেখে হ্যাকারকে আনডেনটিফাই বা চিহ্নিত করার চেষ্টায় আছেন।

এদিকে, ফেসবুক অ্যাকান্টটি যার, সেই তরুণ বিপ্লব চন্দ্র শুভসহ গ্রেফতার থাকা তিনজনকে বৃহস্পতিবার ভোলায় আদালতে হাজির করে তিন দিন করে পুলিশী রিমান্ডে নেয়া হয়।

সামাজিক মাধ্যমে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনে ২০শে অক্টোবর দায়ের করা এক মামলায় তাদের গ্রেফতারও দেখানো হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে ইসলামের নবীকে হেয় করার অভিযোগে ভোলায় আন্দোলনকারী সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদ হ্যাকারকে দ্রুত চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছে।

বোরহানউদ্দিনে ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ থেকে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়েছিল গত রোববার। সেই সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা বিপ্লব চন্দ্র শুভ’র ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ইসলামের নবীকে অবমাননা করা হয় বলে অভিযোগ তুলেছিলেন।

তবে সংঘাত হওয়ার দু’দিন আগে শুক্রবার এই অভিযোগ উঠলে সেদিনই বিপ্লব চন্দ্র শুভ স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে গিয়ে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন।

পুলিশ অবশ্য বিপ্লব চন্দ্র শুভ’র পাশাপাশি শরিফ এবং ইমন নামের আরও দু’জনকে আটক করে। এই দু’জনকে সন্দেহভাজন হ্যাকার হিসেবে উল্লেখ করে পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছিল।

এরই মাঝে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের কারণে ফেসবুকের সিঙ্গাপুর কার্যালয় থেকে কিছু তথ্য দেয়।

ভোলার পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, ফেসবুক অ্যাকাউন্টি হ্যাক করার পরই ধর্মের প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য ছড়ানো হয়, এ ব্যাপারে তারা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন। এখন হ্যাকারকে সুর্নির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করার চেষ্টা তারা চালাচ্ছেন।

তবে বিপ্লব চন্দ্র শুভসহ গ্রেফতার থাকা তিনজনকে যে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে পুলিশ বলেছে, সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার জন্য তাদের কাছ থেকেও তথ্য নেয়া প্রয়োজন।

তৌহিদী জনতার নামে প্রথমে বিক্ষোভ করলেও পরে তারা সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনের কর্মসূচি নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।

তারা প্রশাসনের সাথে কয়েকদফা আলোচনা করেছেন গত দু’দিনে। সেই আলোচনার ভিত্তিতে তারা এখন তাদের কর্মসূচি স্থগিত রেখেছেন।

মুসলিম ঐক্য পরিষদের একজন নেতা মিজানুর রহমান বলছিলেন, প্রকৃত দোষী চিহ্নিত হবে, সেটা তারা চাইছেন।

“এখন হ্যাক হয়েছে কিনা, সেটা ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে সরকার তদন্ত করবে। আমরা মূলত বিপ্লব চন্দ্র শুভকেই টার্গেট করেই আন্দোলন করছি বা তারই শাস্তি চাইছি – এমন নয়। যে প্রকৃত দোষী, তাকে শনাক্ত করতে হবে এবং তার আইনের আওতায় আনতে হবে। সেটাই আমরা চাই।”

মানবাধিকার কর্মি এলিনা খান বলেছেন, ফেসবুক হ্যাকার নিয়ে নানা রকম বক্তব্য দেয়া হলে তাতে বিভ্রান্তি থাকবে এবং সংকট কাটবে না।

তবে সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রকৃত দোষীকে চিহ্নিত করার স্বার্থে তাদের তদন্তে কিছুটা সময় লাগছে। সেটা আন্দোলনকারিরা বিবেচনা করবেন বলে তারা বিশ্বাস করেন।

এসএইচ-০৬/২৫/১৯ (কাদির কল্লোল, বিবিসি)